পদার্থ বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পদার্থ। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা পদার্থ ও পদার্থের অবস্থা | কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ কাকে বলে? মৌলিক পদার্থ, যৌগিক পদার্থ, মিশ্র পদার্থ, পদার্থের পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। তাহলে আর দেরি না চলুন এবার শুরু করা যাক।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhOicyNZBz6xGhTU4lK8kXYZX6PzWJ_-RgG_yQwEhJ1Z3rAlzwwUW0AIPndVG54TXqinJQUzikCIn7Jz6fZIKO7uSXN8Zsm4H_wfRVyUNFxvh1AGbzitqkE2zejUmeH0f9kRva5-rGQ0ZNqlr9UZj5P9CmL1wZOdirOrJQKuGnvWwQCCzdigBqdTRGigLI/s16000/%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%BE.png)
পদার্থ ও পদার্থের অবস্থা | কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ কাকে বলে?
পদার্থ কাকে বলে?
আমাদের চারপাশে নানারকম জিনিস রয়েছে (যেমন- চেয়ার, টেবিল, মাটি, পানি, বায়ু, লোহা ইত্যাদি)। এ সবকিছুই পদার্থের তৈরি। যা জায়গা দখল করে, যার ওজন আছে, আকার ও আকৃতি আছে এবং বলপ্রয়োগে বাধার সৃষ্টি করে তাকে পদার্থ বলে।
অর্থাৎ, যার ভর আছে, আয়তন আছে, একটি নির্দিষ্ট স্থান দখল করে এবং বল বা চাপ প্রয়োগে বাধার সৃষ্টি করে তাকে পদার্থ বলে। যেমন: বাতাস, পানি, চেয়ার, টেবিল, লোহা, কাঠ, মাটি ইত্যাদি।
পদার্থের বৈশিষ্ট্য
পদার্থের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি সাধারণত ভর, ওজন, আয়তন, ঘনত্ব, স্থিতিস্থাপকতা, আকার ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। এগুলো হলো –
ভর: কোনো বস্তু যেসব উপাদান দিয়ে গঠিত তার পরিমাণই হলো ভর। ভরের একক হলো (g / kg)গ্রাম বা কেজি।
ওজন: কোন বস্তুকে পৃথিবী কত বল দ্বারা নিজের দিকে আকর্ষণ করছে তার পরিমাণকে ওজন বলে। ওজনের একক হলো নিউটন।
আয়তন: কোন বস্তু যে যায়গা জুড়ে অবস্থান করে সেটিই হলো সেই বস্তুর আয়তন।
ঘনত্ব: কোন বস্তুর একক আয়তনের ভরকে এর ঘনত্ব বলে।
পদার্থের অবস্থা কয়টি ও কি কি?
সাধারণত পদার্থ ৩টি অবস্থায় থাকতে পারে। পদার্থের অবস্থা ৩টি হলো:
- কঠিন পদার্থ (Solid Matter)
- তরল পদার্থ (Liquid Matter)
- বায়বীয় বা গ্যাসীয় পদার্থ (Gaseous Matter)
কঠিন পদার্থ (Solid Matter) কাকে বলে?
কঠিন পদার্থ: যে পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন আছে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় এর আকার ও আয়তনের পরিবর্তন হয় না তাকে কঠিন পদার্থ বলে। যেমন – লোহা, ইট, পাথর, কাঠ ইত্যাদি।
অর্থাৎ, কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন ও নির্দিষ্ট আকার এবং দৃঢ়তা আছে। এর অণুগুলো পরস্পরের অতি সন্নিকটে অবস্থান করে। অর্থাৎ, এদের আন্তঃআণবিক দূরত্ব খুবই কম। এ কারণে এদের মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তি সবচেয়ে বেশি থাকে। উদাহরণ: বালু, পাথর, লবণ ইত্যাদি।
কঠিন পদার্থের বৈশিষ্ট্য
- নির্দিষ্ট তাপ ও চাপে কঠিন পদার্থের আকার ও আয়তন সবসময় নির্দিষ্ট থাকে।
- তাপ প্রয়োগে সাধারণত কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয়। যেমন : বরফকে উত্তপ্ত করলে তা গলে পানিতে পরিণত হয়।
- ব্যতিক্রম হলো : ন্যাপথালিন, আয়োডিন, কর্পূর, নিশাদল ইত্যাদি। এসব কঠিন পদার্থ তাপের প্রভাবে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয় এবং ঠান্ডা করলে বাষ্প থেকে পুনরায় কঠিন অবস্থায় ফিরে আসে। একে ঊর্ধ্বপাতন বলা হয়।
- প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগেও কঠিন পদার্থের আয়তনের তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না।
- কঠিন পদার্থের দৃঢ়তা থাকে। বাহির থেকে বল প্রয়োগ না করলে কঠিন পদার্থের আকার ও আয়তনের বিকৃতি ঘটানো যায় না।
- চাপ দিয়ে কঠিন বস্তুকে তরলে পরিণত করে, চাপ প্রত্যাহার করে পুনরায় কঠিনে পরিণত করা যায়। একে পুনঃশিলীভবন বলে।
তরল পদার্থ (Liquid Matter) কাকে বলে?
তরল পদার্থ: যেসকল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন আছে কিন্তু আকার নেই এবং যে পাত্রে রাখা হয় সে পাত্রেই আকার ধারণ করে, তাকে তরল পদার্থ বলে। যেমন – পানি, তেল, দুধ ইত্যাদি।
অর্থাৎ, তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন আছে কিন্তু নির্দিষ্ট আকার নেই। এ কারণে এদের যে পাত্রে রাখা হয় তার আকার ধারণ করে । তরল পদার্থের অণুগুলো পরস্পরের কাছাকাছি থাকে। তবে এদের মধ্যকার আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তি কঠিন পদার্থের মত এত প্রবল নয়। যেমন: পানি, পেট্রোল, কেরোসিন, ভোজ্য তেল ইত্যাদি।
তরল পদার্থের বৈশিষ্ট্য
- নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে তরল পদার্থের আয়তন নির্দিষ্ট থাকে কিন্তু নির্দিষ্ট আকার থাকে না।
- একে যখন যে পাত্রে রাখা হয়, তখন সেই পাত্রের আকার ধারণ করে।
- বায়ুর চাপ কম থাকলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে যায়। যেমন – পাহাড়ের উপর পানির স্ফুটনাঙ্ক ৭০°C.
- তাপমাত্রা বাড়ালে তরলের আয়তন বাড়ে। তরলের তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়াতে থাকলে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছে তরল বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে।
- তরলের তাপমাত্রা ক্রমশ কমালে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এসে তরল পুনরায় কঠিনে পরিণত হয়।
- তরলের অণুসমূহ স্থান পরিবর্তন করতে পারে।
বায়বীয় বা গ্যাসীয় পদার্থ (Gaseous Matter) কাকে বলে?
গ্যাসীয় পদার্থ বা বায়বীয় পদার্থ: যে সকল পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন নেই তাকে বায়বীয় / গ্যাসীয় পদার্থ বলে।
গ্যাসীয় পদার্থের অণুসমূহের আন্তঃআণবিক দূরত্ব পদার্থের তিনটি অবস্থার মাঝে সবচেয়ে বেশি, এ কারণে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তি সবচেয়ে কম। এর ফলে তারা প্রায় সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে চলাচল করে। যেমন: নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, মিথেন ইত্যাদি।
গ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য
- গ্যাসীয় পদার্থের নির্দিষ্ট কোন আকার বা আয়তন নেই। গ্যাস বর্ণহীন বলে তা দেখা যায় না।
- গ্যাসীয় পদার্থের পরিমাণ যত কমই হোক না কেন, তা যে পাত্রে রাখা হবে সে পাত্রের পুরো স্থান দখল করে থাকে।
- গ্যাসীয় পদার্থের অণুসমূহের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশি, তাই আকর্ষণ শক্তি অনেক কম। এর ফলে তারা প্রায় মুক্তভাবে চলাচল করে।
- একই তাপমাত্রা ও চাপে সমআয়তন সব গ্যাসে সমান সংখ্যক অণু থাকে।
- তাপ প্রয়োগে গ্যাসীয় পদার্থ সবচেয়ে বেশি সংকুচিত ও প্রসারিত হয়।
পানিই একমাত্র পদার্থ, যা প্রকৃতিতে কঠিন (বরফ), তরল (পানি) এবং বায়বীয় (জলীয়বাষ্প) এই তিন অবস্থাতেই পাওয়া যায়। যেমন- মেরু অঞ্চলের বরফ, নদী, সমুদ্রের পানি তরল, বায়ুর জলীয় বাষ্প বায়বীয়।
প্লাজমা অবস্থা বলতে কি বুঝ?
কঠিন, তরল ও বায়বীয় ছাড়াও পদার্থের আরেকটি অবস্থা রয়েছে। যাকে প্লাজমা অবস্থা বলা হয়।
এ পদার্থের অণুসমূহ পরস্পরের কাছাকাছি থাকে, তবে তাদের মধ্যকার আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তি কঠিন পদার্থের মত এত প্রবল নয়।
বজ্রপাতের সময় আমরা যে বৈদ্যুতিক ঝলক দেখতে পাই তা প্লাজমা। প্লাজমা অবস্থায় পদার্থের বিদ্যুৎ পরিবহন ক্ষমতা থাকে। যেমন- বৈদ্যুতিক স্পার্ক, ফ্লুরােসেন্ট বাতি, নিয়ন আলো ইত্যাদি।
পদার্থের গঠনের উপর ভিত্তি করে পদার্থকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো –
- মৌলিক পদার্থ
- যৌগিক পদার্থ ও
- মিশ্র পদার্থ
মৌলিক পদার্থ কাকে বলে?
যেসকল পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করলে ওই পদার্থ ব্যতীত অন্য কোনো পদার্থ পাওয়া যায় না তাদেরকে মৌলিক পদার্থ বলা হয়।
যেমন: হাইড্রোজেন (H₂) অণুকে ভাঙলে শুধু হাইড্রোজেনের দুটি পরামাণু পাওয়া যায়, তাই হাইড্রোজেন (H) একটি মৌলিক পদার্থ। অক্সিজেন (O2) অণুকে অক্সিজেনের দুইটি পরমাণু ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। তাই O একটি মৌলিক পদার্থ।
এ পর্যন্ত ১১৮/১১৪ টি মৌল আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মাঝে ৯৮/৯২ টি প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। এই ৯৮/৯২ টির মাঝে ১৪ টি তেজস্ক্রিয়তার মাধ্যমে। সবচেয়ে হালকা মৌলিক পদার্থ হলো হাইড্রোজেন (H)।
মৌলিক পদার্থ সাধারণত চার ধরনের হয়। যথা-
- ধাতু
- অধাতু
- উপধাতু
- নিষ্ক্রিয় মৌল
ধাতু: তাপ ও বিদ্যুৎ সুপরিবাহী মৌলকে সাধারণত ধাতু বলা হয়। সাধারণত ধাতুসমূহ চকচকে ও কঠিন অবস্থায় থাকে। এদেরকে বল প্রয়োগে করে বিভিন্ন আকার দেওয়া যায়। সবচেয়ে হালকা ধাতু হলো লিথিয়াম। সবচেয়ে ভারী ধাতু ইউরেনিয়াম।
ধাতুসমূহ এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হতে পারে। যেমন: কপার (Cu), অ্যালুমিনিয়াম (Al), লোহা (Fe) ইত্যাদি।
অধাতু: এরা সাধারণত তাপ ও বিদ্যুৎ অপরিবাহী। অধাতুসমূহ এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক (-) আয়নে পরিণত হতে পারে। যেমন: ফ্লোরিন, সালফার, অক্সিজেন ইত্যাদি।
উপধাতু: উপধাতু হলো – এরা কখনো ধাতু আবার কখনো কখনো অধাতুর মত আচরণ করে। উদাহরণ: বোরন, সিলিকন, আর্সেনিক, জার্মেনিয়াম, বিসমাথ, অ্যান্টিমনি, পোলোনিয়াম, টেলুরিয়াম ইত্যাদি।
নিষ্ক্রিয় মৌল: নিষ্ক্রিয় মৌল বলতে পর্যায় সারণির 18 তম শ্রেণীর মৌলগুলোকে বোঝায়। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এরা নিষ্ক্রিয় থাকে বলে এদের নিষ্ক্রিয় মৌল বলা হয়। এরা কোন মৌলের সাথে সংযুক্ত হতে চায় না। এমনকি নিজেরা নিজেরা নিজেদের সাথেও না।
নিষ্ক্রিয় মৌলের সংখ্যা ৭টি। এগুলো হলো: হিলিয়াম (H), নিয়ন(Ne), আর্গন (Ar), ক্রিপটন (Kr), জেনন (Xa), রেডন (Rn) এবং ওগানেসন (Og)। সবচেয়ে হালকা নিষ্ক্রিয় গ্যাস হলো হিলিয়াম। আর সবচেয়ে ভারী গ্যাস অগানেসন।
যৌগিক পদার্থ কাকে বলে?
যে সকল পদার্থকে বিশ্লেষণ করলে দুই বা ততােধিক ভিন্ন ধর্ম বিশিষ্ট মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায় তাদেরকে যৌগিক পদার্থ বলে। যেমন: পানি।
কারণ পানির (H₂O) একটি অণুকে ভাঙলে হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু ও অক্সিজেনের একটি পরমাণু পাওয়া যায়। তাই পানি একটি যৌগিক পদার্থ।
মিশ্রণ বা মিশ্র পদার্থ কাকে বলে?
দুই বা ততোধিক পদার্থকে যে কোনো অনুপাতে মিশালে যদি তারা নিজ নিজ ধর্ম বজায় রেখে পাশাপাশি অবস্থান করে, তবে উক্ত সমাবেশকে মিশ্রণ বলে।
যেমন – বায়ু একটি মিশ্র পদার্থ। কারণ বায়ুতে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, আর্গন, হাইড্রোজেন ইত্যাদি উপাদান নিজ নিজ ধর্ম বজায় রেখে পাশাপাশি অবস্থান করে।
সমসত্ব ও অসমসসত্ব মিশ্রণ বলতে কি বুঝ?
সমসত্ব মিশ্রণঃ যে মিশ্রণের সকল অংশে উপাদানসমূহ একই অনুপাতে বিদ্যমান এবং যার সর্বত্র একই ধর্ম প্রকাশ পায় তাকে সমসত্ত্ব মিশ্রণ বলে। যেমন – চিনির শরবত একটি সমসত্ব মিশ্রণ।
অসমসত্ব মিশ্রণঃ যে মিশ্রণের বিভিন্ন অংশে তার উপাদানসমূহ বিভিন্ন অনুপাতে থাকে এবং যার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন ধর্ম প্রদান করে তাকে অসমসত্ব মিশ্রণ বলে। যেমন – বায়ু। কারণ এতে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি নিজ নিজ ধর্ম বজায় রেখে পাশাপাশি অবস্থান করে।
উদ্বায়ী পদার্থ বলতে কি বোঝ?
যে সকল পদার্থকে তাপ দিলে তা সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়, তাদেরকে উদ্বায়ী পদার্থ বলে। উদাহরণ: কপূর, ন্যাপথলিন, আইয়োডিন, নিশাদল, অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড, কঠিন কার্বন ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি।
গলনাংক ও স্ফুটনাংক কাকে বলে?
গলনাঙ্ক (Melting point): কোনো পদার্থকে কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তর করতে যে তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়, তাকে সে পদার্থের গলনাঙ্ক বলে। উদাহরণ: পানির গলনাঙ্ক ০°C।
স্ফুটনাঙ্ক (Boiling Point): যে তাপমাত্রায় কোনো তরল পদার্থ ফুটতে থাকে এবং বাষ্পে পরিণত হয়, তাকে সেই পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক বলে। পানির স্ফুটনাঙ্ক ১০০°।
আন্তঃআণবিক শক্তি কাকে বলে?
অণুসমূহ পরস্পরকে যে শক্তিতে আকর্ষণ করে তাকে আন্তঃআনবিক আকর্ষণ শক্তি বলে। এ শক্তির কারণে অণুসমূহ পরস্পরের সন্নিকটে থাকতে কিন্তু অণুসমূহ সর্বদা কম্পমান। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে কম্পন বৃদ্ধি পায় এবং অণুসমূহ পরস্পর বিচ্ছিন্ন হতে চায়।
আন্তঃআনবিক শক্তি নির্ভর করে পদার্থের প্রকৃতির উপর। এ শক্তির তুলনায় গতিশক্তি কম হলে অণুসমূহ নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকে। অর্থাৎ কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হয়। যেসকল বস্তুর আন্তঃআণবিক শক্তি বেশি, তাদের গলনাংক ও স্ফুটনাংকও বেশি। এ শক্তি কম হওয়ায় গ্যাসীয় পদার্থ সমূহের গলনাঙ্ক 0° C এরচেয়ে অনেক কম।
পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন
পদার্থের অবস্থা এর পরিবর্তন মূলত দুই ধরনের হতে পারে। যথা:
- ভৌত পরিবর্তন
- রাসায়নিক পরিবর্তন
ভৌত পরিবর্তন কাকে বলে?
যে পরিবর্তনের ফলে শুধু পদার্থের বাহ্যিক অর্থাৎ বাইরের আকার বা অবস্থার পরিবর্তন হয় কিন্তু তা নতুন কোন পদার্থে পরিণত হয় না, তাকে ভৌত পরিবর্তন বলে। যেমন – পানিকে বরফে ও বাষ্পে পরিণত করা, লোহাকে চুম্বকে পরিণত করা, চিনিকে পানিতে দ্রবীভূত করা ইত্যাদি।
রাসায়নিক পরিবর্তন কাকে বলে?
যে পরিবর্তনের ফলে এক বা একাধিক বস্তু প্রত্যেকে তার নিজস্ব সত্তা হারিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম বিশিষ্ট এক বা একাধিক নতুন বস্তুতে পরিণত হয়, তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। সাধারণত তাপ,চাপ অথবা পদার্থের সংস্পর্শে এলে পদার্থের এ পরিবর্তন ঘটে থাকে।
রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে যে নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয় তার অণুতে অবস্থিত মৌলগুলো সাধারণত পূর্বের পদার্থ থেকেই আসে। যেমন- পানি এবং অক্সিজেনের সংযোগে লোহায় মরিচা ধরা, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে পানি তৈরি হওয়া, দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালানো ইত্যাদি।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
- হিমায়িত CO2 কে শুষ্ক বরফ বলা হয়।
- অক্সিজেন (O) এমন একটি মৌলিক পদার্থ যা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি আছে।
- সবচেয়ে হালকা বস্তু / মৌলিক পদার্থ / গ্যাস / অধাতু হলো হাইড্রোজেন (H)।
- সবচেয়ে হালকা নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিলিয়াম।
- সবচেয়ে হালকা ধাতু হলো লিথিয়াম।
- সবচেয়ে ভারী মৌলিক গ্যাস অগানেসন > রেডন (Rn)।
- সবচেয়ে ভারী ধাতু ইউরেনিয়াম (U)।
- সবচেয়ে ভারী তরল ধাতু হলো পারদ।