আধুনিক তুরস্কের সুলতান এরদোয়ান

অটোমানদের পতনের পর কামাল আতাতুর্কের হাত ধরে ১৯২৩ সালে আধুনিক তুর্কি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর নতুন ধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করে তুরস্ক। তার ঠিক ১০০ বছর পর এরদোয়ানের হাত ধরে তুরস্কের আর্থ-সামাজিক ও প্রযুক্তিগত সমৃদ্ধি উন্নতির দিকে। দুই দশকের ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন সংকট সত্ত্বেও একক ও অদ্বিতীয় রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানের মধ্য দিয়েই আবির্ভূত হয়েছে অটোমান সাম্রাজ্যের কোনো সুলতানের প্রতিচ্ছবি।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

১৪ মে ২০২৩ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থী ৫০%। ভোট না পেলে নির্বাচন রান অফ বা দ্বিতীয় দফায় গড়ায় । এবারের নির্বাচনে দেশটিতে ১০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম। নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়ায়। এরপর প্রাপ্ত ভোটের শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে ২৮ মে ২০২৩ দ্বিতীয় দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে কামাল কিলিচদারোগলুকে পরাজিত করে টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান ।

তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ ও মন্ত্রিসভা

৩ জুন ২০২৩ তৃতীয় মেয়াদে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ এই শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এর মধ্য দিয়ে এরদোয়ানের শাসন ক্ষমতা তিন দশকে পা রাখল ।

নতুন মন্ত্রিসভা : ৩ জুন ২০২৩ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান ১৮ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেন। এটি দেশটির ৬৭তম মন্ত্রিসভা। নতুন মন্ত্রিসভায় উল্লেখ্যযোগ্য ব্যক্তিত্ব হলেন- ভাইস প্রেসিডেন্ট : সেভদেত ইলমাজ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী : হাকান ফিদান • ট্রেজারি ও অর্থমন্ত্রী : মেহমেত সিমসেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী : ইয়াসার গুলার • স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : আলী ইয়ারলিকায়া ।

প্রথম নারী গভর্নর : ৮ জুন ২০২৩ তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রথম নারী গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান হাফিজি গায়ে আরকান । ৯ জুন ২০২৩ তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন ।

একে পার্টি

তুরস্কের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল একে পার্টি। ১৪ আগস্ট ২০০১ প্রতিষ্ঠিত দলটির তুর্কি ভাষায় নাম Adalet ve Kalkanma Partisi (AKP) আর ইংরেজিতে Justice and Development Party। একে পার্টি ৩ নভেম্বর ২০০২ নির্বাচনের মাধ্যমে তুরস্কের ক্ষমতা লাভ করে । এ সময় দলটি তুর্কি পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয় পায় । বর্তমানে এরদোয়ানের নেতৃত্বে দলটি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন এবং দেশটির রাজনীতিতে একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে।

রুটি বিক্রেতা থেকে সুলতান

এরদোয়ান ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ ইস্তানবুলের কাছিমপাশা শহরতলিতে জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবা আহমদ এরদোয়ান ছিলেন তুরস্ক কোস্ট গার্ডের একজন সদস্য। এরদোয়ানের বয়স যখন ১৩ বছর তখন তার বাবা ইস্তানবুলে আসেন। উদ্দেশ্য ছিল পাঁচ সন্তানকে ভালো লেখাপড়া শেখানো। তরুণ বয়সে স্কুলের মাসোহারা মেটাতে এরদোয়ান বাড়তি উপার্জনের জন্য লেবুর শরবত এবং রুটি বিক্রি করতেন। তিনি মারমারা ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়াশুনা করেন ।

রাজনৈতিক উত্থান

১৯৭৬ সালে নাজিমুদ্দিন এরবাকানের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল স্যালভেশন পার্টির বিয়োগ যুবক শাখার প্রধান নিযুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রথম রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন এরদোয়ান। এরবাকান পরবর্তীতে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

টাইম লাইনে রাজনৈতিক জীবন

  • ২৭ মার্চ ১৯৯৪-৬ নভেম্বর ১৯৯৮ : ইস্তানবুলের মেয়র ।
  • ১৪ আগস্ট ২০০১ : আবদুল্লাহ গুলের সাথে মিলে ইসলামপন্থী একে পার্টি গঠন
  • ১৪ মার্চ ২০০ প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ।
  • ২৯ আগস্ট ২০০৭ : দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী।
  • ৬ জুলাই ২০১১ : তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী ।
  • ১০ আগস্ট ২০১৪ : দেশটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী।
  • ২৮ আগস্ট ২০১৪ : দেশটির ১২তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ
  • ১৬ এপ্রিল ২০১৭ : সাংবিধানিক গণভোটে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি করন।
  • ২৪ জুন ২০১৮ : প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী।
  • ৯ জুলাই ২০১৮ : প্রধানমন্ত্ৰী পদ বিলুপ্ত
  • ২৮ মে ২০২৩ : তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত।

কবিতা পাঠ ও কারাবাস

১২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ তুরস্কের শির্ট শহরের এক সমাবেশে ঐতিহাসিক বক্তব্য দেন এরদোয়ান । সেই বক্তব্যে তুরস্কের কবি। জিয়া গোকালপ-এর ‘সৈন্যদের দোয়া” কবিতার কয়েকটি লাইন, মসজিদ হচ্ছে আমাদের ব্যারাক, গম্বুজ হচ্ছে। আমাদের হেলমেট এবং মিনার হচ্ছে। আমাদের বেয়নেট’ আবৃত্তি করেন। এ জন্য এরদোয়ানকে দশ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কারণে তিনি মেয়র পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। ‘তার সাজার সময়কাল ছিল। ২৪ মার্চ ১৯৯৯-২৭ জুলাই ১৯৯৯ ।

Similar Posts