শব্দ কি? | উৎস অনুসারে শব্দ কত প্রকার

শব্দ কি?

এক বা একাধিক ধ্বনি একত্রিত হয়ে যখন একটি নির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশ করে, তখন তাকে শব্দ বলে। বাক্যের একক হল শব্দ।

উৎস অনুসারে শব্দ কত প্রকার?

শব্দের বিভিন্ন শ্রেণী বিভাগ রয়েছে। যেমন, উৎসমূলক, গঠনমূলক, অর্থমূলক ইত্যাদি। উৎস অনুসারে শব্দ পাঁচ প্রকার। তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি, এবং বিদেশি শব্দ।
 
১. তৎসম শব্দ
 
যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে সােজাসুজি বাংলায় এসেছে এবং যাদের রূপ এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে, সেসব শব্দকে বলা হয় তৎসম শব্দ। তৎসম এর অর্থ (তৎ (তার)+ সম (সমান) তার সমান অর্থাৎ সংস্কৃত। সাধু ভাষা রীতিতে তৎসম শব্দের ব্যবহার সর্বাধিক লক্ষ্য করা যায়। উদাহরণ : চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, তৃণ, গগণ, চরণ, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য, ইত্যাদি।

তৎসম শব্দ চেনার উপায়

  • ষ-যুক্ত শব্দ (বেশির ভাগ ক্ষেত্রে): মনুষ্য, ভাষা, বৈষ্ণব।
  • ণ-যুক্ত (বেশির ভাগ ক্ষেত্রে): অগ্রহায়ণ, ব্যাকরণ, চরণ, তৃণ, গগণ।
  • ঋ-যুক্ত শব্দ (বেশির ভাগ ক্ষেত্রে): গৃহিণী, কৃষি, ঋষি, নৃত্য।
এছাড়া চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, আকাশ, সাগর, নদী, বায়ু, জ্যোৎস্না, শ্রাদ্ধ, জল, জীবন, খাদ্য, ক্ষুধা, মাতা, পুত্র, দান, ধর্ম, কবি, ছবি, উদর, উত্তর ইত্যাদি।
২. অর্ধ-তৎসম শব্দ
বাংলা ভাষায় কিছু সংস্কৃত শব্দ সামান্য পরিবর্তিত আকারে ব্যবহৃত হয়। এগুলােকে বলে অর্ধ-তৎসম শব্দ। তৎসম মানে সংস্কৃত। আর অর্ধ-তৎসম মানে আধা সংস্কৃত। উদাহরণস্বরুপ : জ্যোছনা, ছেরাদ্দ গিন্নী, বােষ্টম, কুচ্ছিত- এ শব্দগুলাে যথাক্রমে সংস্কৃত জ্যোৎস্না, শ্রাদ্ধ, গৃহিণী, বৈষ্ণব, কুৎসিত শব্দ থেকে আগত।
৩. তদ্ভব শব্দ
তদ্ভব শব্দের মূল সংস্কৃত ভাষায় পাওয়া যায়, কিন্তু ভাষার স্বাভাবিক বিবর্তন ধারায় প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে আধুনিক বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে, সেসব শব্দকে বলা হয় তদ্ভব শব্দ। তদ্ভব একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ, তৎ (তার), ভব মানে (উৎপন্ন)। অর্থ্যাৎ তার (সংস্কৃত) থেকে উৎপন্ন।  যেমন – সংস্কৃত-হস্ত, প্রাকৃত-হত্থ, তদ্ভবে-হাত। সংস্কৃত-চর্মকার, প্রাকৃত-চম্মআর, তদ্ভব-চামার ইত্যাদি। এছাড়া সংস্কৃত-চন্দ্র, প্রাকৃত-চন্দ, তদ্ভব-চাঁদ। সংস্কৃত-মাতা, প্রাকৃত-মাঅ, তদ্ভব-মা ইত্যাদি।
৪. দেশি শব্দ
 
বাংলাদেশের আদিম অধিবাসীদের (যেমন : কোল, মুণ্ডা প্রভৃতি) ভাষা ও সংস্কৃতির কিছু কিছু উপাদান বাংলায় রক্ষিত রয়েছে। এসব শব্দকে দেশি শব্দ নামে অভিহিত করা হয়। তবে, অনেক সময় এসব শব্দের মূল নির্ধারণ করা যায় না, কিন্তু কোন ভাষা থেকে এসেছে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন—কুড়ি (বিশ)-কোলভাষা, পেট (উদর)–তামিল ভাষা, চুলা (উনুন)—মুণ্ডারী ভাষা। এরূপ, কুলা, গঞ্জ , টোপর , ডাব, ডাগর, ঢেঁকি, চিংড়ি, চোঙ্গা,  জিঙা, ঢাল ঢোল, পেট, নারিকেল, কালো, মোটা,   ইতাদি দেশি শব্দ বাংলায় ব্যবহৃত হয় ।
৫. বিদেশি শব্দ
 
রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সংস্কৃতিগত ও বাণিজ্যিক কারণে বাংলাদেশে আগত বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের বহু শব্দ বাংলায় এসে স্থান করে নিয়েছে। এসব শব্দকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। এসব বিদেশি শব্দের মধ্যে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি শব্দই বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। সে কালের সমাজ জীবনের প্রয়ােজনীয় উপকরণরূপে বিদেশি শব্দ এ দেশের ভাষায় গৃহীত হয়েছে। এছাড়া পর্তুগিজ, ফরাসি, ওলন্দাজ, তুর্কি এসব ভাষারও কিছু শব্দ একইভাবে বাংলা ভাষায় এসে গেছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারত, মায়ানমার (বার্মা), চীন, জাপান প্রভৃতি দেশেরও কিছু শব্দ আমাদের ভাষায় সংযুক্ত হয়েছে।
  • ক. আরবি শব্দ : বাংলায় ব্যবহৃত আরবি শব্দগুলাে যথাক্রমে, ইসলাম, আল্লাহ, ঈমান, ওজু, কোরবানি, কুরআন, কিয়ামত, গােসল, জান্নাত, জাহান্নাম, তওবা, তসবি, জাকাত, হজ্ব, হাদিস, হারাম, হালাল, আদালত, আলেম, ইনসান, ঈদ, উকিল, ওজর, এজলাস, এলেম, কানুন, কলম, কিতাব, কেচ্ছা,খারিজ, গায়েব, দোয়াত, নগদ, বাকি, মহকুমা, মুন্সেফ, মােক্তার, রায় ইত্যাদি।
  • খ. ফারসি শব্দ : বাংলা ভাষায় আগত ফারসি শব্দ সমূহ যতাক্রমে, খােদা, গুনাহ, দোজখ, নামাজ, পয়গম্বর , ফেরেশতা, বেহেশত, রােজা, কারখানা, চশমা, জবানবন্দি, তারিখ, তােশক, দফতর, দরবার, দোকান, দস্তখত, দৌলত, নালিশ, বাদশাহ বান্দা বেগম,মেথর, রসদ, আদমি, আমদানি জানােয়ার, জিন্দা, নমুনা, বদমাশ রফতানি হাঙ্গামা ইত্যাদি।
  • গ. ইংরেজি শব্দ : ইংরেজি শব্দ সমূহ যথাক্রমে, ইউনিভার্সিটি, ইউনিয়ন, কলেজ, টিন, নভেল, নােট, পাউডার, পেন্সিল, ব্যাগ, ফুটবল, মাস্টার, লাইব্রেরি, ফুল, আফিম (Opium), অফিস (Office), ইস্কুল (School), বাক্স (Box), হাসপাতাল (Hospital), বােতল (Bottle) ইত্যাদি।
  • ঘ. ইউরােপীয় ও অন্যন্য ভাষার শব্দ
  • পর্তুগিজ : আনারস, আলপিন, আলমারি, গির্জা, গুদাম, চাবি, পাউরুটি, পাদ্রি, বালতি, সাবান, ইস্পাত,নিলাম, ফিতা,পেয়ারা, কেদারা, বোতাম, বারান্দা, টুপি, জানালা, পেপে, পেরেক  ইত্যাদি।
  • ফরাসি : কার্তুজ, কুপন, ডিপাে, রেস্তােরা, ইংরেজ, ফরাসি, তোয়ালে, বুর্জোয়া, ইত্যাদি।
  • ওলন্দাজ/ডাচ : ইস্কাপন, টেক্কা, তুরুপ, রুইতন, হরতন ইত্যাদি।
  • গুজরাটি : খদ্দর, হরতাল ইত্যাদি।
  • পাঞ্জাবি : চাহিদা, শিখ ইত্যাদি।
  • তুর্কি : বাব, বাবুর্চি,  চাকর, চাকু, কাঁচি, কুলি, কুর্নিশ,  তােপ, দারােগা, বন্দুক, বারুদ, লাশ, মুচলেকা,   ইত্যাদি।
  • চীনা : চা, চিনি, লিচু, লুচি ইত্যাদি।
  • মায়ানমার (বার্মিজ) : ফুঙ্গি, লুঙ্গি ইত্যাদি।
  • জাপানি: রিক্সা, হারিকিরি ইত্যাদি।
  • হিন্দি : রুটি, পানি, চানাচুর, মিঠাই।
  • ঙ. মিশ্র শব্দ : কোনাে কোনাে সময় দেশি ও বিদেশি শব্দের মিলনে শব্দদ্বৈত সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেমন –
  • রাজা-লালশ (তৎসম+ফারসি)
  • হাট-বাজার (বাংলা ও ফারসি)
  • হেড-মৌলভি (ইংরেজি+ ফারসি)
  • হেড-পণ্ডিত (ইংরেজি+তৎসম)
  • খ্রিস্টাব্দ (ইংরেজি+তৎসম)
  • ডাক্তারখানা (ইংরেজি+ফারসি)
  • পকেটমার (ইংরেজি+বাংলা)
  • আইনজীবী (আরবি+তৎসম)
  • চেীহদ্দি (ফারসি+আরবি)

Similar Posts