বঙ্গবন্ধু হ*ত্যা এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র

বঙ্গবন্ধু হত্যার কারণ

১৫-ই আগষ্ট, আর পাঁচটা মাসের তারিখের মতই সাধারণ তারিখ মনে হতে পারে। কিন্তু এই তারিখের সাথে যদি ‘৭৫ সালটা জুড়ে দেয়া হয়,তবে তা বাঙলি জাতির ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় রচিত হওয়ার দিন। দিনটি ছিল শুক্রবার। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ খুঁজে; দিন-ক্ষণ,মাস কিংবা তারিখ নয়। তাই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছিল সেসময়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা। মদলত প্রকাশ্যে দেশিয় কিছু সামরিক-বেসামরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দেখা গেলেও, পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ছিল আন্তর্জাতিক অপশক্তির বিরাট একটি অংশ।
বঙ্গবন্ধু হত্যা নেপথ্যে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র
 
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মহান মুক্তিযুদ্ধের পর একটি দেশ ও বিপর্যস্ত জাতি পুনর্গঠনের কঠিন সন্ধিক্ষণে জাতীয় রাজনীতি, অর্থনীতি,সমাজ,ও প্রশাসনকে সংহত ও সমৃদ্ধ করার জন্য সমন্বিত নানা পদক্ষেপ নেন। তিনি এসব কর্মসূচিকে “দ্বিতীয়ববিপ্লব”-এর কর্মসূচি বলে ঘোষণা করেন। যারই অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালে ২৫ জানুয়ারি আওয়ামীলীগ সহ সকল দল বাতিল করে একটিমাত্র বৈধ রাজনৈতিক দল ‘বাকশাল’ গঠন করা হয়। ফলে দ্রুত দেশের সামগ্রিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে।
ঠিক এমনি সময় তিনকন বরখাস্তকৃত সামরিক অফিসারসহ ২০-৩০জন মেজর ও ক্যাপ্টেন এবং সাজোয়া বাহিনীর প্রায় ১৪০০ সৈন্যের সমর্থনে ১৫ আগস্ট ইতিহাসের জঘন্য হত্যাকান্ডটি ঘটে। আরও মনে করা হয়,এ অভ্যূত্থান পরিকল্পনায় খন্দকার মোশতাকসহ কতিপয় মার্কিনপন্থি আওয়ামীলীগ নেতা জড়িত ছিল।বস্তুত বঙ্গবন্ধু হলেন প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ দুই পরাশক্তির মধ্যে চলমান ঠান্ডা লড়াই(cold war) জনিত বিশ্ব রাজনীতির শিকার।
পূর্বাভাস
ঢাকায় ১৯৭৪ সালের শেষ ভাগ থেকেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও সম্ভাব্য একটি সামরিক অভ্যূত্থানের গুজব শোনা যাচ্ছিল। সাংবাদিক লরেজ লিফসুলৎজ ১৯৭৯ সালে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ তার একটি লেখায় উল্লেখ করেন যে, ১৯৭৪ সালের নভেম্বরে কিছু বাংলাদেশি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে কূটনীতিক ও কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করে বঙ্গবন্ধু সরকারে উৎখাতের ব্যাপারে কথা বলেন। তিনি বাংলাদেশিদের পরিচয় প্রকাশ না করলেও ইঙ্গিতপূর্ণভাবে জানান যে,তারা কোন সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন না। বাংলাদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এসম্পর্কে কতটুকু তথ্য পেয়েছ তা আজও অজানা।
শেখ মুজিবের উপর হামলা হতে পারে এমন আভাস অবশ্য ১৯৭৫ সালের বিভিন্ন সময়ও পাওয়া যেতে থাকে। ‘৭৫ সালের এপ্রিল মাসের একরাতে সহকারী গোয়েন্দা সংস্থা স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিআইজি ই এ চৌধুরী রক্ষী বাহিনীর প্রধান কার্যালয়ে এসে জানান সেই রাতেই বঙ্গবন্ধুর ওপরআহামলা হতে পারে এমন সংবাদ তিনি পেয়েছেন। এর মাস দেড়েক পর রক্ষীবাহিনীর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামান প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করেন যে রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ীতে হামলা হতে পারে। উল্লেখ্য,দু’টি পরিস্থিতিতেই বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ির উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়।
এইরকম বিচ্ছিন্ন তথ্য থেকে বোঝা যায়,সরকারের বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্র হচ্ছে এমন খবর কোনভাবে আঁচ করা গেলেপ, ষড়যন্ত্রকারীরা দক্ষতার সাথে পরিচয় গোপন রাখতে পেরেছিল।স্বয়ং বঙ্গবন্ধুও তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের কথা জানতেন।কারণ ভারত ও সোভিয়েত সূত্র থেকে তাঁকে তা জানানো হয়েছিল।৩২ নম্বর ছেড়ে গণভবনে থাকার অনুরোধে খানিকটা রাজি হলেও বেগম মুজিবের অসম্মতি থাকায় আর গণভবনে যাওয়া হলো না।তাছা তিনি বিষয়টিকে হাল্কাভাবে নিয়েছিলেন।মুহূর্তের জন্যও মনে হয় নি কোন বাঙালি তাঁকে হত্যা করতে পারে।কারণ তাঁর ভাষায়,”আমি আমার দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসি,তারা আমাকে ভালোবাসে।”
বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্বে বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রচারণা
একটা সময়ের পর দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারী মহল ভালোভাবেই বুজেছিল হত্যা করা ছাড়া নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক পদ্ধতিতে বঙ্গবন্ধুর অপসারণ কোনভাবেই সম্ভব নয়। প্রচলিত প্রবাদ আছে __’তুমি যদি কাউকে হত্যা করতে চাও,তাহলে আগে তাঁর ইমেজকে হত্যা কর। ‘এখানেও হত্যার পূর্বে দীর্ঘ সময় ধরে সুচতুরভাবে প্রচার,প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর সরকারের ইমেজ ধূলিসাৎ করার একটি অশুভ পরিকল্পনা চলমান ছিল।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যার পূর্ব পর্যন্ত এক বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক ঘটনার মধ্যে কয়েকটি বিশেষ ঘটনা উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে দক্ষিণ ভিয়েতনামের বিপ্লবী সরকারকে স্বীকৃতি দান ও তার রাষ্ট্রপ্রধানকে বাংলাদেশে লালগালিচা সংবর্ধনা,১৯৭৪ সালের প্রচন্ড বন্যা ও বন্যা উদ্ভূত দূর্ভিক্ষ,খন্দকার মোশতাকের ইরান সফর এবং মার্কওন পররাষ্ট্র সচিব হেনরী কিসিঞ্জারের উনিশ ঘন্টা বাংলাদেশ সফর অন্যতম। কিসিঞ্জারের ঢাকা সফরের পর পরই বঙ্গবন্ধু-হত্যাকান্ডের উদ্দেশ্যে গঠিত ‘ক্যু প্ল্যানিং সেল‘-এর সঙ্গে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের কন্টাক্ট হয়।
১৮ এপ্রিল ১৯৭৪ সালে কাকুলে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীতে ভুট্টো বলছিলেন, ‘এ উপমহাদেশে শীঘ্রই কিছু পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। ‘ এর দু’মাসের মধ্যে ১০৭ সদস্যের একটি বড় প্রতিনিধি দল নিয়ে বাংলাদেশে আসেন ভূট্টো।
৬ জানুয়ারি ১৯৭৫ সোমবার: লন্ডনের ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ ‘ পত্রিকায় পিটার জিল শেখ মুজিবকে রাজা কানিউটের সাথে তুলনা করে বলেছেন, তিনি অযোগ্য।তাঁর শাসন থেকে বাংলাদেশ যত তাড়াতাড়ি মুক্ত হয় তত ভাল। He is the best liability of Bangladesh
৮ মার্চ ১৯৭৫ শনিবার: লন্ডনের ‘টাইমস’ পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে বলা হয়,’এশিয়ার সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নেতা হচ্ছেন দু’জন _ চৌ এন লাই এবং জুলফিকার আলী ভূট্টো।বাংলাদেশ হলো Land of human tragedy।
১০ মার্চ ১৯৭৫ সোমবার : লন্ডনের ‘ইকোনমিস্ট’ পত্রিকা ‘দি লাস্ট কার্ড অফ শেখ মুজিব’ নামক প্রবন্ধে বলেছে, “একদলীয় শাসনই শেখ মুজিবের শেষ খেলা..।”
৬ জুন ফিন্যান্সওয়াল টাইমস অফ লন্ডন: ষড়যন্ত্রকারীদের প্ররোচনায় কেভিন রাফের্টি লিখলেন “বাংলাদেশকেযেন কোনভাবেই আর  বৈদেশিক সাহায্য না দেয়া হয়। ” তিনি আরও লিখেছেন,”দেশের মানুষকে ভুগতে দিন।যাতে তারা নিজেরাই শাসলদের উৎখাত করে।
২৭ জুন, বাংলাদেশে নিযুক্ত হল্যান্ডের চার্জ দ্য এফেয়ার্স মি.পি.আর ব্রাউভার বলেন, ‘‘তার আশঙ্কা বাংলাদেশের জন্য এক বড় রকমের দুর্যোগ ঘনিয়ে আসছে।’’

বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারী দেশ

ঘটনাক্রমের ধারাবাহিকতায় মুজিব হত্যার প্রেক্ষাপটে কয়েকটি বিদেশি শক্তি আর দেশিয় প্রেক্ষাপটে ত্রিমুখী ধারার সেনাদলের মনোভাব দৃশ্যপটে এসেছে,সাথে যোগ হয়েছে পদ-পদোন্নতি ইত্যাদির জটিলতা। সুতরাং জাতিরজনক এবং রাষ্ট্রপধানকে হত্যা করতে গিয়ে হত্যাকারীরা সেনা সদস্যের সমর্থন ও সহায়তা পেয়েছে,কিন্তু বাকি চক্রান্তটাই ছিল লোকচক্ষুর আড়ালে গোপন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।
আমেরিকা
মার্কিন সরকার একটি দেশের পতন ঘটানোর জন্য কিছু নিয়মতান্ত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যা অনেকটা এইরকম,মার্কিনীদের সিআইএ প্রথমে ঐদেশের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যমগুলোকে হাত করে; তাদের এজেন্ট বসিয়ে তার মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা,অর্ধসত্য তথ্য প্রচার করে। এরপর দেশের শ্রমিক শ্রেণিকে  উসকে দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। আর তখনই গণতন্ত্র রক্ষার নামে সামরিক অভ্যূত্থান ঘটিয়ে সরকারের পতন ঘটায়। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে,বঙ্গবন্ধুর সরকারের পতনের পরিকল্পনা থেকে হত্যাকান্ড সবটাই এই ঘটনাক্রম অনুসরণ করেই করা হয়েছে।
তাছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রি হেনরি কিসিঞ্জার শেখ মুজিবকে তার ব্যক্তিগত প্রতিধন্দ্বি মনে করতেন। কিসিঞ্জারের সাবেক স্টাফ অ্যাসিস্ট্যান্ট রজার মরিস এক সাক্ষাৎকারে বলেন,”শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভ্যূদয়কে কিসিঞ্জারি এর ব্যক্তিগত পরাজয় বলে মনে করতেন। কিসিঞ্জারের বিদেশি শত্রুর তালিকায় সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তিরা হচ্ছেন আলন্দপ, থিউ ও মুজিব।…এবং মুজিবের বিজয় ছিল আমেরিকার শাসকবর্গের পক্ষে অত্যন্ত বিব্রতকর।”
যদিও মুজিব হত্যার পরপরই মার্কিন সংশ্লিষ্টতার খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে এবং সেগুলো কঠিন চাপের সম্মুখীনও হয়। তারপরও ১৯৭৫ সালে সামরিক অভ্যূত্থানের পরের মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন তারবার্তার বিষয় উঠে আসে। এসময় দিল্লিতপ নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম স্যাক্সন,বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত বোস্টার প্রমুখের নাম উঠে আসে।
শেখ মুজিব ছিলেব মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সমর্থক রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ তাঁকে যপ নেতৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠা করেছিল, তা ছিল মার্কিনীদের নিকট অগ্রহণযোগ্য। তার উপর যুদ্ধে সাহায্য আসে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে।সেখানেও ছিল মার্কিনী স্বার্থের সংঘাত।
পাকিস্তান
বিদেশিদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর হত্যায় সবচেয়ে বেশি উল্লাসিত হন পাকিস্তানের ভুট্টো। ১৫ আগস্ট মুজিব হত্যার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বাংলাদেশের সরকারকে স্বীকৃতি দেয় পাকিস্তান। পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র তৈরিতে উৎসাহ দিয়ে কৌশলে পূর্বের পরাধীনতায় পিরিয়ে নেয়ার চক কষে।
যারই অংশ হিসেবে, মেজর ডালিম রেডিও স্টেশন দখল করে বাংলাদেশকে একটি ইসলামিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা দেয়ার একদিন পর জুলফিকার আলী ভুট্টোও ”ইসলামিক রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ”-এর প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান। এই ধরণা সৌদি আরবকেও দেয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র থেকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র তৈরির ধারণা টেকে নি। ফলস্বরূপ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কন্দোলে প্রাণ দিতে জয় জাতির জনক-কে।
চীন
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডে চীনের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের বিষয়টি অস্পষ্ট হলেও আমেরিকা ও পাকিস্তানের মিত্র দেশ হিসেবে তাদের পরিকল্পনা বা প্রভাব থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।  কারণ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েই কট্টর চীনপন্থি কিছু ব্যক্তি চীনের রাজনৈতিক মনোভাবের সাথে সঙ্গতি রেখে সশস্ত্র ভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা শুরু করেছিল।আবার সেইসব দলের কেউ কেউ স্বতন্ত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও স্বাধীনতার পর সবাই সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে।
তখনকার নাজুক পুলিশবাহিনীর পক্ষে তাদের মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তারা সারা দেশে বেশ কিছুসংখ্যক স্বচ্ছলল কৃষক, ধনী ব্যবসায়ী,সরকারী কর্মকর্তা,আনসার-পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের যেমন হত্যা করে,তেমনি প্রতিনিয়ত ব্যাংক এবং মানুষের বাসা বাড়ীতে ডাকাতি করে সরকারের উপর মানুষের মব বিষিয়ে তুলেছিল। সুতরাং যুদ্ধপরবর্তী বছরগুলোতে ঘটতে থাকা ঘটনাপঞ্জির ভিত্তিতে সন্দেহের তীর কিছুটা চীনের দিকেও উঠে।
হত্যা পরবর্তী দূতাবাস ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়া 
বিবিসির প্রচারিত সংবাদে বলা হয়,”অভ্যুত্থানের ফলে বাংলাদেশ তার অফিসিয়াল নামে পরিবর্তন এনেছে। ‘দি পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’_এর পরিবর্তে নতুন নামকরণ হয়েছে ‘দ্য ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ‘। যদিও ১৭ আগস্ট ঢাকা রেডিও এই ভুলের অবসাম ঘটায়।
২০ আগস্ট ভারতের তৎকালীন হাইকমিশনার সমর সেন বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেন। সেই সাক্ষাতে দু’জনের হাসিমাখা করমর্দনের ছবি ছাপা হয় ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকার প্রথম পাতায়। আগস্টের ২৫ তারিখ খন্দলার মোশতাক ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানদ্বয়ের উদ্দেশ্যে এল বার্তা প্রেরণ করেন।
ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকাকালীন যে সৌদিআরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় নি বঙ্গনন্ধু হত্যার পর সেই সৌদি আরব জুলফিকার আলী ভূট্টোর আবেদনের প্রেক্ষিতে মোশতাক সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। জাপান এবং ব্রিটেন আগস্টের ১৮ তারিখে নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। আমেরিকার মতে নতুন করে এ ধরনের স্বীকৃতির প্রয়োজন নেই।
সোভিয়েত চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স ২৪ আগস্ট মোশতাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নতুন সরকারকে স্বীকৃতির কথা জানান। সমাজতান্ত্রিক ব্লকের অন্যান্য রাষ্ট্রের মনোভাবও ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো। বঙ্গবন্ধু সরকারকে স্বীকৃতি না দিলেও চীন কিন্তু মোশতাক সরকারকে গ্রহণ করেছিল বঙ্গবন্ধু
১৬ দিন পর চৌ এন লাই এক বার্তায় একথা জানান।
উপসংহার
বঙ্গবন্ধু একটি রচনা,যা  সূচনা দিয়ে শুরু করা যায় অনায়াসে; কিন্তু তার উপসংহার দেয়া কঠিন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়গুলোতে বিশ্ব রাজনীতিতে একদিকে ছিল ভারত-বাংলাদেশ-তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন।আর অন্যদিকে পাকিস্তান-চীন-আমেরিকা। এই দুই মিত্রশক্তির পারস্পরিক বৈরী মনোভাব একসময় প্রতিহিংসায় পর্যবসিত হয়। তাছাড়া দেশিয় সহযোগীদের নিয়ে তৈরি করা হয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড এই ষড়যন্ত্রের অন্যতম ফলপ্রসূ অর্জন।
নুসরাত জাহান নিশু
শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগ,
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি (মহিলা)প্লাটুন
তথ্যসূত্র
কর্ণেল শাফায়াত জামিল(অব.),”একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ,রক্তাক্ত মধ্য আগস্ট ও ষড়যন্ত্রের নভেম্বর”।
মঈনুল হাসান,”মূলধারা ‘৭১”।
মিজানুর রহমান খান,”মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকান্ড”।
আনু মাহমুদ,”বঙ্গবন্ধুর হত্যার রায় জাতির কলঙ্ক মোচন”।
পপি দেবী থাপা,”বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড : আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও বিশিষ্টজনের প্রতিক্রিয়া “।

Similar Posts