স্মার্ট বাংলাদেশ(Smart Bangladesh) হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি পরিকল্পনা বা রূপরেখা যা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে বোঝায় মূলত প্রযুক্তিনির্ভর জীবন ব্যবস্থা, যেখানে সব ধরনের নাগরিক সেবা থেকে শুরু করে সবকিছুই হবে স্মার্টলি। কোনরকম ভোগান্তি ছাড়াই প্রতিটি নাগরিক পাবে তথ্যের নিশ্চয়তা এবং নাগরিক সুবিধা।
স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য উচ্চ-গতির ইন্টারনেট, শক্তিশালী ডিজিটাল অবকাঠামো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং মেশিন লার্নিং (ML) এর মতো প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি প্রধান স্তম্ভ, যথা SMART Citizens, SMART Government, SMART Economy, এবং SMART Society। এই স্তম্ভগুলি বাস্তবায়নের মাধ্যমে, বাংলাদেশ একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি সমৃদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
উন্নত প্রযুক্তি, টেকসই নীতি এবং উদ্ভাবনী ধারণা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের আধুনিকীকরণ ও উন্নয়নের জন্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ একটি বড় পদক্ষেপ। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট সমাজ এই চারটি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ একবিংশ শতাব্দীতে প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে পারে।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ সরকার ”স্মার্ট বাংলাদেশ” নামে একটি নতুন শব্দ প্রবর্তন করে। স্মার্ট বাংলাদেশ 4টি প্রধান স্তম্ভ যেমন SMART Citizens, SMART Government, SMART Economy এবং SMART Society নিয়ে গঠিত। একে ভিশন 2041ও বলা হয়। যাইহোক, “স্মার্ট বাংলাদেশ/ভিশন 2041” হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘শোনার বাংলাদেশ’, গড়ার পথে পরবর্তী বড় পদক্ষেপ।
স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি প্রধান স্তম্ভ হল:
1. স্মার্ট নাগরিক: নাগরিকেরা যখন একটি টেকসই ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমে নিজেদের তথ্য আদান-প্রদানে দক্ষ ও সক্ষম হয়, তখনই তাদেরকে ‘স্মার্ট নাগরিক’ বলা হয়। স্মার্ট সিটিজেনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হবে তথ্য এবং পরিষেবায় সহজবোধ্যে এক্সেস, শ্রমবাজারে অবাধ সুযোগ, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং আজীবন ব্যবহারযোগ্য স্মার্ট অবকাঠামো নিশ্চিত করা।
2. স্মার্ট সরকার: স্মার্ট সরকার বলতে বোঝায় একটি জবাবদিহিতামূলক, প্রতিক্রিয়াশীল এবং স্বচ্ছ শাসন ব্যবস্থা। স্মার্ট বাংলাদেশ এমন একটি সরকারকে কল্পনা করে যেটি হবে স্বচ্ছ, দক্ষ এবং জবাবদিহিমূলক, এবং যেটি নাগরিকদের উন্নত পরিষেবা প্রদানের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে। স্মার্ট সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ই-গভর্নেন্স নিশ্চিত করা, যার লক্ষ্য সরকারি পরিষেবা এবং তথ্যে উন্মুক্ত অনলাইন অ্যাক্সেস প্রদান।
3. স্মার্ট ইকোনমি: স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের প্রচার করা। স্মার্ট অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে একটি বিশ্বমানের প্রযুক্তি পার্ক এবং আইসিটি বিজনেস ইনকিউবেটর তৈরি করা, যা প্রযুক্তি স্টার্টআপের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। স্মার্ট অর্থনীতি একটি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে। স্মার্ট অর্থনীতিতে নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, সম্পদের দক্ষতা, স্থায়িত্ব এবং উচ্চ সামাজিক কল্যাণের ওপর ভিত্তি করে একটি টেকসই অর্থনীতির ভিত্তি এমনভাবে দাঁড় করানো হয়, যেখানে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ও নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।
4. স্মার্ট সোসাইটি: সমাজের মানুষ যখন তাদের দৈনন্দিন সকল কাজ প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে সম্পন্ন করে, তখন সে সমাজকে স্মার্ট সমাজ বলে। স্মার্ট সমাজ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ককে মজবুত করবে, সহজেই সমাজে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করবে। স্মার্ট নাগরিকেরাই হবে স্মার্ট সমাজের প্রতিনিধি। স্মার্ট সমাজে নারী পুরুষের ভেদাভেদ থাকবে না। এ সমাজ সকল নাগরিকের কর্মসংস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।