নির্বাচন কমিশনের গঠন ও কার্যাবলী

নির্বাচন কমিশনের গঠন

নির্বাচন কমিশন (ইসি) একটি সাংবিধানিক সংস্থা যা মূলত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং ভোটকেন্দ্র পরিচালনা, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, নির্বাচনকালীন সময়ে কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি নির্বাচন পরিচালনার আওতাভুক্ত অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য প্রধানত দায়ী। জনসচেতনতা প্রচার ও প্রস্তুতি, নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা ও প্রকাশ। এছাড়া নির্বাচনী বিরোধ ও অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করে ইসি।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা যা বাংলাদেশে নির্বাচনী আইনের আইনি কার্য পরিচালনা করে। বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ সং অনুচ্ছেদ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদত্ত অনুমতিতে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে সহকারী নির্বাচন কমিশনারদের সমন্বয়ে কমিশন গঠনের অনুমতি দেয়।
সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের জন্য ১ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার সমন্বয়ে একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ (যদি থাকে) ) রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রণীত কোন আইনের বিধান সাপেক্ষে, সেই পক্ষে প্রণীত হইবে।”
২০২২ সাল থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। তার নেতৃত্বে রয়েছে আরো ৪ জন নির্বাচন কমিশনার। একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, একজন সচিব এবং অন্যন্য চার জন কমিশনারসহ মোট ৬ জন নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে।
১. প্রধান নির্বাচন কমিশনার –কাজী হাবিবুল আউয়াল
২. নির্বাচন কমিশনার – মোঃ আলমগীর
৩. নির্বাচন কমিশনার – আনিছুর রহমান
৪. নির্বাচন কমিশনার – বেগম রাশিদা সুলতানা
৫. নির্বাচন কমিশনার – ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান
৬. সচিব – মোঃ হুমায়ুন কবির খোন্দকার
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার আগারগাঁও-এ অবস্থিত। সচিবালয়ের প্রধান থাকেন সরকারের একজন সচিব। বর্তমানে সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন হুমায়ুন কবির খোন্দকার।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অধীনে ৬টি বিভাগীয় সদর এবং ৩টি জেলায় মোট ৯জন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা থাকেন। এছাড়া ৬৪টি জেলা সদরে মোট ৮৩টি জেলা নির্বাচন কার্যালয় রয়েছে। এর প্রতিটি’র নেতৃত্বে রয়েছেন একজন করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
সচিবালয়
 
কেন্দ্রীয়
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯ অনুযায়ী বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব সচিবালয় রয়েছে, যার নেতৃত্বে থাকবে একজন সচিব। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার আগারগাঁও-এ অবস্থিত। সচিবালয়ের প্রধান থাকেন সরকারের একজন সচিব। বর্তমানে সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন হুমায়ুন কবির খোন্দকার।
আঞ্চলিক বা বিভাগীয় 
৭টি বিভাগীয় সদর দপ্তর এবং ৩টি অন্যান্য জেলায় নির্বাচনী অফিস রয়েছে। বিভাগীয় কার্যালয়গুলোর কাজ হল নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং অধীনস্থ মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়ের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখা এবং সমস্ত ধরণের নির্বাচন পরিচালনা, নতুন নিবন্ধন এবং ভোটার তালিকার পর্যায়ক্রমিক হালনাগাদ এবং নির্বাচনী প্রস্তুতি সংক্রান্ত কাজের সমন্বয় করা।
জেলা অফিস
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ৬৪টি জেলা সদরের মধ্যে ৮৩টি জেলা নির্বাচন অফিস রয়েছে। তারা ভোটারদের নিবন্ধন, ভোটার তালিকা মুদ্রণ, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন পরিচালনা, ভোটগ্রহণ কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং নির্বাচনের সমস্ত লজিস্টিক ব্যবস্থা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ সম্পাদন করে। নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা হিসাবে, জেলা নির্বাচন অফিসার রিটার্নিং অফিসার এবং ভোটগ্রহণ কর্মীদের ফর্ম, প্যাকেট, ম্যানুয়াল, নির্দেশাবলী এবং ব্যালট বাক্স, ভোটার তালিকা এবং ব্যালট পেপার সরবরাহের জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা প্রদান করেন এবং খরচের সমস্ত হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
উপ-জেলা অফিস
মাঠ সংস্থার সর্বনিম্ন স্তরে, প্রতিটি উপজেলা/থানায় উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তা রয়েছেন। উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রধান কাজ হলো বিভাগীয়/জেলা অফিসগুলোকে নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যাবলী সম্পাদনে সহায়তা করা।

নির্বাচন কমিশনের কার্যাবলী

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অভিভাবক
এটি সরকারী নির্বাচন (সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় নির্বাচন) পাশাপাশি সারা বাংলাদেশে গণভোট আয়োজন করে। ১৯৭২ সালের সংবিধান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচনী প্রক্রিয়া পরিচালনা, তত্ত্বাবধান এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন
এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত একটি আইন ২০০৮ সালে প্রণীত হয় এবং বেশ কয়েকটি দল কমিশনে নিবন্ধিত হয়। এটি ভোটারদের বিভ্রান্তি এড়াতে সহায়তা করে। এটি নিশ্চিত করে যে রাজনৈতিক দলগুলো শুধুমাত্র তাদের নিবন্ধনের মাধ্যমে গণতন্ত্র অনুশীলন করতে পারে। সব রাজনৈতিক দলের অর্থ ও দাতা তালিকা তদন্ত করার ক্ষমতা কমিশনের রয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা
কমিশন নির্বাচকমণ্ডলীতে ভোটদানের প্রবণতাকে প্রভাবিত না করার জন্য জনমত জরিপ বা এক্সিট পোলের ফলাফল প্রকাশ ও প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে।
আধা-বিচারিক ক্ষমতা
যারা ঘুষ, দুর্নীতি, ভোট কেনা বা ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে নির্বাচনী আইনে আপোষ করে তাদের তদন্ত ও অভিযুক্ত করার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে কমিশনের আধা-আইনগত ক্ষমতা রয়েছে।
জন্ম নিবন্ধন প্রোগ্রাম
নির্বাচন কমিশনের অন্যতম কাজ হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন কাজ সুচারুভাবে সম্পাদিত করা। এর জন্য সঠিকভাবে তথ্য যাচাই-বাছাই করে জন্ম নিবন্ধন করা উচিত।
ভোটার নিবন্ধন
রাষ্ট্রের কোন নাগরিক যখন ১৮ বছর বয়স হবে তখন তাকে ভোটার করা নির্বাচন কমিশনের অন্যতম দায়িত্ব।
স্মার্টকার্ড বিতরণ
একটি দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার পেতে হলে তাকে অবশ্যই একটি স্মাটকার্ড এর অধিকারী হতে হবে। এর জন্য নির্বাচন কমিশন কোন ব্যক্তির ভোটার হওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্মাটকার্ড প্রদান করতে হবে।
সারাদেশে নির্বাচন পরিচালনা
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নির্বাচন অন্যতম অপরিহার্য বিষয়। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হল সংবিধান ও আইন দ্বারা স্বীকৃত বিধান অনুসারে সারাদেশে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা।
নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ
কমিশনের সদস্যদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হল নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা। সঠিকভাবে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে নির্বাচিত প্রতিনিধি সিলেক্ট করা।

Similar Posts