জীববিজ্ঞান

রক্ত কি? রক্তের উপাদান ও কাজ

1 min read
মানবদেহের স্বাস্থ্য ও জীবন রক্ষার জন্য রক্ত অপরিহার্য। এটির পুষ্টি এবং অক্সিজেন সরবরাহ সহ অনেকগুলি কাজ রয়েছে। রক্তের প্রধান চারটি উপাদান হল লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা, রক্তরস এবং অনুচক্রিকা।
রক্ত সাধারণত প্রানী দেহের কোষ এবং অঙ্গগুলিতে প্রয়োজনীয় পদার্থ, যেমন শর্করা, অক্সিজেন এবং হরমোন সরবরাহ করে এবং কোষ থেকে বর্জ্য অপসারণ করে। এই আর্টিকেলে, রক্ত কি, রক্তের প্রধান উপাদান সমূহ এবং রক্তের বিভিন্ন কার্যাবলীর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

রক্ত কি?

রক্ত(Blood) একটি তরল যোজক টিস্যু যা রক্তরস, রক্তকণিকা এবং অনুচক্রিকা নিয়ে গঠিত। এটি আমাদের শরীরে বিভিন্ন কোষ এবং টিস্যুতে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে প্রায় ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে।
রক্ত প্রধানত দেহে অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ পরিবাহিত করে। এটি সামান্য লবণাক্ত, ক্ষারধর্মী ও লালবর্ণের ঘন তরল পদার্থ যা হৃৎপিণ্ড, ধমনী, শিরা ও কৈশিক জালিকার মধ্য দিয়ে নিয়মিত প্রবাহিত হয়। রক্তের pH মাত্রা ৭.৩৫ – ৭.৪৫ এবং তাপমাত্রা ৩৬-৩৮° সেলসিয়াস।

রক্তের উপাদান

রক্ত চারটি উপাদান নিয়ে গঠিত যেমন, রক্তরস, লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা,  এবং অনুচক্রিকা।

১. রক্তরস বা প্লাজমা:
মানুষের রক্তের তরলের প্রায় ৫৫% প্লাজমা বা রক্তরস । রক্তরসে ৯২% পানি, এবং অবশিষ্ট ৮% নির্মোক্ত বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত:
গ্লুকোজ
হরমোন
প্রোটিন
খনিজ লবণ
চর্বি
ভিটামিন
বাকি ৪৫% রক্তে প্রধানত লোহিত এবং শেত রক্তকণিকা এবং অনুচক্রিকা থাকে। রক্তের কার্যকারিতা কার্যকর রাখতে এগুলোর প্রতিটিরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
২. লোহিত রক্ত কণিকা বা এরিথ্রোাসাইট:
লাল অস্থিমজ্জায় লোহিত রক্ত কণিকা সৃষ্টি হয়। মানুষের লোহিত রক্ত কণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না এবং দেখতে অনেকটা দ্বি অবতল বৃত্তের মত। এর গড় আয়ু ১২০ দিন।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা প্রতি কিউবিক মিলিমিটারে প্রায় ৫০ লক্ষ যা শ্বেত রক্তকণিকার চেয়ে প্রায় ৫০০ গুণ বেশি। পুরুষের তুলনায় মহিলাদের রক্তে লোহিত রক্তকণিকা কম। তবে শিশুদের দেহে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বেশি থাকে। আমাদের জীবনের প্রতি মুহূর্তে লোহিত রক্ত কণিকা ধ্বংস হয়, আবার সম পরিমাণে তৈরিও হয়।
রক্তের এক ফোঁটা (মাইক্রোলিটার) লোহিত রক্তকণিকার প্রত্যাশিত সংখ্যা পুরুষদের মধ্যে 4.5-6.2 মিলিয়ন এবং মহিলাদের মধ্যে 4.0-5.2 মিলিয়ন।
৩. শ্বেত রক্ত কণিকা বা লিউকোসাইট:
লোহিত রক্তকণিকার তুলনায় শ্বেত রক্তকণিকা অনেক কম। শ্বেত রক্তকণিকা রক্তের উপাদানের ১% এরও কম তৈরি করে, যা রোগ এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা গঠন করে। একটি মাইক্রোলিটার রক্তে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা সাধারণত 3,700-10,500 এর মধ্যে থাকে।
হিমোগ্লোবিন না থাকার কারণে এদেরকে শ্বেত রক্তকণিকা বলা হয়। এর গড় আয়ু ১ থেকে ১৫ দিন। মানব দেহের প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে ৪ থেকে ১০ হাজার শ্বেত রক্ত কণিকা থাকে। যদিও অসুস্থ দেহে এর সংখ্যা বেড়ে যায়।
৪. অনুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট:
অনুচক্রিকা গোলাকার, ডিম্বাকার অথবা রড আকারের হতে পারে। রক্তপাত প্রতিরোধ বা বন্ধ করতে প্লেটলেটগুলি জমাটবদ্ধ প্রোটিনের সাথে যোগাযোগ করে। প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে 150,000 থেকে 400,000 অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট থাকা উচিত।
এর গড় আয়ু ৫-১০ দিন। মানব দেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে অনুচক্রিকার সংখ্যা প্রায় আড়ায় লক্ষ। অসুস্থ দেহে এদের সংখ্যা আরও বেশি। রক্তে ঠিকমতো অনুচক্রিকা না থাকলে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না। ফলে অনেক সময় রোগীর প্রাণ নাশের আশঙ্কা থাকে।

রক্তের কাজ

রক্ত দেহের বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে, যেমন–
  • রক্ত ফুসফুস থেকে অক্সিজেন শোষণ করে শরীরের বিভিন্ন কোষ এবং টিস্যুতে পরিবহন করে।
  • এটি কোষে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে, যেমন অ্যামিনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং গ্লুকোজ।
  • কার্বন ডাই অক্সাইড, ইউরিয়া এবং ল্যাকটিক অ্যাসিডের মতো বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করে।
  • শ্বেত রক্ত ​​কোষের ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে শরীরকে রোগ, সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
  • গ্লুকোজ, ভিটামিন, খনিজ এবং প্রোটিনের মতো পরিপাক পুষ্টিগুলি ছোট অন্ত্রের ভিলির কৈশিকগুলির মাধ্যমে রক্তে শোষিত হয়।
  • এন্ডোক্রাইন গ্রন্থি দ্বারা নিঃসৃত হরমোনগুলিও রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গ এবং টিস্যুতে পরিবাহিত হয়।
  • রক্ত তাপ শোষণ বা মুক্ত করে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • অনুচক্রিকা প্রধানত আঘাতের জায়গায় রক্ত ​​জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। ফাইব্রিনের সাথে প্লেটলেটগুলি ক্ষতস্থানে জমাট বাঁধতে সাহার্য করে।
  • রক্ত কিডনিতে প্রবেশ করে যেখানে এটি রক্তের প্লাজমা থেকে নাইট্রোজেন বর্জ্য অপসারণের জন্য ফিল্টার করা হয়। রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলিও লিভার দ্বারা অপসারণ করা হয়।
  • শ্বেত রক্তকণিকা ফ্যাগােসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় দেহকে জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন উৎপাদনের মাধ্যমে রক্ত দেহের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
5/5 - (17 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x