অপরাধ একটি প্রকাশ্য অন্যায়। এটি এমন কাজ যা রাষ্ট্রের আইন লঙ্ঘন করে এবং যা সমাজ দ্বারা দৃঢ়ভাবে অস্বীকৃত হয়। খুন, ডাকাতি, চুরি, ধর্ষণ, দুর্নীতি, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং কর দিতে ব্যর্থতা ইত্যাদি অপরাধের উদাহরণ।
অপরাধ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ “crimen” থেকে এসেছে যার অর্থ অপরাধ। অপরাধকে অসামাজিক আচরণ হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রতিটি সমাজ অপরাধকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞায়িত করতে পারে। একটি অপরাধ আইনগত বা অবৈধ হতে পারে। বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হল প্রশাসনের কোনো নিয়ম বা রাষ্ট্রের আইনের লঙ্ঘন বা ফৌজদারি আইনে প্রদত্ত কোনো অন্যায় এবং তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষতিকারক আচরণ ইত্যাদি। তবে আত্মরক্ষার স্বার্থে সংগঠিত অপরাধ আইনগত এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়।
অপরাধকে আইন দ্বারা নিষিদ্ধ কাজ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যেগুলি কারাদণ্ড বা জরিমানা দ্বারা দণ্ডিত হতে পারে।
রাষ্ট্রের আইনের পরিপন্থী কোনো কাজকে অপরাধ বলে।
অপরাধ একটি ইচ্ছাকৃত কাজ যা শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করে, সম্পত্তির ক্ষতি করে এবং যা আইনের পরিপন্থী।
এমন কোন কাজ করা যা রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত ও বলবৎকৃত বিধি-নিষেধের পরিপন্থী এবং দন্ডনীয়, অর্থাৎ অমান্য করলে শাস্তির বিধান আছে তাই হল অপরাধ।
ব্রিটানিকার মতে, অপরাধ হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কাজ করা যা সাধারণত সামাজিকভাবে ক্ষতিকর বা বিপজ্জনক বলে গণ্য করা হয় এবং ফৌজদারি আইনের অধীনে বিশেষভাবে সংজ্ঞায়িত, নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য।
এনসাইক্লোপিডিয়া মতে, অপরাধ হলো আইন দ্বারা নির্ধারিত এবং শাস্তি সাপেক্ষে একটি কাজ।
বিভিন্ন ধরণের অপরাদের মধে রয়েছে। যেমন,
১. ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ: ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধকে ব্যক্তিগত অপরাধও বলা হয়, যার মধ্যে খুন, আক্রমণ, ধর্ষণ এবং ডাকাতি অন্তর্ভুক্ত।
২. সম্পত্তির বিরুদ্ধে অপরাধ: সম্পত্তির অপরাধে শারীরিক ক্ষতি ছাড়াই সম্পত্তির চুরি জড়িত থাকে, যেমন চুরি, লুটপাট, ছিনতাই এবং অগ্নিসংযোগ।
৩. ঘৃণামূলক অপরাধ: ঘৃণামূলক অপরাধ হল ব্যক্তি বা সম্পত্তির বিরুদ্ধে অপরাধ যা জাতি, লিঙ্গ, ধর্ম, অক্ষমতা, যৌন অভিমুখীতা বা জাতিগত কারণে সংঘটিত হয়।
৪. নৈতিকতার বিরুদ্ধে অপরাধ: নৈতিকতার বিরুদ্ধে অপরাধকে নির্যাতিত অপরাধও বলা হয় কারণ অভিযোগকারী নেই। পতিতাবৃত্তি, অবৈধ জুয়া, এবং অবৈধ মাদক ব্যবহার সবই শিকারহীন অপরাধের উদাহরণ।
৫. ভদ্রবেশী অপরাধ (White-collar crime): সাধারণত ‘ভদ্রলোকেরা’ যে অপরাধ করে তাকে ভদ্রবেশী অপরাধ বলে। শিক্ষিত, পেশাজীবী এবং সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গই এ ধরনের অপরাধের সাথে যুক্ত থাকেন। দায়িত্বে অবহেলা, কাজে ফাঁকি, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, আয়কর ফাঁকি, জালিয়াতি, প্রতারণা, তহবিল তছরূপ, মিথ্যা সাক্ষ্যদান, পাণ্ডুলিপি চুরি বা নকল করা ইত্যাদি ভদ্রবেশী অপরাধ বলে পরিগণিত।
৬. সাইবার ক্রাইম: সাইবার ক্রাইম শব্দটি অনলাইনে সংগঠিত বিভিন্ন ধরনের অপরাধকে বোঝায়। সাইবার ক্রাইম শব্দটি কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, ইন্টারনেট-সক্ষম টেলিভিশন, গেমস কনসোল এবং স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইনে সম্পাদিত বিভিন্ন অপরাধকে বোঝায়।
৭. সন্ত্রাসবাদ: আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিত এবং সাধারণভাবে জনসাধারণের মধ্যে ভয় বা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করার জন্য সংগঠিত অপরাধকে সন্ত্রাসবাদ বলে।
অপরাধের উপাদানগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত করা যেতে পারে, যা প্রসিকিউশনকে অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের বাইরে প্রমাণ করতে হবে। প্রতিটি অপরাধের অন্তত তিনটি উপাদান থাকে যেমন, অপরাধমূলক কাজ, যাকে অ্যাক্টাস রিউসও বলা হয়; অপরাধমূলক অভিপ্রায়, যাকে মেনস রিয়াও বলা হয়; এবং সহঘটন বা অপরাধমূলক অভিপ্রায় এবং অপরাধমূলক কাজের সহাবস্থান।
১.অ্যাক্টাস রিউস (অপরাধীর ক্রিয়া/আচার)
Actus Reus একটি অপরাধ করার প্রকৃত কাজকে বোঝায়। কোনো আইন চিন্তা বা পরিকল্পনাকে অপরাধমূলক কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না; তাই, কোনো কিছুকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার জন্য, এমন একটি কাজ (অর্থাৎ, আচরণ) থাকতে হবে যা নির্দিষ্ট এখতিয়ারে একটি অপরাধ গঠন করে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ ব্যাঙ্ক ডাকাতির পরিকল্পনা করে, তবে তারা এখনও অপরাধ করেনি (যেহেতু কোনো কাজ হয়নি)। যদি তারা বন্দুক নিয়ে ব্যাঙ্কে প্রবেশ করে এবং ব্যাংকারের কাছ থেকে টাকা দাবি করে, তাহলে এটি অ্যাক্টাস রিউস গঠন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগ আনা হতে পারে।
২.মেনস রিয়া (অপরাধীর অভিপ্রায়)
Mens rea শব্দটি ল্যাটিন যার অর্থ হল “guilty mind” বা অপরাধ অভিপ্রায়। এই উপাদানটি অপরাধ করার সময় অপরাধীর মানসিক অবস্থাকে নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ কাউকে হত্যার দোষী সাব্যস্ত করার জন্য, প্রসিকিউটরদের আসামী অপরাধ করার পাশাপাশি তারা তা করতে চেয়েছিল কি-না সেটাও প্রমাণ করতে হবে। কারণ হয়তো আসামীর অপরাধ অভিপ্রায় ছিল না, বা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত ছিল না। তবে এতেও তাদের দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে (যেমন, অনৈচ্ছিক হত্যাকাণ্ড), তবে শাস্তি সম্ভবত ততটা কঠোর হবে না।
৩.সহঘটন (CONCURRENCE)
সহঘটন বলতে অপরাধমূলক অভিপ্রায় এবং অপরাধমূলক কাজের সহাবস্থানকে বোঝায়।অর্থাৎ আসামীর অপরাধ অভিপ্রায় ও অপরাধ করার প্রকৃত কাজ একই সাথে হলে এটিকে সহঘটন বলে। যদি প্রমাণ থাকে যে মেনস রিএ অ্যাক্টাস রিউসের আগে বা একই সময়ে ঘটেছে, তাহলে অপরাধ গঠন হবে।
৪. কার্যকারণ (ক্ষতি) (Causation)
এই অপরাধের উপাদানটি আঘাত, ক্ষতি বা ক্ষতির সাথে আইনের সংযোগকে বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ একটি কফি শপে গিয়ে কাউকে গুলি করে কিন্তু গুলি মিস করে, তবে তাদের হত্যার চেষ্টার অভিযোগ আনা যেতে পারে কারণ গুলিটি ইচ্ছাকৃত ছিল (অ্যাক্টাস রিউস) এবং তাদের ক্রিয়াকলাপ (কার্যকারণ) দ্বারা সৃষ্ট।