জীবকোষ কাকে বলে ? কোষ কত প্রকার ও কি কি?? উদাহরন সহ

আজকে আমরা জানবো জীবকোষ কাকে বলে  এবং এর প্রকারভেদ।

জীবকোষ কাকে বলে

জীবকোষ/ কোষ মূলত জীবদেহের একক। কোনো কোনো বিজ্ঞানী জীবকোষকে জীবদেহের গঠন ও জীবজ ক্রিয়াকলাপের একক বলেও আখ্যায়িত করেছেন৷

কোষের ইংরেজী প্রতিশব্দ সেল(cell) যা ল্যাটিন শব্দ সেলুলা(cellula) থেকে আগত এবং এর অর্থ কুঠুরি।

এই নাম সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন বিজ্ঞানী রবার্ট হুক।

তাছাড়া লোয়ি(loewy) এবং সিকেভিজ( siekevitz) 1969 সালে বৈষম্য ভেদ্য পর্দা দ্বারা আবৃত এবং জীবজ ক্রিয়াকলাপের একক যা অন্য কোনো সজীব মাধ্যম ছাড়াই নিজের প্রতিরূপ তৈরী করতে সক্ষম তাকে কোষ বলেছেন।

কোষ এর প্রকারভেদঃ

১৯৪৯ সালে জার্মান বিজ্ঞানী ফট (Fott) কোষের নিউক্লিয়াসের গঠনের উপর ভিত্তি করে কোষকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন যথাঃ

(১) আদিকোষ (Prokaryotic Cell) এবং

(২) প্রকৃত কোষ (Eukaryotic Cell)।

১. আদি জীবকোষ কাকে বলে

যেসকল কোষে কোনো সুগঠিত নিউক্লিউয়াস থাকে না তাদেরকে আদিকোষ বা আদি নিউক্লিয়াস যুক্ত কোষও বলা হয়ে থাকে৷

এই ধরনের কোষের নিওক্লিয়াস কোনো পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে না ফলে নিউক্লিও বস্তু সাইটোপ্লাজমে ছড়ানো থাকে। এসব কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাস্টিড, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থাকে না তবে রাইবোজোম থাকে।

ক্রোমোজোমে শুধুমাত্র ডিএনএ(DNA) থাকে। যেমনঃ নীলাভ সবুজ শৈবাল, ব্যাকটেরিয়া।

চিত্র-০১ঃ আদিকোষ ও প্রকৃত কোষ

 

২. প্রকৃত জীবকোষ কাকে বলে

Eukaryotic শব্দটি গ্রিক শব্দ থেকে নেয়া হয়েছে যার অর্থ eu = good; karyon = nucleus অর্থাৎ ভাল নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষ।

জড় কোষপ্রাচীর বিশিষ্ট যে সব সুগঠিত ও সুনির্দিষ্ট নিউক্লিয়াস বিদ্যমান সেই কোষকে প্রকৃত কোষ বলা হয়।

আদি ও প্রকৃত কোষের পার্থক্যঃ

 বিষয় আদিকোষ প্রকৃতকোষ
আদর্শ কোষ এর অংশসমূহ ব্যাকটেরিয়া এবং আর্কিয়া প্রোটিস্ট, ছত্রাক, উদ্ভিদ এবং প্রাণী
আদর্শ আকার আকার প্রায় ১-১০ মাইক্রোমিটার এর আকার প্রায় ১০-১০০ মাইক্রোমিটার
নিউক্লিয়াসের প্রকৃতি কোন প্রকৃত নিউক্লিয়াস নেই দ্বিস্তর বিশিষ্ট ঝিল্লি সহ প্রকৃত নিউক্লিয়াস আছে।
ডিএনএ সাধারণত বৃত্তাকার হিস্টোন প্রোটিনবিশিষ্ট রৈখিক অণু।
আরএনএ/প্রোটিন সংশ্লেষণ  সাইটোপ্লাজমের সাথে সংযুক্ত  নিউক্লিয়াসে আরএনএ সংশ্লেষন ঘটে।
সাইটোপ্লাজমে প্রোটিন সংশ্লেষন ঘটে।
রাইবোজোম ৫০এস+৩০এস ৬০এস+৪০এস
সাইটোপ্লাজমীয় গঠন খুব অল্প সংখ্যক গঠন অন্তঃঝিল্লি এবং সাইটোকঙ্কাল দ্বারা সুসংগঠিত
কোষ এর চলাচল ফ্লাজেলিন দিয়ে গঠিত ফ্লাজেলা টিউবিলিন দ্বারা গঠিত ফ্লাজেলা ও সিলিয়া।
মাইটোকন্ড্রিয়া নেই এক থেকে কয়েক হাজার পর্যন্ত হতে পারে। কয়েকটির অবশ্য একেবারেই থাকেনা।
ক্লোরোপ্লাস্ট নেই উদ্ভিদ এবং শৈবালে থাকে।
সংগঠন সাধারণত এককোষী এককোষী, কলোনি, বিশেষ কোষ দ্বারা গঠিত উচ্চতর বহুকোষী জীব
কোষ বিভাজন  সাধারণত দ্বি- বিভাজন মাইটোসিস (বিভাজন বা বাডিং)
মিয়োসিস

শারীরবৃত্তীয় কাজের তারতম্যের উপর ভিত্তি করে একটি বহুকোষী জীবের কোষগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়ঃ

১. দেহ কোষ কাকে বলে(Somatic Cell):

বহুকোষী যেসব কোষ শুধু জীবদেহ গঠন করে কিন্তু জনন কাজে অংশগ্রহণ করে না, সেগুলোকে দেহকোষ বলে। মাইটোসিস বিভাজন প্রক্রিয়ায় পুরোনো দেহকোষ থেকে নতুন দেহকোষ সৃষ্টি হয়।

২. জনন কোষ বা গ্যামিট কাকে বলে(Reproductive Cell or Gamete):

বহুকোষী জীবের যেসব কোষ শুধু জনন কাজে অংশগ্রহণ করে সেগুলোকে জননকোষ বলে। জননকোষ দুরকমের যথা- শুক্রাণু ও ডিম্বাণু। এরা মিয়োসিস বিভাজন প্রক্রিয়ায় যথাক্রমে শুক্রাণু মাতৃকোষ ও ডিম্বাণু মাতৃকোষ থেকে সৃষ্টি হয়।

জনন কোষকে আবার ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ

১. পুং জননকোষ বা শুক্রাণু

২. স্ত্রী জননকোষ বা ডিম্বানু

কোষের নিউক্লিয়াসে উপস্থিত ক্রোমোসোমের সংখ্যার ভিত্তিতে জীবকোষ কে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১। ডিপ্লয়েড জীবকোষ কাকে বলে  (Diploid Cell): এসব কোষের নিউক্লিয়াসে দুই সেট (2n) ক্রোমোসোম থাকে। প্রতি সেট ক্রোমোসোমকে একত্রে জিনোম বলে। সুতরাং ডিপ্লয়েড কোষে দুই সেট জিনোম থাকে। সব উদ্ভিদ ও প্রাণির দেহ কোষ ডিপ্লয়েড (2n) অর্থাৎ দুই সেট জিনোমবিশিষ্ট।

২। হ্যাপ্লয়েড জীবকোষ কাকে বলে  (Haploid Cell): যৌন প্রজননকারী প্রাণিদের দেহে পুরুষ ও স্ত্রী জনন কোষ তৈরি হয়। এসব কোষ হ্যাপ্লয়েড (n) ক্রোমোসোমবিশিষ্ট একক এবং চলনক্ষম (motile)। হ্যাপ্লয়েড পুরুষ ও স্ত্রী গ্যামিট অর্থাৎ শুক্রাণু (n) এবং ডিম্বাণুর (n) নিষেকের ফলে ডিপ্লয়েড জাইগোট এবং ভ্রূণানু (2n) গঠিত হয়ে শিশুজীবের জীবনের সূচনা হয়।

আশা করি আজকে আপনাদের জীবকোষ কাকে বলে এবং এর প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত ধারণা দিতে পেরেছি।

Similar Posts