ঢাকা জেলার নামকরণ, ইতিহাস, দর্শনীয় স্থান, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি

একনজরে ঢাকা জেলা
আয়তন ১৪৬৩.৬০ বর্গ কি.
সংসদীয় আসন ২০টি
মহিলা আসন ২টি
উপজেলা ৫টি
সিটি করপোরেশন ২টি
থানা ৯টি
পৌরসভা ৩টি
ইউনিয়ন ৭৯টি

জেলা পরিচিতি

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা এ শহর ৪০০ বছর আগে মোগল আমলে প্রথম রাজধানীর মর্যাদা পায়। প্রবহমান বুড়িগঙ্গার পাশে অবস্থিত হওয়ায় শুরু থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র ছিল ঢাকা। মেগাসিটি ঢাকা বর্তমানে পৃথিবীর মানচিত্রে একটি বিশ্বজনীন শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের প্রশাসনিক থেকে শুরু করে আইন ও শাসন বিভাগের সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদিত হয় ঢাকা থেকে। সিটি করপোরেশনের মর্যাদাপ্রাপ্ত ঢাকা দুই ভাগে বিভক্ত। এর একটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, আরেকটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

নামকরণ

ঢাকার নামকরণ নিয়ে নানা ইতিহাস আছে। বলা হয়, একবার রাজা বল্লাল সেন এ অঞ্চল ভ্রমণকালে বুড়িগঙ্গা নদীর পাশের একটি জঙ্গলে দেবী দুর্গার একটি বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবীর প্রতি সম্মান জানিয়ে রাজা সেখানে একটি মন্দির স্থাপন করেন। যার নাম দেন ঢাকেশ্বরী মন্দির। সেই মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে এ অঞ্চলের নাম হয় ঢাকা। তবে ঢাকা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না।

এ সম্পর্কে প্রচলিত মতগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো : ক. একসময় এ অঞ্চলে প্রচুর ঢাকগাছ ছিল; খ. রাজধানী উদ্বোধনের দিনে ইসলাম খানের নির্দেশে এখানে ঢাক অর্থাৎ ড্রাম বাজানো হয়েছিল; গ. ‘ঢাকা ভাষা’ নামে একটি প্রাকৃত ভাষা এখানে প্রচলিত ছিল; ঘ. ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘রাজতরঙ্গিণী’ তে ঢাক্কা শব্দটি ‘পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র’ হিসেবে উল্লেক করা হয়েছে অথবা এলাহাবাদ শিলালিপিতে উল্লিখিত সমুদ্রগুপ্তের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ডবাকই হলো বর্তমানের ঢাকা।

১৬১০ সালে ইসলাম খান সুবাহ বাংলার রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করেন এবং তৎকালীন সম্রাটের নামানুসারে এর নামকরণ করেন জাহাঙ্গীরনগর। প্রশাসনিকভাবে জাহাঙ্গীরনগর নামকরণ হলেও সাধারণ মানুষের মুখে ঢাকা নামটিই থেকে যায়। মোগল আমল থেকে দেশি-বিদেশি ঐতিহাসিক, পর্যটক তাঁদের বিবরণ ও চিঠিপত্রে ঢাকা নামটি ব্যবহার করেন।

ইতিহাস

ঢাকার ইতিহাস অনেক পুরোনো। তবে এই ইতিহাস প্রসিদ্ধি লাভ করে যখন মোগল আমলে ঢাকা বাংলার রাজধানী হিসেবে
প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলমানদের বাংলা জয়ের আগে বর্তমান ঢাকা জেলা ছিল ‘বঙ্গ’ প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত। এর কিছু অংশ সমতট
আবার কিছু অংশ হরিকেলের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের ফরমান অনুযায়ী, ১৬ জুলাই ১৬১০ সালে ঢাকাকে সুবাহ বাংলার রাজধানী ঘোষণা করা হয়। ইসলাম খান ঢাকাকে রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করলেও পরবর্তী সময়ে সুবেদার শাহ সুজা ১৬৫০ সালে বাংলার রাজধানী রাজমহলে নিয়ে যান।

১৬৬০ সালে শাহ সুজার পতনের পর মীর জুমলা আবার ঢাকাকে রাজধানী মর্যাদা দেন। এরপর আবার মুর্শিদকুলি খান যখন নবাব হন, তিনি ঢাকা থেকে রাজধানী স্থানান্তর করেন মুর্শিদাবাদে। পরে ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধে বাংলার নবাবের পতনের পর বাংলার প্রশাসনিক ক্ষমতা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে চলে যায় এবং শহর হিসেবে ঢাকার গুরুত্ব ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

তবে ১৮২৯ সালে ঢাকা একটি বৃহৎ বিভাগের সদর দপ্তরে পরিণত হয়। এর মধ্য দিয়ে ঢাকার প্রশাসনিক গুরুত্ব আবারও বাড়তে থাকে। ঢাকার প্রশাসনিক গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি বাড়ে ১৯০৫ সালে। বঙ্গভঙ্গের ফলে ওই সময় ঢাকা পূর্ব বাংলা ও আসামের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের পতনের পর এ অঞ্চল পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, এ নতুন প্রদেশের রাজধানী হয় ঢাকা।

ফলে এখানে অধিকতর স্থায়ী প্রশাসনিক অবকাঠামো সংযোজিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়। এরপর স্বাধীন দেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকা রাজনৈতিক ক্ষমতা, প্রশাসনিক কার্যকলাপ এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মূল কেন্দ্ররূপে মর্যাদা লাভ করে।

সংস্কৃতি

ঢাকা মূলত একটি মিশ্র জনগোষ্ঠীর অঞ্চল। বাংলাদেশের সব জেলা থেকে মানুষ এই জেলায় আসে। তাই এখানে নানা ধরনের ভাষা ও সংস্কৃতি পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু মূল ঢাকার সংস্কৃতি ও ভাষার প্রচলন এখনো পুরান ঢাকার মানুষের মুখে মুখে ফেরে। দেশের বড় বড় উৎসব ঢাকায় পালিত হয় মহাসমারোহে। পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ও রমনায় ছায়ানটের অনুষ্ঠান, একুশে বইমেলা, ঈদ, দুর্গাপূজা, বুদ্ধপূর্ণিমা, বড়দিন, সরস্বতীপূজা, সাকরাইন উৎসব প্রভৃতি সব ধর্মের ও সব সংস্কৃতির উৎসবের কেন্দ্রভূমি ঢাকা।

দর্শনীয় স্থান

  • ছোট কাটরা
  • বড় কাটরা
  • নর্থব্রুক হল
  • লালবাগ কেল্লা
  • আহসান মঞ্জিল
  • রূপলাল হাউস
  • হোসেনি দালান
  • তারা মসজিদ
  • সাতগম্বুজ মসজিদ
  • মুসা খান মসজিদ
  • রোজ গার্ডেন প্যালেস
  • গুরুদুয়ারা নানকশাহী
  • ঢাকেশ্বরী মন্দির
  • জাতীয় জাদুঘর
  • মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
  • স্বাধীনতা জাদুঘর
  • বাহাদুরশাহ পার্ক
  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার
  • বাংলাদেশ বিমানবাহিনী জাদুঘর
  • মিরপুর চিড়িয়াখানা
  • তিন নেতার মাজার
  • জাতীয় সংসদ ভবন
  • রমনা পার্ক
  • বলধা গার্ডেন
  • শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ
  • বায়তুল মোকাররম মসজিদ
  • বাংলা একাডেমি
  • কার্জন হল

নদ-নদী

  • বুড়িগঙ্গা
  • ধলেশ্বরী
  • বংশী
  • শীতলক্ষ্যা
  • তুরাগ
  • বালু

বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব

  • নবাব আবদুল গনি
  • নবাব খাজা আহসান উল্লাহ
  • নবাব সলিমুল্লাহ
  • নবাব খাজা হাবিবুল্লাহ বাহাদুর
  • শামসুর রাহমান
  • আজম খান

প্রশ্নোত্তরে ঢাকা জেলা

প্রশ্ন : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা কোন সেক্টরের অধীনে ছিল?
উত্তর : ২ নম্বর সেক্টর।

প্রশ্ন : শুধু একটি নম্বর ‘৩২’ উল্লেখ করলে ঢাকার একটি বিখ্যাত বাড়িকে বোঝায়। বাড়িটি কী?
উত্তর : ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধুর বাসভবন।

প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিখ্যাত গেরিলা দল ‘ক্র্যাক প্লাটুন’ কোন সেক্টরের অধীনে ছিল?
উত্তর : সেক্টর-২।

প্রশ্ন : বর্তমান বৃহত্তর ঢাকা জেলা প্রাচীনকালে কোন জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল?
উত্তর : বঙ্গ।

প্রশ্ন: ঢাকা শহরের গোড়াপত্তন হয় কখন?
উত্তর : মোগল আমলে।

প্রশ্ন : ঢাকা কখন প্রথম বাংলার রাজধানী হয়?
উত্তর : ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে।

প্রশ্ন : ঢাকায় বাংলার রাজধানী স্থাপনের সময় মোগল সুবাদার কে ছিলেন?
উত্তর : ইসলাম খান।

প্রশ্ন : কার সময় বাংলার রাজধানী ঢাকায় স্থাপন করা হয়?
উত্তর : সম্রাট জাহাঙ্গীর।

প্রশ্ন : ঢাকার নাম জাহাঙ্গীরনগর রাখেন কে?
উত্তর : সুবাদার ইসলাম খান।

প্রশ্ন: স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হওয়ার আগে ঢাকা বাংলার রাজধানী ছিল কতবার?
উত্তর : চারবার।

প্রশ্ন: ঢাকার ধোলাইখাল খনন করেন কে?
উত্তর : ইসলাম খান।

প্রশ্ন: ঢাকা গেট কে নির্মাণ করেন?
উত্তর : মীর জুমলা।

প্রশ্ন: ঢাকার বড় কাটরা ও ছোট কাটরা কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : চকবাজারে।

প্রশ্ন : Dacca থেকে Dhaka করা হয় কোন সালে?
উত্তর : ১৯৮২ সালে।

প্রশ্ন : ঢাকার বিখ্যাত ছোট কাটরা নির্মাণ করেন কে?
উত্তর : শায়েস্তা খাঁ ।

প্রশ্ন: লালবাগ দুর্গ কোথায় অবস্থতি?
উত্তর : ঢাকায়।

প্রশ্ন: সাতগম্বুজ মসজিদ কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

প্রশ্ন: ঢাকার বিখ্যাত তারা মসজিদ কে তৈরি করেছেন?
উত্তর : মির্জা আহমেদ জান।

প্রশ্ন: ব্রিটিশ শাসনামলে কোন সালে ঢাকাকে প্রাদেশিক রাজধানী করা হয়?
উত্তর : ১৯০৫ সালে।

প্রশ্ন : ঢাকায় ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের স্মৃতিজড়িত স্থানের নাম কী?
উত্তর : বাহাদুর শাহ পার্ক।

প্রশ্ন : বাকল্যান্ড বাঁধ কোন নদীর তীরে অবস্থিত?
উত্তর : বুড়িগঙ্গা।

Similar Posts