সমাসবদ্ধ পদ গঠনের পরও যে সমস্ত সমাসে , পূর্বপদের বিভক্তিচিহ্নের কোনো লোপ ঘটে না, তাকে অলোপ বা অলুক সমাস বলে |
আরও পড়ুন : তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?
লুক’ কথার অর্থ হল ‘লোপ’
যেমন–
মনের মানুষ = মনের মানুষ ( বিভক্তির লোপ হয়নি ) |
অলোপ বা অলুক সমাস প্রকারভেদ
ক) অলুক দ্বন্দ্ব সমাস
উদাহরণ :-
- হাটে ও বাজারে = হাটেবাজারে
- বনে ও জঙ্গলে = বনেজঙ্গলে
- চোখে ও মুখে = চোখেমুখে
- আগে ও পিছে = আগেপিছে
খ) অলুক তৎপুরুষ সমাস
অ) অলুক করণ তৎপুরুষ সমাস
উদাহরণ :-
- হাতে কাটা = হাতেকাটা
- কলে ছাঁটা = কলেছাঁটা
আ) অলুক নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস
উদাহরণ :-
- ভুলের (ভুলের জন্য) মাশুল = ভুলের মাশুল
- পেটের (পেটের জন্য) খোরাক = পেটের খোরাক
ই) অলুক অপাদান তৎপুরুষ সমাস
উদাহরণ :-
- বিদেশ থেকে আনা = বিদেশ থেকে আনা ( বিভক্তিস্থানীয় অনুসর্গ ‘থেকে’ অলুপ্ত থেকেছে )
- চোখের (চোখের থেকে) জল = চোখের জল
ঈ) অলুক অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস
উদাহরণ :–
- দিনে ডাকাতি = দিনেডাকাতি
- অঙ্কে কাঁচা = অঙ্কেকাঁচা
উ) অলুক সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস
উদাহরণ :–
- চোখের বালি = চোখের বালি
- মামার বাড়ি = মামার বাড়ি
ঊ) অলুক উপপদ তৎপুরুষ সমাস
উদাহরণ :–
- অন্তে বাস করে যে = অন্তেবাসী
- কলেজে পড়ে যে = কলেজেপড়া
গ) অলুক বহুব্রীহি সমাস
উদাহরণ :–
- গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুস্থানে = গায়েহলুদ
- হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = হাতেখড়ি
- মুখে ভাত দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = মুখেভাত
এই সমাসকে ‘অনুষ্ঠানবাচক বহুব্রীহি সমাস বলে
নিত্য সমাস
যে সমাসে সমস্যমান পদগুলি নিত্য বা সর্বদাই সমাসবদ্ধ থাকে, কোনো ব্যাসবাক্য হয় না বা ব্যাসবাক্য করতে গেলে অন্য পদের প্রয়োজন হয় ,তাকে নিত্য সমাস বলে |
যেমন–
- কাঁচা কলা = কাঁচকলা
এখানে ‘কাঁচকলা’ নিত্যসমাস, কারণ ‘কাঁচকলা’ একটি বিশেষ ধরণের কলা বোঝায় | তাই এর ব্যাসবাক্য কখনই ‘কাঁচা যে কলা’ হবে না |
অ) সর্বদাই সমাসবদ্ধ এমন নিত্যসমাস
উদাহরণ :–
- কৃষ্ণসর্প= কৃষ্ণসর্প
- দাঁড়কাক = দাঁড়কাক
আ) ‘অন্য’ যোগে নিত্য সমাস
উদাহরণ :–
- অন্য মত = মতান্তর
- অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর
ই) ‘কেবল’ বা ‘শুধু’ যোগে নিত্য সমাস
উদাহরণ :–
- কেবল শোনা = শোনামাত্র
- শুধু চিহ্ন =চিহ্নমাত্র
ঈ) ‘তুল্য’ যোগে নিত্য সমাস
উদাহরণ :–
- বজ্রের তুল্য = বজ্রসন্নিভ
- জবা কুসুমের তুল্য = জবাকুসুমসঙ্কাশ
বাক্যাশ্রয়ী সমাসকোনো বাক্য বা বাক্যখণ্ড কে সুসংহতরূপে একটি শব্দে পরিণত করে, তাকে বিশেষ্য / বিশেষণের রূপ দিলে অথবা কোনো সমাসবদ্ধ পদকে আশ্রয় করে, একটি বাক্যের অর্থ প্রকাশ পেলে , তাকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলে |
উদাহরণ :—
গল্পকে বলা (কর্ম তৎপুরুষ), তার প্রতিযোগিতা (সম্বন্ধ তৎপুরুষ) = গল্পবলা-প্রতিযোগিতা
সবুজকে বাঁচাও (কর্ম তৎপুরুষ) , তার জন্য কমিটি (নিমিত্ত তৎপুরুষ) = সবুজ-বাঁচাও-কমিটি