প্রত্যয় কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

মূলশব্দ বা মৌলিক শব্দের সঙ্গে যে অতিরিক্ত শব্দাংশ যুক্ত হয়ে নতুন নামপদ গঠন করে, তাকে প্রত্যয় বলে।

যা ক্রিয়ামূল ও শব্দমূলের সাথে যুক্ত হয়ে নূতন পদ সৃষ্টি করে বা বাক্যস্থ শব্দের ভিতরে সম্পর্ক সৃষ্টিতে সহায়তা করে, এমন ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছকে প্রত্যয় বলা হয়। ইংরেজি suffix, postfix।

আরো পড়ুন : দ্বিরুক্ত শব্দ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

অর্থাৎ, প্রাতিপদিক ও ধাতুর সঙ্গে যেই শব্দাংশ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাদেরকেই প্রত্যয় বলে।

উপরের উদাহরণে, লাজুক শব্দের প্রকৃতি ‘লাজ’-এর সঙ্গে প্রত্যয় ‘উক’ যুক্ত হয়ে গঠিত হয়েছে ‘লাজুক’ শব্দটি। এমনিভাবে-

প্রকৃতি + প্রত্যয় = প্রত্যয়সাধিত শব্দ

  • √বড়  + আই   = বড়াই
  • √ঘর  + আমি   = ঘরামি
  • √পড়  + উয়া   = পড়ুয়া
  • √নাচ  + উনে   = নাচুনে
  • √জিত  + আ   = জিতা
  • √চল্ (গমন করা) +ই =চলি
  • √অৎ (গমন করা) +ই =অতি (অধিক)

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত প্রত্যয়গুলোকে ভাষাগত প্রকৃতি অনুসারে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলো হলো—

১. সংস্কৃত প্রত্যয় :

এই প্রত্যয়কে মোট পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এ গুলি হলো—

  • কৃৎপ্রত্যয় (Primary suffix)
  • তদ্ধিত প্রত্যয় (Secondary suffix)
  • স্ত্রী-প্রত্যয় (faminine suffix)
  • ধাত্ববয়ব (Parts of roots)
  • বিভক্তি (Inflection)

২. বাংলা প্রত্যয় :

দেশী প্রত্যয়কেই বলা হয়, বাংলা প্রত্যয়।

৩. বিদেশী প্রত্যয় :

সংস্কৃত ও বাংলা ব্যতীত অন্যান্য প্রত্যয়গুলো বিদেশী প্রত্যয় বলা হয়।

সংস্কৃত প্রত্যয়

এই প্রত্যয়কে মোট পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। প্রত্যয় প্রধানত পাঁচ প্রকার। এ গুলি হলো—

১. কৃৎপ্রত্যয় (Primary suffix)
২. তদ্ধিত প্রত্যয় (Secondary suffix)
৩. স্ত্রী-প্রত্যয় (faminine suffix)
৪. ধাত্ববয়ব (Parts of roots)
৫. বিভক্তি (Inflection)

কৃৎপ্রত্যয়

সংস্কৃত কৃৎপ্রত্যয়>বাংলা কৃৎপ্রত্যয়।
বাংলা ব্যকরণে পাঁচটি প্রত্যয় -এর একটি।
যে প্রত্যয় ক্রিয়ামূলের শেষে যুক্ত হয়ে নূতন শব্দ তৈরি করে, তাকে কৃৎপ্রত্যয় বলে। বিদ্যাসাগর প্রণীত ব্যাকরণ কৌমুদী -তে এর ইংরেজি সমার্থ শব্দ হিসাবে বলা হয়েছে-primary suffix। যেমন—
√চল্ (গমন করা) +ই =চলি

কৃৎপ্রত্যয়ের তালিকা

অ (অ)
অ (অঙ)
অ (অচ্)
অ (অণ্)
অ (অন্)
অ (অপ্)
অ (ক)
অ (কঞ্)
অ (খচ্)
অ (খল্)
অ (খশ্)
অ (ঘ)
অ (ঘঞ্)
অ (ট)
অ (টক্)
অ (টচ্)
অ (ড)
অ (ডট)
অ (ণ)
অ (শ)
অ (ষ)
অ (ষ্ণ)
অই
অক (কুন)
অক (ণ্বুল)
অঙ্গ (অঙ্গচ্)
অট্ (অটন)
অটি
অণ্ড (অণ্ডক)
অৎ (অতি)
অৎ (শতৃ)
অত (অতক)
অতি (অতিচ)
অতি (ডতি)
অত্র (অত্রন্)
অন
অন্ (অনট)
অন্ (ল্যুট)
অন (কনিন্)
অন (ক্যুন)
অন (যুচ্)
অন (ল্যু)
অনীয় (অনীয়রঃ)
অন্ত (ঋচ্)
অন্ত (ঝ)
অন্য

অভ (অভচ্)
অম
অম্ব (অম্বচ্)
অর্
অর (অরন্)
অরি
অরু
অল (অলচ্)
অল (কল)
অল (কলচ)
অলি (অলিচ)
অস্
অস্ (অসচ্)
অস (অসুন)

আতু
আন (আনক্)
আন (মান)
আর (আরন)
আলু (আলুচ)
ই (ই)
ই (ইচ্)
ই (ইন্)
ই (ইঞ্)
ই (কি)
ইৎ
ইত
ইন্
ইন্ (ইনচ্)
ইন (ইনি)
ইন্ (ঘিনুণ্)
ইন্ (ণিনি)
ইম (ইমচ)
ইর (ইরন)
ইর্ (কিরচ)
ইল (ইলচ)
ইষ্ (ইষচ্)
ইষ্ (টিষচ্)
ইষ্ণু (ইষ্ণুচ্)

ঈক (ঈকন)
ঈর (ঈরচ)


উ (উঙ্)
উ (উন)
উ (কু)
উ (কূ)
উ (ডু)
উক্ (উক্‌ঞ)
উক্ (উকন)
উৎ (উতি)
উত (ডুতচ)
উন (উনট্)
উন্ (উনন্)
উন্য
উম
উর্

উর্ (উরন্)
উর্চ (ডুর্চ)
উল
উল্ (উলচ্)
উল (ঘুল)
উলি
উশ্
উষ (উষচ্)
উষ (কুষন্)
উস (উসি)
ঊর
ঊষ্ (ঊষন্)
এণু
ওর (ওরন)
ওল্ (ওলচ্)
ওল (ওলট)

ক (কন)
ক্বিপ্ (০)

গ (গক্)

ত (ক্ত)
ত (তন্)
তব্য
তব্য (তব্যৎ)
তি
তি (ক্তিচ্)
তি (ক্তিন্)
তু
তু (তুন্)
তৃ (তৃচ্)
ত্যু (ত্যুক)
ত্র
ত্র (ত্রক)
ত্র (ত্রন্)
ত্র (ষ্ট্রন)
ত্রিম (ত্রিমক)
থ (কথন)
থ (থক)
থ (থন্)
থি (কথিন)

ন (নক্)
ন (নঙ্)
ন (নন্)
নি

পাস
ব (ক্বন)
ব (বন্)
বন্ (ঙ্‌বনিপ্)
বর (বরচ্)
ভ (ভন্)
ম (মক্)
ম (মন্)
মন্ (মনিন্)
মল (ক্মলচ)
মান (শানচ্)
মি

য (ক্যপ)
য (ণ্যৎ)
য (যৎ)
যু (যুচ্)

র (ড্রট)
র (রক্)
র (রন)
রি (ক্রিন)


স (সন্)
সর
সর (সরন্)
সি (কসি)
স্রাবি
স্রু
হন্

তদ্ধিত প্রত্যয়

আক্ষরিক অর্থ -তাহার জন্য হিতকর। কিন্তু ব্যাকরণে এটি একটি প্রত্যয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এই কারণে, এর পূর্ণাঙ্গ নাম -তদ্ধিত প্রত্যয়।

বাংলা ব্যকরণে পাঁচটি প্রত্যয়ের একটি হলো তদ্ধিত প্রত্যয়। যে প্রত্যয় শব্দমূলের শেষে যুক্ত হয়ে নূতন শব্দ তৈরি করে, তাকে তদ্ধিত-প্রত্যয় বলে। বিদ্যাসাগর প্রণীত ব্যাকরণ কৌমুদী এর ইংরেজি সমার্থ শব্দ হিসাবে বলা হয়েছে-secondery suffix । বাংলা শব্দে ব্যবহৃত তদ্ধিত প্রত্যয়ের তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো-

অ (অচ)
অ (অঞ্)
অ (অণ্)
অ (ডট্)
অক (বুঞ্)
অক্ (ষ্কন্)
অঠ (অঠন্)
অয় (অয়চ্)
অয় (কয়ন)

আৎ

ই (ইঞ্)
ইক (ঠক্)
ইক (ঠঞ্)
ইক (ঠন্)
ইষ্ঠ (ইষ্ঠন)
ইত (ইতচ্)
ইন্ (ইনি)
ইম [ডিমচ]
ইমন্ (ইমনিচ্)
ইয় (ঘ)
ঈন (খ)
ঈয় (ছ)
ঈয়স্ (ঈয়সুন্)


ক্ (কন্)
ক (কপ্)
ণিচ্
ত (তপ)
তঃ (তস্)
তা (তল্)
তীয়
ত্ব
দার
দারি
বৎ (বতুপ)
মৎ (মতুপ)
মন্দ
ময় (ময়ট্)
য (যক)
য (যৎ)
য (ষ্যঞ্)
ল (লচ্)

লব
ষ (ণ্য)
সাৎ

১.৩ স্ত্রী-প্রত্যয়

স্ত্রী-প্রত্যয়

বাংলা ব্যকরণে পাঁচটি প্রত্যয়ের একটি। ব্যাকরণে বর্ণিত স্ত্রীবাচক শব্দ উৎপন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে যে সকল প্রত্যয় ক্রিয়ামূলের শেষে যুক্ত হয়, এদেরকে স্ত্রী-প্রত্যয় বলা হয়। বিদ্যাসাগর প্রণীত ব্যাকরণ কৌমুদী এর ইংরেজি সমার্থ শব্দ হিসাবে বলা হয়েছে- feminine Affix। বাংলা ভাষায় স্ত্রীবাচক শব্দ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত স্ত্রী-প্রত্যয়ের দুটি উৎস পাওয়া যায়। এই উৎস দুটি হলো- সংস্কৃত স্ত্রী-প্রত্যয় এবং বাংলা স্ত্রী-প্রত্যয়। নিচে বাংলাতে ব্যবহৃত স্ত্রী-প্রত্যয়ের তালিকা তুলে ধরা হলো-

আ (টাপ্)
ঈ (ঈপ্)
ঈ (ঙীপ্)
ঈ (ঙীষ)
নী

বিদেশী প্রত্যয়

যে সকল সংস্কৃত ও দেশী প্রত্যয় ছাড়া সকল প্রত্যয়কে বিদেশী প্রত্যয় হিসাবে বিবেচনা করা হয়। নিচে এই জাতীয় প্রত্যয়ের তালিকা তুলে ধরা হলো।

দার

ফার্স তদ্ধিত প্রত্যয়। ফার্সি دار দার (ফার্সি প্রত্যয়)>বাংলা দার।
বিভিন্ন ভাব বা অবস্থা প্রকাশে এই প্রত্যয় শব্দের সাথে যুক্ত হয়। যেমন-
১.১ অধিকারী অর্থে – অংশী +দার=অংশীদার, পাওনাদার
১.২. মালিক অর্থে- জমি +দার=জমিদার, আড়ৎদার
১.৩. পরিচালক অর্থে- চৌকি +দার=চৌকিদার। দফাদার।
১.৪. বৃত্তি অর্থে- দোকান +দার=দোকানদার, অজুরদার।
১.৫. বিশিষ্ট বা যুক্ত অর্থে – নকশা +দার=নকশাদার।

ধাত্ববয়ব

সংস্কৃত ব্যাকরণ থেকে গৃহীত পাঁচটি প্রত্যয়ের একটি। বিদ্যাসাগর প্রণীত ব্যাকরণ কৌমুদীতে বলা হয়েছে- ধাতুর উত্তর ই (ণিচ), স (সন্) প্রভৃতি এবং প্রাতিপাদিকের উত্তর য, কাম্য প্রভৃতি যে সমস্ত প্রত্যয় হয়, তাহাদিগকে ধাত্ববয়ব (Parts of roots) বলে।

এই বিচারে যে সকল প্রত্যয়কে ধাত্বয়ব বলা হয়। মূলত এই প্রত্যয় কোন ক্রিয়ামূলের সাথে যুক্ত হয়ে নতুন ক্রিয়ামূল তৈরি করে। ফলে এই প্রত্যয় মূল ক্রিয়ামূলের অংশ (Parts of roots) অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

যেমন- √চল্ (গমন করা) + ই (ণিচ)= √চালি।
√চল্ (গমন করা) + য (যঙ্)= √চঞ্চল।
√শ্রু (শ্রবণ) +স (সন্) =√শুশ্রুষ্

নিচে ধাত্ববয়বের তালিকা দেওয়া হলো

ই (ণিচ)
য (যঙ্)
স (সন্)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *