প্রাচীনকাল থেকে মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে হিসেব-নিকেশ করত। এর জন্য প্রথমদিকে, হাতের আঙুলের সাহার্যে গণনার কাজ সম্পাদান হত। এর পরে, পাথর, নুড়ি, বাকল, দড়ি, দাগকাটা, ও পাতায় লিখে কোনমতে সংখ্যার কাজ সারতো।
কালক্রমে মানুষ চিত্রভিত্তিক, বর্ণভিত্তিক এবং অংক বা প্রতিকের মাধ্যমে গানিতিক হিসেবের কাজ করে। আধুনিককালে ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রে গণনার কাজের প্রয়োজনে বিভিন্ন সংখ্যা পদ্ধতির উদ্ভব হয়। নিম্মে সংখ্যা পদ্ধতির সংজ্ঞা ও বিভিন্ন সংখ্যা পদ্ধতির সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা করা হল।
সংখ্যা পদ্ধতি কি?
যে পদ্ধতিতে সংখ্যা গণনা করা হয় বা প্রকাশ করা হয়, তাকে সংখ্যা পদ্ধতি (Number systems) বলে। এসকল সংখ্যাকে বিভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়ােজনীয় গণনার কাজ করা হয়।
যে পদ্ধতিতে বিভিন্ন সংখ্যা লিখে প্রকাশ করা যায় এবং উক্ত সংখ্যাগুলোর উপর বিভিন্ন অপারেশন প্রয়োগ, যথা- যোগ, বিয়োগ, ভাগ, গুণ, এবং শতকরায় রুপান্তর করে হিসেব নিকেশ সম্পাদান করা যায়, তাকে সংখ্যা পদ্ধতি বলে।
সংখ্যা তৈরির ক্ষুদ্রতম একক হচ্ছে অঙ্ক, যেমন ১, ২, ৩। দৈনিন্দিন কাজে আমরা সাধারণত দশমিক সংখ্যা ব্যহার করি, কিন্তু বর্তমানে কিছু মেশিনভিত্তিক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। যথা- বাইনারি, অক্টাল, এবং হেক্সাডেসিমল।
সংখ্যা পদ্ধতির প্রকারভেদ
সংখ্যা পদ্ধতি চারভাগে বিভক্ত। নিম্মে ৪ টি সংখ্যা পদ্ধতি দেওয়া হল।
- দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি (Decimal number system)
- বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি (Binary number system)
- অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি (Octal number system)
- হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি (Hexadecimal number system)
১. দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি: দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে ০,১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮ এবং ৯। এই দশটি প্রতীক দিয়ে সব ধরণের সংখ্যা গঠন করা হয়। দশটি অংক ব্যবহার করা হয় বলে এ সংখ্যা পদ্ধতিকে বলা হয় দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি। এ সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি হচ্ছে ১০।
দশমিক পদ্ধতির ক্ষেত্রে একক, দশক, শতক এভাবে কোন সংখ্যার মান নির্ণয় করতে হয়। পূর্ণ দশমিক সংখ্যার স্থানীয় মান নির্ণয় করতে সংখ্যার ডনদিকে থেকে প্রথম ঘরের মান নির্ণয় করতে হয়। ৯৬৭ সংখ্যার একক স্থানীয় অংক ৯, দশক স্থানীয় অংক ৮, শতক স্থানীয়
অংক ৭।
২. বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি: শূন্য (০) এবং এক (১) এর অন্তহীন সমন্বয়ে গঠিত বাইনারী সিস্টেম। বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে কেবল দুটি ডিজিট(০, ১) বা প্রতীক ব্যবহৃত হয়। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে টমাস হ্যারিয়ট প্রথম বাইনারী সংখ্যা কাজে লাগান। এটি আধুনিক কম্পিউটারে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে প্রচলিত সংখ্যা পদ্ধতি। আধুনিক যুগের প্রায় সকল কম্পিউটার ও ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র বাইনারি সংখ্যায় চালিত হয়।
৩. অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি: যে সংখ্যা পদ্ধতিতে আটটি অংক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, তাকে অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অংকগুলাে হলাে ০,১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭। অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতির ভিত (Base) হচ্ছে ৮। (৭১৪)৮, একটি অক্টাল সংখ্যা।
৪. হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি: যে সংখ্যা পদ্ধতিতে ষােলটি (১৬) অংক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অংকগুলাে হলাে ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, A, B, C, D, E, F। হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতির ভিত (Base) হচ্ছে ১৬। উদাহরণ- (৭৬A)১৬ একটি হেক্সাডেসিমেল সংখ্য।
দশমিক, বাইনারি, অক্টাল, এবং হেক্সাডেসিমাল
সংখ্যার পরিবর্তন
দশমিক
|
বাইনারি
|
অক্টাল
|
হেক্সাডেসিমাল
|
০
|
০
|
০
|
০
|
১
|
১
|
১
|
১
|
২
|
১০
|
২
|
২
|
৩
|
১১
|
৩
|
৩
|
৪
|
১০০
|
৪
|
৪
|
৫
|
১০১
|
৫
|
৫
|
৬
|
১১০
|
৬
|
৬
|
৭
|
১১১
|
৭
|
৭
|
৮
|
১০০০
|
১০
|
৮
|
৯
|
১০০১
|
১১
|
৯
|
১০
|
১০১০
|
১২
|
A
|
১১
|
১০১১
|
১৩
|
B
|
১২
|
১১০০
|
১৪
|
C
|
১৩
|
১১০১
|
১৫
|
D
|
১৪
|
১১১০
|
১৬
|
E
|
১৫
|
১১১১
|
১৭
|
F
|
১৬
|
১০০০০
|
১৮
|
১০
|
১৭
|
১০০০১
|
১৯
|
১১
|
১৮
|
১০০১০
|
২০
|
১২
|
১৯
|
১০০১১
|
২১
|
১৩
|
২০
|
১০১০০
|
২২
|
১৪
|