“ভাষার অভ্যস্তরীণ শৃঙ্খলা আবিষ্কারের নামই ব্যাকরণ”-আলোচনা করো।
“ভাষার অভ্যস্তরীণ শৃঙ্খলা আবিষ্কারের নামই ব্যাকরণ”-আলোচনা করো।
অথবা, “ব্যাকরণ ভাষাকে চলতে নির্দেশ দেয় না কিংবা শাসন করে না, বরং ভাষাই ব্যাকরণকে শাসন করে বা চলতে নির্দেশ দেয় কিংবা ব্যাকরণ ভাষার বর্ণনা করে মাত্র।”-আলোচনা করো ।
অথবা, ‘ভাষা ব্যাকরণ অনুসরণ করে না, ব্যাকরণই ভাষাকে অনুসরণ করে।’-আলোচনা কর ।
অথবা, “ব্যাকরণ ভাষাকে নিয়ন্ত্রণ করে না নির্মাণও করে না, তবু ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনকে অস্বীকার করা যায় না।”- বক্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।
ভাষার অভ্যন্তরীণ নিয়ম-শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য আবিষ্কারের নামই ব্যাকরণ। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম বা চতুর্থ শতকের বিখ্যাত মনীষী পাণিনি ‘অষ্টাধ্যায়ী ব্যাকরণ’ নামে প্রথম সংস্কৃত ব্যাকরণ রচনা করেন। পরবর্তীকালে পাণিনিকে অনুসরণ করে বিভিন্ন ধারার ব্যাকরণ রচিত হয়েছে।
ব্যাকরণ (বি+আ+কৃ+অন) শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশেষভাবে বিশ্লেষণ।
মুনীর চৌধুরীর মতে : “যে শাস্ত্রে কোনো ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার-বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয় তাকে ব্যাকরণ বলে । ”
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে : “যে বিদ্যার দ্বারা কোনো ভাষাকে বিশ্লেষণ করিয়া তাহার স্বরূপটি আলোচিত হয় এবং সেই ভাষার পঠনে ও লিখনে এবং তাহাতে কথোপকথনে শুদ্ধরূপে তাহার প্রয়োগ করা যায়, সেই বিদ্যাকে সেই ভাষার ব্যাকরণ বলে।”
ব্যাকরণ হলো ভাষার সংবিধান। ভাষাকে কেন্দ্র করেই ব্যাকরণের সৃষ্টি। ভাষার অভ্যন্তরীণ নিয়ম-শৃঙ্খলা ও তার গতি-প্রকৃতি ব্যাকরণে বিশ্লেষণ করা হয়। সৃষ্টিলগ্নের বিচারে ভাষার সৃষ্টি প্রথমে এবং ব্যাকরণ এসেছে ভাষার পথ ধরে।
সুতরাং ভাষার ওপর ব্যাকরণ কোনো নিয়মকে চাপিয়ে দেয় না, বরং ভাষার অভ্যন্তরীণ নিয়ম আবিষ্কার করে। ধারাবাহিক সময়ের আবর্তনে ভাষার অগ্রগতি ঘটে, ঘটে নানা পরিবর্তন-বিবর্তন।
সেই বিবর্তনের ধারায় ব্যাকরণ ভাষাকে অনিবার্য সুষ্ঠু নির্দেশনায় করে তোলে গতিশীল ও জীবন্ত। সুতরাং ব্যাকরণ ভাষাকে চলতে নির্দেশ দেয় না কিংবা শাসন করে না, বরং ভাষাই ব্যাকরণকে শাসন করে বা চলতে নির্দেশ দেয়। কিংবা ব্যাকরণ ভাষার বর্ণনা করে মাত্র।