দৈনন্দিন জীবনে প্রতিসরণ একটি নিয়মিত ঘটনা। আপনি প্রায়শ দেখবেন যে জগভর্তি পানিতে কিছু একটা রাখলে তা বেকে যায়। এটি আলোর প্রতিরণের কারণে এমন দেখায়। এছাড়া প্রতিসরণের কারণে আকাশে রংধনু দেখা যায়, মরুভূমিতে মরীচিকার সৃষ্টি হয়, এবং হীরক খন্ডকে উজ্বল দেখায়। নিম্মে প্রতিসরণ কি, এর সংজ্ঞা, সূত্র ও ব্যবহার উদাহরণসহ বিস্তারিত বর্ণনা করা হল।
আলোর প্রতিসরণ কি?
আলোকরশ্মি এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে যাওয়ার সময় মাধ্যমদ্বয়ের বিভেদ তলে তির্যকভাবে আপতিত আলোকরশ্মির দিক পরিবর্তিত হয়। আলোক রশ্মির দিক পরিবর্তনের এই ঘটনাকে আলোর প্রতিসরণ (Refraction of light) বলে।
অর্থাৎ আলোক রশ্মি এক মাধ্যম থেকে ভিন্ন আরেকটি মাধ্যমে যাওয়ার সময় আপতিত রশ্মি বিভেদতলে বেঁকে যাওয়ার ঘটনাকে আলোর প্রতিসরণ বলে। দুটি পদার্থের মধ্যে ঘনত্বের পার্থক্যের কারণে এমন ঘটে।
আলোকরশ্মি 0° ও 90° ব্যতিত অন্য যেকোনো কোণে মাধ্যমদ্বয়ের ঘনত্বের পার্থক্যের কারণে বিভেদতলে বেকে যায়। আলোকরশ্মি বিভেদ তলের যে বিন্দুতে আপতিত হয়ে দ্বিতীয় মাধ্যমে প্রবেশ করে সে বিন্দুকে আপতন বিন্দু বলে। আবার, আপতন বিন্দুতে বিভেদ তলের উপর অঙ্কিত লম্বকে অভিলম্ব বলে।
আলো যদি হালকা মাধ্যম (যেমন বায়ু) থেকে ঘন মাধ্যমে (যেমন পানি) প্রবেশ করে, তখন আলোক রশ্মি বিভেদতল হতে অভিলম্বের দিকে বেঁকে যায়। আবার যদি আলো ঘন হতে হালকা মাধ্যমে আপতিত হয়, তখন আলো বিভেদ তল হতে অভিলম্ব থেকে দূরে সরে আসে।
চিত্রে A মাধ্যম থেকে B মাধ্যমে আলোকরশ্মি আপতিত হচ্ছে যেখানে, AB আপতিত রশ্মি, BC’ প্রতিসরিত রশ্মি, NBN’ অভিলম্ব, ABN আপতন কোণ এবং N’BC প্রতিসরণ কোণ।
আলোর প্রতিসরণের কারণ
দুটি পদার্থের মধ্যে ঘনত্বের পার্থক্যের কারণে আলোর প্রতিসরণ হয়। আলোক রশ্মির গতির পরিবর্তনের ফলে দিক পরিবর্তন হয়।
যখন আলো রশ্মি বাতাস থেকে কাঁচে যায়, তখন আলোর গতি কমে যায় এবং কিছুটা দিক পরিবর্তন হয়। যখন আলো কম ঘন পদার্থ থেকে বেশি ঘন পদার্থে যায়, তখন প্রতিসৃত আলো স্বাভাবিক রেখার দিকে বেশি বেঁকে যায়।
আলোর প্রতিসরণের সূত্র
এক মাধ্যম থেকে অন্য কোন সমসত্ত্ব মাধ্যমে প্রতিসৃত হওয়ার সময় আলোক রশ্মি দুটি সূত্র মেনে চলে। যেমন,
প্রথম সূত্র
আপতিত রশ্মি, প্রতিসৃত রশ্মি এবং মাধ্যমদ্বয়ের বিভেদ তলের উপর আপতন বিন্দুতে অঙ্কিত অভিলম্ব একই সমতলে অবস্থান করে।
দ্বিতীয় সূত্র
দুটি নির্দিষ্ট মাধ্যম এবং একটি নির্দিষ্ট রঙের আলোর সাপেক্ষে আপতন কোণের সাইন এবং প্রতিসরণ কোণের সাইনের অনুপাত সর্বদা ধ্রুবক হয়।
আলোর প্রতিসরণের উদাহরণ
- আলোর প্রতিসরণের কারণে রাতের আকাশে তারাগুলো মিটমিট করে।
- মরীচিকা, আলোর প্রতিসরণ দ্বারা সৃষ্ট অপটিক্যাল বিভ্রমের কারণে ঘটে।
- আলোর প্রতিসরণের কারণে আকাশে রংধনু এবং রামধনু তৈরি হয়। কারণ সূর্যের রশ্মি বৃষ্টির ফোঁটার মধ্য দিয়ে বেঁকে যায় ফলে রংধনু সৃষ্টি হয়।
- একটি সুইমিং পুল সর্বদা এটির গভীরতার চেয়ে অগভীর দেখায় কারণ পুলের নীচ থেকে আসা আলো আলোর প্রতিসরণের কারণে পৃষ্ঠে বাঁকে। ফলে সুইমিং পুলকে অগভীর মনে হয়।
- সাদা আলো যখন প্রিজমের মধ্য দিয়ে যায়, তখন আলোর প্রতিসরণের কারণে এটি লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল এবং বেগুনি রঙে বিভক্ত হয়।
- যখন একটি পেন্সিল অর্ধ-ভরা গ্লাস পানিতে রাখা হয়, তখন পানির উপরে পেন্সিলটি স্বাভাবিক দেখায়, কিন্তু পানির নিচে এটি বাঁকানো এবং কিছুটা বড় দেখায়। এটি প্রতিসরণের কারণে হয়।