অর্থনীতি কি? অর্থনীতির প্রকারভেদ

আধুনিক বিশ্বে অর্থনীতি অধ্যয়ন করে ব্যক্তি, ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা, সরকার এবং দেশসমূহ সম্পদের যথাযথ বন্টন নিশ্চিত করতে পারে। অর্থনীতির মূল কাঠামো হল শ্রম এবং বাণিজ্যের অধ্যয়ন। কারণ মানব শ্রমের অনেক সম্ভাব্য প্রয়োগ এবং সম্পদ অর্জনের বিভিন্ন উপায় রয়েছে, তাই কোন পদ্ধতিগুলো সর্বোত্তম ফলাফল দেয় তা নির্ধারণ করাই মূলত অর্থনীতির কাজ।
অর্থনীতির প্রাচীনতম বিশ্লেষক ছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীর গ্রীক কবি হেসিওড। তিনি  লিখেছিলেন যে অভাব কাটিয়ে উঠতে শ্রম, উপকরণ এবং সময় দক্ষতার সাথে বন্টন করা প্রয়োজন।
তবে, অর্থনীতির আধুনিক তত্ত্বের আর্বিভাব হয়েছিল স্কটিশ দার্শনিক অ্যাডাম স্মিথের ১৭৭৬ সালের বই, An Inquiry Into the Nature and Causes of the Wealth of Nations এর প্রকাশনার মধ্য দিয়ে।

অর্থনীতি কি?

ইংরেজি Economics শব্দের বাংলা অর্থ অর্থনীতি। Economics শব্দটি গ্রিক শব্দ oikonomos থেকে আগত যার অর্থ হল ‘‘যিনি পরিবার পরিচালনা করেন।’’ অর্থাৎ অর্থনীতি হচ্ছে পরিবার পরিচালনার আয় ব্যয়ের সামগ্রিক কার্যক্রম।
অর্থনীতি হল কিভাবে মানুষ সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে উৎপাদন, বন্টন এবং ভোগ করে তার অধ্যয়ন।
অর্থনীতি, যেখানে বিকল্প ব্যবহার রয়েছে এমন দুষ্প্রাপ্য সম্পদ বন্টনের মাধ্যমে চাহিদা ও চাহিদার সন্তুষ্টির দিকে পরিচালিত করে।

অর্থনীতির সংজ্ঞা

মেরিয়াম-ওয়েবস্টার এর সংজ্ঞানুসারে,
অর্থনীতি, একটি সামাজিক বিজ্ঞান যা পণ্য ও পরিসেবা উৎপাদন, বন্টন এবং ব্যবহারের বর্ণনা এবং বিশ্লেষণের সাথে সম্পর্কিত।
প্রথম আধুনিক অর্থনীতিবিদ স্কটিশ অ্যাডাম স্মিথ অর্থনীতিকে ‘‘জাতি সমূহের সম্পদের প্রকৃতি ও কারণ অনুসন্ধান’’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তাই, অ্যাডাম স্মিথকে অর্থনীতির জনক বলা হয়।
ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ আলফ্রেড মার্শাল অর্থনীতিকে ‘‘জীবনের সাধারণ ব্যবসায় মানুষের অধ্যয়ন’’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। আলফ্রেড মার্শালকে আধুনিক অর্থনীতির জনক বলা হয়।
বিংশ শতকের অর্থনীতিবিদ পল স্যামুয়েলসন অতীতের সংজ্ঞার উপর ভিত্তি করে অর্থনীতিকে সামাজিক বিজ্ঞানের অংশ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেন।
স্যামুয়েলসনের মতে, 
“Economics is the study of how people and society choose, with or without the use of money, to employ scarce productive resources which could have alternative uses, to produce various commodities over time and distribute them for consumption now and in the future among various persons and groups of society.”

অর্থনীতির প্রকারভেদ

অর্থনীতির প্রধান দুটি মৌলিক শাখা রয়েছে। যেমন, ব্যষ্টিক অর্থনীতি এবং সামষ্টিক অর্থনীতি। ব্যষ্টিক বা ক্ষুদ্র অর্থনীতি এবং সামষ্টিক অর্থনীতি হল অর্থনীতির দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ। নিম্মে অর্থনীতির প্রধান দুটি মৌলিক শাখা নিয়ে আলোচনা করা হল।
১. ব্যষ্টিক অর্থনীতি
যে অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ব্যক্তি বা ভোক্তা বা একটি পণ্যের দাম নিয়ে আলোচনা করা হয় তা মাইক্রো বা ব্যষ্টিক অর্থনীতি।
ব্যষ্টিক অর্থনীতি হচ্ছে যা ভোক্তা এবং উৎপাদকদের আচরণের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
মাইক্রোইকোনমিক্স বা ব্যষ্টিক অর্থনীতি হল সম্পদের বন্টন এবং পণ্য ও পরিসেবার দাম সংক্রান্ত ব্যক্তি এবং ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের অধ্যয়ন। ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে বাণিজ্য, শিল্প সংগঠন এবং বাজার কাঠামো, শ্রম অর্থনীতি, পাবলিক ফাইন্যান্স নিয়ে আলোচনা করে।
ব্যষ্টিক অর্থনীতির মূল নীতি (Microeconomics key Principles)
  • চাহিদা, সরবরাহ এবং ভারসাম্য
  • উৎপাদন তত্ত্ব
  • উৎপাদন খরচ
  • শ্রম অর্থনীতি
২. সামষ্টিক অর্থনীতি
ম্যাক্রো ইকোনমিক্স বা সামষ্টিক অর্থনীতি হল দেশ ও সরকারের সিদ্ধান্তের অধ্যয়ন। এটি ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট কোম্পানির পরিবর্তে একটি দেশের সমগ্র শিল্প এবং অর্থনীতি বিশ্লেষণ করে।
সামষ্টিক অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির সর্বোত্তম হার (Optimal rate of inflation) এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে (Economic growth) উদ্দীপিত করতে পারে এমন কারণগুলো নির্ধারণ করার চেষ্টা করে। উদাহরণস্বরূপ, সামষ্টিক অর্থনীতির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা যায় যে কিভাবে বেকারত্বের হার মোট দেশীয় পণ্যকে প্রভাবিত করে। এছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতি জাতীয় আয়, সঞ্চয় এবং সামগ্রিক মূল্য স্তরের মধ্যে সম্পর্ক বর্ণনা করে।
ব্যাপক অর্থে সার্বিক অর্থনীতি যেখানে আলোচনা করা হয় তাই ম্যাক্রো বা সামষ্টিক অর্থনীতি। সামষ্টিক অর্থনীতি, যা আঞ্চলিক, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক স্কেলে সামগ্রিক অর্থনীতি পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে।

Similar Posts