মীর মশাররফ হোসেন (১৮৪৭-১৯১২)

মীর মশাররফ হোসেন (১৮৪৭-১৯১২)

জন্ম ১৩ নভেম্বর ১৮৪৭।
জন্মস্থান অবিভক্ত নদীয়া (বর্তমানে বাংলাদেশের কুষ্টিয়া) জেলার কুমারখালী থানার অন্তর্গত গড়াই নদীর তীরবর্তী লাহিনীপাড়া গ্রাম ।
পিতা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন
মাতা দৌলতননেসা।
প্রথম উপন্যাস রত্নাবতী (১৮৬৯)।
জীবনাবসান ১৯ নভেম্বর, ১৯১২।
‘বিষাদ সিন্ধুর’ হিন্দি সংস্করণ কবীন্দ্র বেণীপ্রসাদ বাজপেয়ী অনূদিত ১৯৩০ সালে ‘বিষাদ সিন্ধু’র হিন্দি সংস্করণ প্রকাশিত হয়।

গ্রন্থপঞ্জি

গ্রন্থের নাম গ্রন্থের প্রকৃতি প্রকাশকাল
রত্নবতী উপন্যাস ২ সেপ্টেম্বর ১৮৬৯
গোরাই-ব্রিজ অথবা গৌরী-সেতু কাব্য ২০ জানুয়ারি ১৮৭৩
বসন্তকুমারী নাটক ২ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৩
জমিদার দর্পণ নাটক ১ মে ১৮৭৩
এর উপায় কি? প্রহসন ১৮৭৩
বিষাদ সিন্ধু উপন্যাস ১৮৯১
সঙ্গীত-লহরী সঙ্গীত সঙ্কলন ৪ আগস্ট ১৮৮৭
গো-জীবন প্রবন্ধ ৮ মার্চ ১৮৮৯
বেহুলা গীতাভিনয় নাটক ২৩ জুন ১৮৮৯
টালা অভিনয় ১৮৯৭
তহমিনা ১৮৯৭
নিয়তি কি অবনতি ১৮৯৯
উদাসীন পথিকের মনের কথা আত্মজৈবিক উপন্যাস ২৯ আগস্ট ১৮৯০
মৌলুদ শরীফ ধর্মগ্রন্থ ১৯০৩
গাজী মিয়ার বস্তানী নকশাধর্মী উপাখ্যান ৩০ জুন ১৮৯৯
মুসলমানের বাঙ্গালা শিক্ষা (প্রথম, দ্বিতীয়) শিশু শিক্ষার পাঠ্যগ্রন্থ ১৯০৮
বিবি খোদেজার বিবাহ কাব্য ২৫ মে ১৯০৫
হযরত ওমরের ধর্মজীবন লাভ কাব্য ১১ আগস্ট ১৯০৫
হযরত বেলালের জীবনী কাব্য ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯০৫
হযরত আমীর হামযার ধর্মজীবন লাভ কাব্য ১০ নভেম্বর ১৯০৫
মদিনার গৌরব কাব্য ১৫ ডিসেম্বর ১৯০৬
মোসলেম বীরত্ব কাব্য ২০ জুলাই ১৯০৭
এসলামের জয় ইতিহাস ৪ আগস্ট ১৯০৮
আমার জীবনী আত্মচরিত ১৯০৮-১৯১০
বাজীমাৎ কাব্য ১ ডিসেম্বর ১৯০৮
ঈদের খোতবা পদ্যানুবাদ ১২ জুলাই ১৯০৯
বিবি কুলসুম জীবনী ৯ মে ১৯১০
উপদেশ পদ্যানুবাদ ডিসেম্বর ১৯১৫

‘বিষাদ সিন্ধু’ তিন পর্বের উপন্যাস। মহরম পর্ব প্রকাশিত হয় ১ মে ১৮৮৫। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ২০৪। উদ্ধার পর্ব ১৪ আগস্ট ১৮৮৭ সালে প্রকাশিত হয়। এজিদ-বধ পর্বের প্রকাশকাল ১০ মার্চ ১৮৯০। তিন পর্ব একত্রে ‘বিষাদ সিন্ধু’ নামে ১৮৯১ সালে প্রকাশিত হয়। ‘আমার জীবনী’ আত্মচরিত্রটি ১২ খণ্ডে বিভক্ত।

সম্পাদিত পত্র-পত্রিকা

পত্রিকার নাম প্রকাশকাল পত্রিকার প্রকৃতি
আজীজননেহার ১৮৭৪ মাসিক পত্রিকা
হিতকরী ১৮৯০ সাপ্তাহিক/পাক্ষিক পত্রিকা
হুগলী বোধোদয়

 

মডেল প্রশ্ন

১. মীর মশাররফ হোসেনের জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ উল্লেখ করুন ।
উত্তর : জন্ম ১৩ নভেম্বর ১৮৪৭ ও মৃত্যু ১৯ নভেম্বর ১৯১২।

২. বাংলা সাহিত্যে ‘গাজী মিয়া’ কে?
উত্তর : মীর মশাররফ হোসেন।

৩. ‘রত্নবর্তী’ উপন্যাসটির রচয়িতা কে? কত সালে প্রকাশিত?
উত্তর : মীর মশাররফ হোসেন; ১৮৬৯ সালে প্রকাশিত।

৪. ‘বিষাদ সিন্ধু’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে? কোন শ্রেণীর রচনা?
উত্তর : মীর মশাররফ হোসেন; উপন্যাস।

৫. ‘বিষাদসিন্ধু’ কত খণ্ডে রচিত? কত সালে প্রকাশিত ?
উত্তর : তিন খণ্ডে। ১৮৮৫-১৮৯০ সালে প্রকাশিত হয়।

৬. ‘বিষাদসিন্ধু’ উপন্যাসের বিষয়বস্তু কি?
উত্তর : কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা।

৭. ‘জমিদার দর্পণ’ নাটকটি কার রচনা? কত সালে প্রকাশিত হয় ?
উত্তর : মীর মশাররফ হোসেন; ১৮৭৩ সালে প্রকাশিত হয়।

৮. ‘রত্নবর্তী’ ও ‘বসন্তকুমারী’ নাটকের রচয়িতা কে?
উত্তর : মীর মশাররফ হোসেন।

৯. ‘জমিদার দর্পণ’ কোন শ্রেণীর রচনা?
উত্তর : নাটক ।

১০. ‘এর উপায় কি’ ও ‘ভাই ভাই এইতো চাই’ গ্রন্থদ্বয়ের রচয়িতা কে? কোন শ্রেণীর রচনা?
উত্তর : মীর মশাররফ হোসেন; প্রহসন।

১১. মীর মশাররফ হোসেনের প্রবন্ধগুলোর নাম লিখুন ।
উত্তর : গো-জীবন, আমার জীবনী, বিবি কুলসুম

১২. ‘বিবি কুলসুম’ কোন শ্রেণীর রচনা?
উত্তর : প্রবন্ধগ্রন্থ।

১৩. মীর মশাররফ হোসেনের ‘গোজীবন’ কোন ধরনের রচনা।
উত্তর : প্রবন্ধগ্রন্থ।

১৪. ‘আমার জীবনী’ গ্রন্থের রচয়িতা কে?
উত্তর : মীর মশাররফ হোসেন।

১৫. বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম ঔপন্যাসিকের নাম ও পরিচয় উল্লেখ করুন?

উত্তর : বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম ঔপন্যাসিক মীর মশাররফ হোসেনের জন্ম কুষ্টিয়ার লাহিনীপাড়া গ্রামে ১৩ নভেম্বর ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। তিনি ১৮৬৯ সালে ‘রত্নবর্তী’ উপন্যাসটি রচনা করেন, যা বাংলা সাহিত্যে মুসলিম রচিত প্রথম উপন্যাস। তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘বিষাদ-সিন্ধু’ (১৮৮৫-১৮৯০)।

১৬. মীর মশাররফ হোসেনের অমর গ্রন্থ বিষাদসিন্ধু সম্পর্কে ধারণা দিন।

উত্তর : ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস ‘বিষাদ-সিন্ধু’ ৩ খণ্ডে রচিত। ইমাম হাসান ও হোসেনের সঙ্গে দামেস্ক অধিপতি মাবিয়ার একমাত্র পুত্র এজিদের কারবালা প্রান্তরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং ইমাম হাসান-হোসেনের করুণ মৃত্যু এ উপন্যাসের মূল উপজীব্য।

১৭. ‘বিষাদ সিন্ধু’ গ্রন্থ নামের তাৎপর্য বুঝিয়ে দিন।

উত্তর : মুসলিম ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক বিষাদময় কাহিনী অবলম্বনে মীর মশাররফ হোসেন রচনা করেছেন ‘বিষাদসিন্ধু’ নামক উপন্যাস জাতীয় গ্রন্থটি। এ গ্রন্থে হযরত মুহম্মদ (স)-এর দৌহিত্র ইমাম হাসানকে হত্যা করা হয় বিষপ্রয়োগে আর ইমাম হোসেনসহ অনেক নিকটাত্মীয়দের নির্মমভাবে হত্যা করা হয় কারবালা প্রান্তরে। এ কারণে গ্রন্থটি হয়ে উঠেছে বিষাদের সিন্ধু বা সাগর। বিষাদময় কাহিনীর ব্যাপকতার জন্যই গ্রন্থটির নামকরণ হয়েছে ‘বিষাদ-সিন্ধু’ ।

১৮. মীর মশাররফ হোসেনের সাহিত্যজীবনের প্রথম দিকের রচনাগুলো কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হতো? এর সম্পাদক কে ছিলেন?

উত্তর : মীর মশাররফ হোসেনের সাহিত্য জীবনের প্রথম দিকের রচনাগুলো প্রকাশিত হতো ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ ও ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায়। পত্রিকা দুটোর সম্পাদক ছিলেন- কাঙাল হরিনাথ ও ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত।

১৯. মীর মশাররফ হোসেনের পরিচয় দিন। সাহিত্যে তার অবদান উল্লেখ করুন।

উত্তর : মীর মশাররফ হোসেনের জন্ম কুষ্টিয়ার লাহিনীপাড়ায়। তিনি ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। বঙ্কিমযুগের অন্যতম প্রধান গদ্যশিল্পী ও উনিশ শতকের বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের পৃথিবৃৎ ছিলেন তিনি। তাঁর রচিত প্রথম উপন্যাস ‘রত্নবর্তী’। তার উল্লেখযোগ্য রচনা হচ্ছে ‘গোরাই-ব্রিজ’, ‘বসন্তকুমারী’, ‘জমিদার দর্পণ’, ‘এর উপায় কি’, ‘বিষাদ-সিন্ধু’, ‘গো-জীবন’, ‘উদাসীন পথিকের মনের কথা’, ‘গাজী মিয়ার বস্তানী’, ‘আমার জীবনী’, ‘আমার জীবনীর জীবনী, বিবি কুলসুম’ ইত্যাদি। এর মধ্যে ‘বিষাদ-সিন্ধু’ তার অমর কীর্তি। বাংলার মুসলমান সমাজের দীর্ঘ অর্ধ-শতাব্দীর জড়তা দূর করে আধুনিক ধারায় ও রীতিতে সাহিত্য চর্চার সূত্রপাত ঘটে তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমেই।

২০. মীর মশাররফ হোসেন-এর দুটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের নাম লিখুন ।

উত্তর : মীর মশাররফ হোসেনের দুটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ হচ্ছে- ১. আমার জীবনী; ২. বিবি কুলসুম ।

২১. ‘উদাসীন পথিকের মনের কথা’ কার লেখা এবং কি ধরনের রচনা?

উত্তর : ‘উদাসীন পথিকের মনের কথা’ রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেন। এটি একটি উপন্যাস, যার প্রকৃতি হচ্ছে ইতিহাস-আশ্রিত উপাখ্যানধর্মী। এটি প্রকাশ হয় ২৯ আগস্ট ১৮৯০। ‘উদাসীন ‘পথিক’ এই ছদ্মনামে মশাররফ হোসেন ব্যক্তিগত জীবনের পটভূমিতে স্বীয় পারিবারিক ইতিহাস ও সমসাময়িক বাস্তব ঘটনার চিত্র তুলে ধরেছেন এ গ্রন্থে। প্রকৃতপক্ষে এটিকে উপন্যাস কিংবা আত্মজীবনীমূলক রচনা এর কোনোটাই বলা যায় না বরং বলতে হয় গ্রন্থটি লেখকের আত্মজীবনী- নির্ভর কতিপয় বাস্তব ও কাল্পনিক ঘটনার মিশেলে উপন্যাসসুলভ সাহিত্যিক উপস্থাপনা।

Similar Posts