ক্ষারক কি? সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার

ক্ষারক কি?

ক্ষারক (Base) এক শ্রেণির রাসায়নিক যৌগ যা হাইড্রোজেন আয়ন গ্রহণ করতে সক্ষম।অর্থাৎ, যে সকল যৌগ পানিতে হাইড্রোক্সাইড আয়ন (OH-) প্রদান করে, সে সকল যৌগকে ক্ষারক বলে। যেমন, Ca(OH)2 একটি ক্ষারক। কারণ, এটি জলীয় দ্রবণে হাইড্রোক্সাইড আয়ন (OH-) প্রদান করে।
রসায়নে, ক্ষারক হল একটি রাসায়নিক পদার্থ যা স্পর্শে পিচ্ছিল, স্বাদ তিক্ত এবং লিটমাস পেপারের মতো সূচকগুলির রঙ পরিবর্তন করে। ক্ষারক এমন একটি পদার্থ যা এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি তৈরি করে।
রসায়নে ক্ষারক শব্দের তিনটি ভিন্ন সংজ্ঞা রয়েছে এবং সেগুলো হল আরহেনিয়াস ক্ষারক, ব্রনস্টেড ক্ষারক এবং লুইস ক্ষারক।
আরহেনিয়াস ক্ষারক
আরহেনিয়াস ক্ষারক সংজ্ঞায়, ক্ষারককে একটি পদার্থ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে যা জলীয় দ্রবণে বিচ্ছিন্ন হয়ে হাইড্রক্সাইড আয়ন OH- গঠন করে। এই হাইড্রোক্সাইড আয়নগুলো হাইড্রোজেন আয়নের সাথে বিক্রিয়া করে একটি অ্যাসিড-ক্ষারক দ্রবণে পানি তৈরি করে।
ব্রনস্টেড ক্ষারক
ব্রনস্টেড ক্ষারক সংজ্ঞায়, ক্ষারককে একটি পদার্থ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে যা প্রোটন গ্রহণ করতে পারে। ব্রনস্টেডের মতে, এই পদার্থগুলো যেগুলো প্রোটন গ্রহণ করে তাতে হাইড্রক্সাইড আয়ন থাকে না, তবে এটি হাইড্রক্সাইড আয়নের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য জলের সাথে বিক্রিয়া করে।
লুইস ক্ষারক
লুইসের সংজ্ঞা ক্ষারককে উচ্চ-শক্তির একজোড়া ইলেকট্রন সহ একটি অণু হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে যা এসিডকে একজোড়া ননবন্ডিং ইলেক্ট্রন দান করে।
ক্ষারকের উদাহরণগুলোর মধ্যে রয়েছে হাইড্রক্সাইড এবং সাবান। শক্তিশালী ক্ষারকের মধ্যে রয়েছে সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH) এবং পটাসিয়াম হাইড্রক্সাইড (KOH), সিলিকন ডাই অক্সাইড (SiO2), লিথিয়াম হাইড্রক্সাইড (LiOH) এবং সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH)।

ক্ষারকের বৈশিষ্ট্য

নিম্মে ক্ষারকের বৈশিষ্ট্যসমূহ দেওয়া হলো—
  • ক্ষারক তিক্ত গন্ধযুক্ত বা স্বাদহীন।
  • ক্ষারক লিটমাস পেপারে নীল, মিথাইলে কমলা হলুদ এবং ফেনোলফথালিনে গোলাপী হয়।
  • ক্ষারকের pH মান 7-এর বেশি।
  • এটি এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে লবণ এবং পানি তৈরি করে।
  • এটি হাইড্রোজেন আয়ন (H+) গ্রহণ করে এবং হাইড্রোক্সাইড আয়ন (OH-) দান করে।
  • অধিকাংশ ক্ষারক পানিতে অদ্রবনীয়। যেমন Fe(OH)2, CaO
  • জলীয় ক্ষারক হল ইলেক্ট্রোলাইট। এটি বিদ্যুৎ প্রবাহ করে।
  • এটি অ্যাসিড এবং জৈব পদার্থের সাথে জোরালোভাবে বিক্রিয়া করে।
  • ক্ষারকের দ্রবণ সাবান পানির ন্যায় পিচ্ছিল।
  • কিছু ক্ষারক পানিতে দ্রবীভূত হয়, তাদেরকে ক্ষার বলে। যেমন, (NaOH), (KOH)।
  • ক্ষারক প্রোটন গ্রহণ করে।
  • কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অনুঘটন হিসেবে কাজ করে।

ক্ষারকের ব্যবহার

দৈনন্দিন জীবনে ক্ষারকের অনেক ব্যবহার আছে। যেমন,
  • বাসাবাড়িতে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা কস্টিক সোডা (NaOH) টয়লেট ক্লিনার হিসেবে  ব্যবহৃত হয়।
  • পোকামাকড় দমনে ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর তৈরি পেস্ট (মিল্ক অফ লাইম) ব্যবহৃত হয়।
  • বেকিং সোডা, সোডিয়াম বাইকার্বোনেট (NaHCO3) নামেও পরিচিত। এটির pH প্রায় 8.3 এবং দাঁত সাদা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • পাকস্থলীর এসিডিটি নিরাময়ে ব্যবহৃত এন্টাসিড ঔষধ মূলত ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড Mg (OH2)।
  • অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড কাঁচ পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড {Ca(OH)2} পান খাওয়ার চুন বা দেওয়ালের চুনকাম করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • পটাসিয়াম হাইড্রক্সাইড (KOH) সাবান তৈরিতে; ব্যাটারি ইলেক্ট্রোলাইট হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হয়।
  • অ্যামোনিয়া (NH3)- নাইলন, নাইট্রিক অ্যাসিড, সার তৈরি করা; পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • জিঙ্ক হাইড্রোক্সাইড (Zn(OH)2- কীটনাশক এবং রঙ্গক তৈরি করে।
  • ব্লিচ যা সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট (NaOCl) নামেও পরিচিত। ব্লিচ জীবাণুমুক্তকারী এবং দাগ অপসারণকারী হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
  • চুন হল ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড (Ca(OH)2) এর সাধারণ নাম। এটি মাটিতে এসিড নিরপেক্ষ করতে এবং পিএইচ বাড়াতে ব্যবহার করা হয়।