ন্যাটো ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী প্রথম সামরিক জোট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির পর, ইউরোপের দেশগুলো তাদের অর্থনীতি পুনর্গঠন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সংগ্রাম করেছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের দেশগুলোতে শিল্প-কল কারখানা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং খাদ্য উৎপাদনে সাহায্য করার জন্য প্রচুর সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। সেইসাথে পুনরুত্থিত জার্মান এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের আক্রমণের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থারও অতি জরুরী মনে হয়েছিল।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ মহাদেশ জুড়ে কমিউনিস্ট সম্প্রসারণ প্রতিরোধের জন্য একটি সামরিক জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিল। ফলস্বরুপ, সামরিক জোট ন্যাটোর উদ্ভব হয়।
ন্যাটো কি
উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা (বা ন্যাটো) হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং বেশ কয়েকটি পশ্চিম ইউরোপীয় দেশ নিয়ে গঠিত একটি সামরিক জোট। এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যৌথ নিরাপত্তার স্বার্থে গঠিত হয়। NATO এর পূর্ণরুপ (North Atlantic Treaty Organization)।
৪ এপ্রিল, ১৯৪৯ সালে, সামরিক জোট ন্যাটো (NATO) প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে অবস্থানরত সোভিয়েত সেনাবাহিনীর প্রতি কাউন্টারওয়েট তৈরি করতে ন্যাটো গঠিত হয়।
ন্যাটো ভুক্ত দেশ
২০২৩ সাল পর্যন্ত ন্যাটোর সদস্য দেশ ৩২ টি। ন্যাটোর প্রতিষ্ঠাকালীল সদস্য দেশগুলা ছিল যথাক্রমে- বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, ইতালি, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পর্তুগাল, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ন্যাটোর ৩২টি সদস্য দেশ
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
- যুক্তরাজ্য
- কানাডা
- ফ্রান্স
- ইতালি
- ডেনমার্ক
- বেলজিয়াম
- আইসল্যান্ড
- লুক্সেমবার্গ
- নেদারল্যান্ডস
- পর্তুগাল
- নরওয়ে
- গ্রীস
- তুরস্ক
- জার্মানি
- স্পেন
- চেক প্রজাতন্ত্র
- হাঙ্গেরি
- পোল্যান্ড
- বুলগেরিয়া
- এস্তোনিয়া
- লাটভিয়া
- লিথুয়ানিয়া
- রোমানিয়া
- স্লোভাকিয়া
- স্লোভেনিয়া
- আলবেনিয়া
- ক্রোয়েশিয়া
- মন্টিনিগ্রো
- উত্তর মেসিডোনিয়া
- ফিনল্যান্ড
- সুইডেন
২০২৩ সালে ৩২তম দেশ হিসেবে ন্যাটোতে যোগ দেয় সুইডেন। ন্যাটোভুক্ত মুসলিম দেশ ২ টি, যথা- তুরস্ক ও আলবেনিয়া।
ন্যাটো কেন গঠিত হয়?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, পশ্চিম ইউরোপ অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে যায় এবং সেইসাথে ফ্রান্স ও ইতালিতে নতুন শক্তিশালী কমিউনিস্ট পার্টির উদ্ভব হয়, তখন ন্যাটো গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
বিপরীতে, সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়ের পর, তার সেনাবাহিনী মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের অধিকাংশ দেশে আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। ১৯৪৮ সাল নাগাদ মস্কোর পৃষ্ঠপোষকতায় কমিউনিস্টরা সেই দেশগুলোর সরকারের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ সুসংহত করে। সেই সাথে সমস্ত অ-কমিউনিস্ট রাজনৈতিক কার্যকলাপ দমন অব্যাহত রাখে।
ফলস্বরুপ, পশ্চিমা মিত্রশক্তি এবং সোভিয়েতের মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সহযোগিতা ও মিত্রতা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে। মিত্র শক্তি দেশসমূহ অধিকৃত জার্মানি নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। ফলে, জার্মান রাষ্ট্র দ্বিখন্ড হয়ে একটি গণতান্ত্রিক পশ্চিম জার্মানি এবং অন্যটি কমিউনিস্ট শাসিত পূর্ব জার্মানি হয়।
১৯৪৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্শাল প্ল্যানের মাধ্যমে পশ্চিম ও দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করার জন্য বিপুল পরিমাণে অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়।
১৯৪৮ সালে, সামরিক পুনরুদ্ধারের জন্য যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস এবং লুক্সেমবার্গ-‘পশ্চিম ইউরোপীয় ইউনিয়ন’ নামে একটি যৌথ-প্রতিরক্ষা চুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। তবে শীঘ্রই তারা বুঝতে পারে যে, সোভিয়েতের সামরিক আক্রমণের জন্য আরও শক্তিশালী জোটের প্রয়োজন হবে।
এই সময়ের মধ্যে ব্রিটেন, কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর গোপন অনুসন্ধানমূলক আলোচনায় নিযুক্ত ছিল। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে, একটি বহুপাক্ষিক যৌথ-প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শুরু করে যা পশ্চিমা নিরাপত্তাকে উন্নত করার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে উন্নীত করবে। এই আলোচনাগুলোতে শেষ পর্যন্ত ফ্রান্স, এবং নরওয়ে যোগ দেয় এবং যা এপ্রিল ১৯৪৯ সালে উত্তর আটলান্টিক চুক্তিতে পরিণত হয়।