ন্যাম কি : ন্যাম প্রতিষ্ঠার পটভূমি ও উদ্দেশ্য

ন্যাম কি

জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম) হল ১২০টি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের একটি ফোরাম যা স্নায়ু যুদ্ধের প্রাক্কালে বড় দুই পরামক্তির ব্লকের সাথে বা বিপক্ষে না থাকার প্রতিশ্রুতি নিয়ে গঠিত হয়। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন মূলত স্নায়ুযুদ্ধের সময় গঠিত হয়েছিল। তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রপতি জোসিপ ব্রোজ টিটোর উদ্যোগে রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে নিজেদের অন্তর্ভুক্তি করার চেষ্টা করেনি, চেষ্টা করেছিল স্বাধীন বা নিরপেক্ষ থাকার। ১৯৫৫ সালে সর্বপ্রথম ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়া-আফ্রিকা বান্দুং কনফারেন্সে আলোচনার সময় এই জোটের মূল ধারণাটি উদ্ভূত হয়েছিল।
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম) হচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর স্বার্থ এবং আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য গঠিত হয়। বর্তমানে, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের ১২০টি সদস্য রাষ্ট্র, ১৭টি পর্যবেক্ষক দেশ এবং ১০টি পর্যবেক্ষক সংস্থা রয়েছে।
ন্যামের প্রথম মহাসচিব ছিলেন তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রপতি জোসিপ ব্রোজ টিটো। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৬১ সালে বেলগ্রেড সম্মেলনের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ন্যামের এর পূর্ণরুপ হচ্ছে Non-Aligned Movement (NAM)

ন্যাম প্রতিষ্ঠার পটভূমি

ওয়ারশ চুক্তির অন্তর্গত সোভিয়েত-পন্থী কমিউনিস্ট দেশ এবং ন্যাটোভুক্ত আমেরিকান-পন্থী পুঁজিবাদী দেশগুলোর মধ্যে শীতল যুদ্ধের মেরুকৃত বিশ্ব এড়াতে কিছু দেশের প্রচেষ্টা হিসাবে ১৯৫০-এর দশকে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্ভব হয়েছিল।
১৯৫৫ সালে বান্দুং সম্মেলনে সম্মত নীতির উপর ভিত্তি করে, ১৯৬১ সালে যুগোস্লাভিয়ার বেলগ্রেডে যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রপতি জোসিপ ব্রোজ টিটো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, মিশরের রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের, ঘানার রাষ্ট্রপতি কোয়ামে নক্রুম, এবং ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি আহমেদ সুকার্নোর উদ্যোগে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়। ‘‘জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন’’ শব্দটি প্রথম ১৯৭৬ সালে পঞ্চম সম্মেলনে আবির্ভূত হয়, যেখানে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলোকে “আন্দোলনের সদস্য” হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, দুই পরাশক্তির উপনিবেশবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদের প্রেক্ষাপটে আবির্ভূত হয়। ১৯৫৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার শহর বান্দুং কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ, যারা সম্প্রতি স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তারা বড় শক্তিগুলোর যে কোনও বিশেষ স্বার্থের জন্য সম্মিলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যবহার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়।
স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, তারা যুক্তি দিয়েছিল যে, পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের যেকোন একটির সাথে মিত্রতা করা থেকে বিরত থাকা এবং পরিবর্তে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের সমর্থনে সকলে একত্রিত হওয়া উচিত।
উদ্দেশ্য
১৯৭৯ সালের হাভানা ঘোষণায় ফিদেল কাস্ত্রো সংগঠনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন যে, ‘‘সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতা, নব্য-ঔপনিবেশিকতাবাদ, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জোটনিরপেক্ষ দেশগুলোর জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেইসাথে সব ধরনের বিদেশী আগ্রাসন, দখলদারিত্ব, আধিপত্য, এবং হস্তক্ষেপের পাশাপাশি পরাশক্তি এবং ব্লক রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের দেশগুলো জাতিসংঘের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ প্রতিনিধিত্ব করে।
অর্জন
ন্যাম আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ছিল, এটি শীতল যুদ্ধ এবং সামরিকবাদের সময় বিশ্ব শান্তির জন্য একটি সক্রিয় আন্তর্জাতিক সংগ্রামের সূচনা করেছিল। এটি কিছু আঞ্চলিক সংঘাত প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের দিকেও প্রচেষ্টা চালিয়েছে।