ধ্বনি কাকে বলে ?
কোনো ভাষার উচ্চারিত শব্দকে বিশ্লেষণ করলে যে উপাদানসমূহ পাওয়া যায় সেগুলোকে পৃথকভাবে ধ্বনি বলে।
ধ্বনি কত প্রকার ও কি কি ?
বাংলা ভাষায় ব্যবহূত ধ্বনিগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয় :
- স্বরধ্বনি
- ব্যঞ্জনধ্বনি।
স্বরধ্বনি কাকে বলে ?
যে ধ্বনি অন্য ধ্বনির সাহায্য ছাড়া নিজেই সম্পূর্ণভাবে উচ্চারিত হয় এবং যাকে আশ্রয় করে অন্য ধ্বনির সৃজন হয়, তাকে স্বরধ্বনি বলে।
স্বরধ্বনি কয়টি এবং কি কি ?
বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি সাতটি। যথা অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা।
স্বরধ্বনি কত প্রকার এবং কি কি ?
স্বরধ্বনি আবার ৩ প্রকার।যথা-
- হ্রস্বস্বর
- দীর্ঘস্বর
- দ্বৈতস্বর বা যৌগিক স্বর
হ্রস্বস্বর কাকে বলে ?
যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের কম সময় লাগে তাদেরকে হ্রস্বস্বর বলা হয়। হ্রস্বস্বর ৪ টি। যথা- অ, ই, উ,ঋ।
দীর্ঘস্বর কাকে বলে ?
যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগে তাদেরকে দীর্ঘস্বর বলা হয়। দীর্ঘস্বর ৫ টি। যথাঃ আ,ঈ,ঊ,এ,ও।
দ্বৈতস্বর বা যৌগিক স্বর কাকে বলে ?
স্বরধ্বনির সম্মিলিত রূপকে দ্বৈতস্বর বা যৌগিক স্বর বলা হয়। যেমন – ঐ (অ+ই), ঔ (অ+উ)।
ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে ?
যে ধ্বনি স্বরধ্বনির সাহায্য ছাড়া স্পষ্টরূপে উচ্চারিত হতে পারে না এবং যে ধ্বনি সাধারণত অন্য ধ্বনিকে আশ্রয় করে উচ্চারিত হয়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।
ব্যঞ্জনধ্বনি কত প্রকার ও কি কি ?
ব্যঞ্জনধ্বনি ৪ প্রকার। যথা –
- স্পর্শ ধ্বনি বা স্পর্শ বর্ণ
- আনুনাসিক বা নাসিক্য বর্ণ
- উষ্ম ধ্বনি বা উষ্ম বর্ণ
- অন্তঃস্থ ধ্বনি বা অন্তঃস্থ বর্ণ
ক – বর্গীয় ধ্বনি কাকে বলে ?
ক,খ,গ,ঘ,ঙ এই ৫ টি ধ্বনিকে ক বর্গীয় ধ্বনি বলে। এগুলো উচ্চারণের সময় জিহ্বার নরম তালু স্পর্শ করে উচ্চারিত হয় বলে এগুলোকে জিহ্বামূলীয় বা কন্ঠ্য স্পর্শ ধ্বনি বলা হয়।
চ – বর্গীয় ধ্বনি কাকে বলে ?
চ,ছ,জ,ঝ,ঞ এই ৫ টি ধ্বনিকে চ বর্গীয় ধ্বনি বলে। এগুলো উচ্চারণের সময় জিহ্বার অগ্রভাগ চ্যাপ্টাভাবে তালুর সম্মুখভাগের সাথে ঘর্ষণ করে উচ্চারিত হয় বলে এগুলোকে তালব্য স্পর্শধ্বনি বলা হয়।
ট – বর্গীয় ধ্বনি কাকে বলে ?
ট, ঠ, ড,ঢ,ণ এই ৫ টি ধ্বনিকে ট বর্গীয় ধ্বনি বলে।এ ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় জিব্বায় অগ্রভাগ কিঞ্চিৎ উল্টিয়ে উপরের মাড়ির গোড়ার শক্ত অংশকে স্পর্শ করে উচ্চারিত হয়। উচ্চারণের সময় জিব্বা উল্টা হয় বলে এদেরকে দন্তমূলীয় পরিবেষ্টিত ধ্বনি বলা হয়। আবার এগুলো উপরের মাড়ির গোড়ার শক্ত অংশ অর্থাৎ, মূর্ধায় স্পর্শ করে উচ্চারিত হয় বলে এদেরকে মূর্ধন্য ধ্বনিও বলা হয়।
ত – বর্গীয় ধ্বনি কাকে বলে ?
ত,থ,দ,ধ,ন এই ৫ টি ধ্বনিকে ত বর্গীয় ধ্বনি বলে।এ ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় জিব্বা সম্মুখে প্রসারিত হয় এবং অগ্রভাগ উপরের দাঁতের পাটির গোড়ার দিকে স্পর্শ করে। এদেরকে দন্তধ্বনিও বলা হয়।
প – বর্গীয় ধ্বনি কাকে বলে ?
প,ফ,ব,ভ,ম এই ৫ টি ধ্বনিকে প বর্গীয় ধ্বনি বলে। এ ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় ওষ্ঠের সঙ্গে অধরের স্পর্শ ঘটে। এদেও ওষ্ঠধ্বনিও বলা হয়।
শব্দ, অক্ষর ও ধ্বনি-এর মধ্যে পার্থক্য কী ?
শব্দ
দুই বা ততোধিক বর্ণ মিলে শব্দ সৃষ্টি করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটি বর্ণ দিয়েও শব্দ হয়। যেমন- ইংরেজিতে I ( আমি)
অক্ষর
অক্ষর সম্পর্কে আমাদের অধিকাংশ লোকেরই ভুল ধারনা রয়েছে। আমরা বর্ন ও অক্ষরকে এক করে ফেলি। আসলে দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
একটি শব্দ ঠিক যতবারে উচ্চারণ করা যায় তার সংখ্যাকে অক্ষর বলে।
যেমনঃ জাতীয়তা শব্দটি ২ টি অক্ষরে অক্ষর উচ্চারণ করতে হয়। এভাবে, Education শব্দটি উচ্চারণ করতে ৩ টি অক্ষরের প্রয়োজন হয়।
অর্থাৎ, একটি শব্দ যতবারে উচ্চারণ করা যায় তার সংখ্যাকে অক্ষর বলে। ইংরেজিতে বলে Syllable.
ধ্বনি
বাগগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত প্রতিটি আওয়াজ ই হল ধ্বনি। ধ্বনির লিখিত রূপ হচ্ছে বর্ণ। আপনি বাগ যন্ত্রের সাহায্যে যাই উচ্চারণ করবেন তাই ধ্বনি হবে।
বি.দ্রঃ ধ্বনি অর্থবোধক হলেই ভাষা হিসেবে গন্য করা হয়।
উপরের প্রত্যেকটি কে ক্রমানুযায়ী সাজালে এরূপ হবেঃ
ধ্বনি→ বর্ণ → শব্দ ( অক্ষর)
মূর্ধন্য ধ্বনি কী ?
জিহ্বার অগ্রভাগ কিঞ্চিৎ উল্টিয়ে ওপরের মাড়ির গোরার শক্ত অংশ স্পর্শ করে অর্থাৎ মূধায় স্পর্শ করে উচ্চারিত হয় বলে এদের মূর্ধা ধ্বনি বলে
ধ্বনি নির্দেশক চিহ্নকে কী বলে ?
ধবনি নিদেশক চিহ্নকে বর্ণ বলে।
ঈ,ঊ,ঋ,ঐ,ঔ কেন ধ্বনি নয় ?
ও+ই=ঐ, ও+উ=ঔ; দুটি স্বরধ্বনির সমন্বয়ে গঠিত তাই এরা স্বরবর্ণ হলেও স্বরধ্বনি নয়। ই-ঈ, উ-ঊ-তে কোনো উচ্চারণগত পার্থক্য নেই। তাই ঈ এবং ঊ মৌলিক বা স্বরধ্বনি নয়।
এ-কারণেই সমস্ত বানান সমিতিই অতৎসম শব্দে ঈ, ঈ-কার, ঊ, ঊ-কার-এর বদলে ই, ই-কার, উ, উ-কার ব্যবহারের বিধান করেছেন। আবার, ঋ(রি=র+ই-কার), মানে তার উচ্চারণও মৌলিক নয়। তাই, ঋ স্বরবর্ণ হলেও স্বরধ্বনি নয়।