প্রথম সরকার গঠনের জেলা মেহেরপুর
পটভূমি
১৮৫৪ মতান্তরে ১৮৫৭ সালে মেহেরপুর মহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পূর্ব পর্যন্ত মেহেরপুর নদীয়া জেলার অংশ ছিল। দেশভাগের পর মেহেরপুর ও গাংনী থানাদ্বয় চুয়াডাঙ্গা মহকুমার সাথে যুক্ত হয়। ১৯৫১ সালে মেহেরপুর ও গাংনী থানাদ্বয় নিয়ে মেহেরপুর মহকুমা পুনর্গঠিত হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ মেহেরপুর পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
নামকরণ
মেহেরপুর নামকরণ সম্পর্কে এ পর্যন্ত দুটি অনুমানসিদ্ধ তথ্য পাওয়া যায়। একটি তথ্যমতে, ষোড়শ শতক অথবা তার কিছুকাল পরে ইসলাম প্রচারক দরবেশ মেহের আলী নামক জনৈক ব্যক্তির নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মেহেরপুর নামকরণ করা হয়। তিনি প্রভাবশালী খ্যাতিমান আধ্যাত্মিক ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। আরেকটি তথ্যমতে, অমিয় বসু’র ‘বাংলায় ভ্রমণ’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, মিহির ও তার স্ত্রী খুনা ভৈরব নদীর তীরস্থ এ অঞ্চলে বাস করতেন। মিহিরের নাম থেকে প্রথমে মিহিরপুর এবং পরবর্তীতে অপভ্রংশ হয়ে মেহেরপুর নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হয় ৷
প্রশাসনিক কাঠামো
- উপজেলা : ৩টি- মেহেরপুর সদর, মুজিবনগর ও গাংনী
- থানা : ৩টি
- পৌরসভা : ২টি – মেহেরপুর ও গাংনী
- ইউনিয়ন : ১৮টি
- জাতীয় সংসদের আসন : ২টি
সাধারণ তথ্য
প্রতিষ্ঠা : ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪
সীমানা : উত্তরে কুষ্টিয়া জেলা, দক্ষিণে চুয়াডাঙ্গা জেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ । আয়তন : ৭৫১.৬২ বর্গ কিমি
জনসংখ্যা : ৭,০৫,৩৫৬ জন
সাক্ষরতা (৭ বছর ও তদূর্ধ্ব) : ৭৬.০৮% [সূত্র : BBS)
ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) : ৯৫১ জন।
প্রধান নদনদী > কাজলা ও ছেউটিয়া । আন্তঃসীমান্ত নদী : ভৈরব ও মাথাভাঙ্গা।
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ মুজিবনগরে অবস্থিত। এর স্থপতি তানভীর কবির। ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার যে স্থানে শপথ গ্রহণ করে ঠিক সেই স্থানে ২০.১ একর জমির উপর এ স্মৃতিসৌধের প্রকল্পটি স্থাপিত হয়। এর দৈর্ঘ্য ২৪ ফুট এবং প্রস্থ ১৪ ফুট, মূল বেদী আয়তাকার ও লাল বর্ণের।
মূল স্মৃতিসৌধটিতে রয়েছে ২৩টি ত্রিভুজাকৃতির দেয়াল যা বৃত্তাকারে সারিবদ্ধভাবে সাজানো এবং এই ২৩টি দেয়াল আগস্ট ১৯৪৭-মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত ২৩ বছরের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
৩১ আগস্ট ১৯৭৩ তৎকালীন সরকার মুজিবনগরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের নির্দেশ দেয়। ১৭ এপ্রিল ১৯৭৪ মুজিবনগর দিবসে সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
মুজিবনগর নামের উৎপত্তি
মুজিবনগরের পূর্বনাম বৈদ্যনাথতলা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার তৎকালীন বৈদ্যনাথতলার ভবেরপাড়ার আম্রকাননে শপথ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এ স্থানের নাম ‘মুজিবনগর’ রাখেন। সে সময় সরকারি নথির শীর্ষে লেখা থাকত ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, মুজিবনগর’।
জানেন কি : মেহেরপুর জেলা
- আয়তনে : দেশের ৬২তম খুলনা বিভাগের : ১০ম
- জনসংখ্যায় : দেশের ৬১তম খুলনা বিভাগের : ১০ম
মুক্তিযুদ্ধে মেহেরপুর জেলা
- সেক্টর > ৮নং হানাদার
- মুক্ত দিবস—
৬ ডিসেম্বর : মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর
৮ ডিসেম্বর : গাংনী
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
- ড. মো. মোজাম্মেল হক (পদার্থবিজ্ঞানী)
- মো. শাহ আলম (ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব)
- মুন্সি জমির উদ্দিন (সাহিত্যিক)
- ওয়ালিল হোসেন (বীর প্রতীক)
- ইমরুল কায়েস (ক্রিকেটার)
উল্লেখযোগ্য স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান
- মেহেরপুর সদর > আমঝুপি নীলকুঠি • দরবেশ মেহেরুল্লাহর মাজার • ভবানন্দপুর মন্দির,
- মুজিবনগর > ভবেরপাড়া মিশন • বল্লভপুর শিব মন্দির • মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স, আম্রকানন • মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ
- গাংনী > ভাটপাড়া নীলকুঠি • টেপুখালী বধ্যভূমি ।
বাংলাদেশের প্রথম সরকার
১০ এপ্রিল ১৯৭১ মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় এবং ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার ভবের পাড়া গ্রামে এ সরকার শপথ গ্রহণ করে। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আব্দুল মান্নান এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক এম ইউসুফ আলী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রীসহ আরও কয়েকজনকে মন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে কর্নেল এম এ জি ওসমানী, চিফ অব স্টাফ পদে কর্নেল (অব.) আবদুর রব এবং ডেপুটি চিফ অব স্টাফ পদে এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারের নাম ঘোষণা করা হয় ।