আর্থিক সক্ষমতা নির্ধারণে ক্রেডিট রেটিং
৩০ মে ২০২৩ আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান মুডিস বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদে ও সিনিয়র আনসিকিউরড রেটিং Ba3 থেকে অবনমন করে B1 নির্ধারণ করে। এ প্রেক্ষাপটে ক্রেডিট রেটিং নিয়ে আমাদের বিশেষ আয়োজন ।
ক্রেডিট রেটিং
কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির আর্থিক সক্ষমতা বা ঋণ দেওয়া হলে সেটা ঠিক সময়ে পরিশোধ করার সক্ষমতা কতটা রয়েছে, সেটাই ক্রেডিট রেটিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় । যেমন— আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কোনো দেশ যদি ঋণ নিতে চায়, তখন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এই রেটিংয়ের ভিত্তিতে বুঝতে পারে, দেশটির সময়মতো ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কতটা রয়েছে ।
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে লেনদেন করতে হয় । এ ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের ঋণমানের ভিত্তিতে ঋণের শর্তাবলি ও সুদের হার নির্ধারণ হয়ে থাকে। কাজেই রেটিং ভালো হলে সহজ শর্তে, কম সুদে ঋণ পাওয়া যায় ।
ক্রেডিট রেন্টিং নির্ধারণ
আর্থিক খাতের একাধিক সূচক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্রেডিট রেটিং করা হয় । যেমন— ব্যাংকের আমানত কেমন রয়েছে, সেটি কোন খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে, সেখান থেকে তারা রিটার্ন কেমন পাচ্ছে, গ্রাহক ফেরত চাইলে কত তাড়াতাড়ি সেই আমানত ফেরত পাবে ইত্যাদি এ রেটিং দিয়ে বোঝা যায়। একেকটি প্রতিষ্ঠান একেক রকম সূচক বিবেচনায় নিয়ে কাজ করে। ফলে রেটিংয়ে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায় ৷
কোন রেটিংয়ের কী মানে?
বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাগ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি কোম্পানির আর্থিক ভিত কতটুকু মজবুত কিংবা দুর্বল এগুলোর ওপর ভিত্তি করে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে রেটিং করা হয় । দীর্ঘমেয়াদে রেটিংগুলো— AAA AA, A, BBB BB, B, CCC, CC, C এবং D।
এছাড়া স্বল্পমেয়াদে ST-1 থেকে ST-6 পর্যন্ত। কোনো কোম্পানি দীর্ঘমেয়াদে AAA রেটিং পাওয়ার অর্থ হলো সক্ষমতার দিক থেকে এটি অত্যন্ত মজবুত। AA দিয়ে খুবই মজবুত ক্যাপাসিটি ও স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ এবং A দিয়ে মজবুত ক্যাপাসিটি ও স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানিকে বোঝায় । BBB দিয়ে সন্তোষজনক ক্যাপাসিটি ও মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ বোঝায় । BB দিয়ে অপর্যাপ্ত সক্ষমতা ও অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানিকে বোঝায়।
B দিয়ে দুর্বল ক্যাপাসিটি ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানি বোঝায়। CCC দিয়ে খুবই দুর্বল ক্যাপাসিটি ও খুবই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানি বোঝায়। CC দিয়ে অত্যন্ত দুর্বল ক্যাগাসিটি ও অত্যন্ত উচ্চ । ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানি বোঝায়। C দিয়ে ব্যর্থতার দিকে অগ্রসর হওয়াকে বোঝায়।
আর সর্বশেষ D রেটিং দিয়ে ব্যর্থ কিংবা অস্তিত্বহীন অথবা দেউলিয়া কোম্পানিকে বোঝায়। অন্যদিকে স্বল্পমেয়াদি ST-1 রেটিং দিয়ে সর্বোচ্চ গ্রেড, ST-2 দিয়ে হাই গ্রেড, ST-3 দিয়ে মাঝারি গ্রেড, ST-4 ও ST-5 দিয়ে অপর্যাপ্ত গ্রেড এবং ST- 6 রেটিং দিয়ে সর্বনিম্ন গ্রেড বোঝানো হয় ।
বৈশ্বিক রেটিংকারী প্রতিষ্ঠান
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মুডিস, স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুউর এবং ফিটচ রেটিং এজেন্সি অন্যতম। মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিস হলো যুক্তরাষ্ট্রের একটি ইন্টিগ্রেটেড রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট ফার্ম বা সমন্বিত ঝুঁকি মূল্যায়ন ও ঋণমান নির্ণয়কারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান । এটি ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে ঝুঁকি মূল্যায়ন ও ঋণমান নির্ণয়ের কাজ করে থাকে । বাংলাদেশ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুডিস রেটিং এজেন্সি দিয়ে রেটিং করে থাকে।
বাংলাদেশে ক্রেডিট রেটিং
বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে ৮টি ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা রয়েছে। এসব ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে তাদের দেওয়া ঋণের মান রেটিং বা নির্ণয় করাতে হয়। কোন প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট রেটিং করবে, তা ব্যাংকগুলো নিজেরাই ঠিক করে।
নাম | কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন | BSEC’র লাইসেন্স |
ক্রেডিট রেটিং ইনফরমেশন অ্যান্ড সার্ভিসেস লি. | ২৯ এপ্রিল ২০০৯ | ২১ আগস্ট ২০০০ |
ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অব বাংলাদেশ, | ২৯ এপ্রিল ২০১০ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ |
ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লি. | ৫ জুলাই ২০১০ | ২২ জুন ২০১০ |
ন্যাশনাল ক্রেডিট রেটিং লি | ১৯ জুলাই ২০১০ | ২২ জুন ২০১০ |
আর্জুস ক্রেডিট রেটিং সার্ভিসেস লি. | ১৫ নভেম্বর ২০১১ | ২১ জুলাই ২০১১ |
আলফা ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড | ১২ জুলাই ২০১২ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১২ |
ডব্লিউএএসও ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি (বিডি) লি. | ১৭ অক্টোবর ২০১২ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ |
দ্য বাংলাদেশ রেটিং এজেন্সি লি. | ১৩ অক্টোবর ২০১৩ | ৭ মার্চ ২০১২ |
মুডিস রেটিংয়ে অবনমন
৩০ মে ২০২৩ মুডিস বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদে রেটিং অবনমন করার সঙ্গে স্বল্পমেয়াদে রেটিং (স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাধ্যবাধকতা পূরণের সামর্থ্য) ‘নট প্রাইম’ গুণসম্পন্ন নয় নির্ধারণ করে। মুডিসের মূল্যায়নে বলা হয়, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখন উচ্চ মাত্রার দুর্বলতা ও তারল্যের ঝুঁকি রয়েছে ।
তাছাড়া ৩১ মে ২০২৩ দেশের বেসরকারি খাতের সাত ব্যাংকের রেটিংও কমিয়ে দেয়। ব্যাংকগুলো হলো— ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক। এর মধ্যে মার্কেন্টাইল ছাড়া অন্য ছয় ব্যাংকের ‘দীর্ঘমেয়াদি ডিপোজিট’ ও “ইস্যুয়ার রেটিং’ কমিয়ে দেওয়া হয় ।