জীববিজ্ঞান

যকৃত কি ও অগ্ন্যাশয় সম্পর্কিত যাবতীয় আলোচনা।

1 min read

আজকে আমরা আলোচনা করবো যকৃত কি ও অগ্ন্যাশয় নিয়ে।

যকৃত (Liver) কি?

যকৃত  যার ইংরেজী প্রতিশব্দ লিভার(liver) এবং একে চলতি বাংলায় কলিজা ও বলা হয়ে থাকে।

এটি মানব দেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি। মানবদেহের পরিপাকতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংগ হলো লিভার বা কলিজা।

যকৃত এর অবস্থান কি

মেরুদণ্ডী প্রানীর মধ্যচ্ছদার নিচে উদরগহ্বর এর উপরে এবং পাকস্থলীর ডান পাশে লিভার এর অবস্থান।

 

যেহেতু যকৃত পরিপাকতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ তাই এখানেই বিভিন্ন রকম জৈব রাসায়নিক ক্রিয়া বিক্রিয়া ঘটে, তাই একে রসায়ন গবেষণাগার বলা হয়।

যকৃত এর গঠন কি:

যকৃত মূলত লালচে খয়েরী রঙ এর হয়ে থাকে।

এর ওজন দেহের মোট ওজনের (৩-৫%)। অর্থ্যাৎ প্রায় ১.৫ কেজি।

এটি ২টি খন্ডে বিভক্ত যথা-

১. ডান খন্ড

২. বাম খন্ড

এর ডান খন্ড বাম খন্ডের তুলনায় আকারে কিছুটা বড়৷

তাছাড়া এটি ৪ টি অসম্পূর্ণ  খন্ড নিয়ে গঠিত। প্রত্যেকটি খন্ড আবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোবিওল নিয়ে তৈরী।আর প্রত্যেকটি লোবিওল অসংখ্য কোষ নিয়ে গঠিত।

এ কোষ পিত্তরস তৈরী করে, পিত্তরস ক্ষারীয় প্রকৃতির। যকৃৎ এর নিচের অংশ পিত্তথলি  সংলগ্ন থাকে। এখানে পিত্তরস  এসে জমা হয়। পিত্তরসের রং গাঢ় সবুজ এবং এর স্বাদ তিক্ত।বিশেষত স্নেহজাতীয় খাদ্যের ইমালসিফিকেশন এর জন্য পিত্তরস প্রয়োজন।

দুই ধরনের কোষ দিয়ে যকৃত গঠিত যথা-

১. প্যারেনকাইমাল এবং

২. নন-প্যারেনকাইমাল।

যকৃতের প্যারেনকাইমাল কোষকে হেপাটোসাইট বলে যা আয়তনের ৮০%।

যকৃ্ত এর রক্ত প্রবাহ:

যকৃ্তে প্রধানত দুই পথে রক্ত সংবাহিত হয় । যথা-

১. পোর্টাল শিরা এবং

২. হেপাটিক ধমনী ।

শতকরা ৭৫ ভাগেরও বেশি রক্ত আসে পোর্টাল শিরা থেকে। তাছাড়া অক্সিজেনের সরবরাহ হয় দুই উৎস হতেই।

যকৃত এর কাজ কি

যকৃতের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কাজের মধ্যে রয়েছে-

১. যকৃতে পিত্তরস তৈরী হয় যা যকৃত থেকে নিঃসৃত হয়ে পিত্তথলিতে জমা থাকে। প্রয়োজন অনুযায়ী অন্ত্রে পিত্তরসের সরবরাহ ঘটে।

২. রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজ যকৃতে গ্লাইকোজেন রূপে সঞ্চিত হয় ৷ প্রয়োজনে গ্লাইকোজেন ভেঙ্গে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা সঠিক রাখে ৷

৩. যকৃতে ভিটামিন (A,D,E,K, B6 ও B12) সঞ্চিত হয়৷

৪. রক্তের প্লাজমা প্রোটিন যকৃতে সংশ্লেষিত হয়।

৫. যকৃতে লাল রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিন ভেঙ্গে বিলিরুবিন ও বিলিভার্ডিন সৃষ্টি হয় ৷

ক্ষতিগ্রস্থ যকৃত কি

ফ্যাটি লিভার একটি নীরক ঘাতক। এটি শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্গান লিভারকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। এ রোগের কোনো উপসর্গ হয় না। কেউ অন্য কোনো রোগের কারণে পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম করলে, ফ্যাটি লিভার থেকে থাকলে সেটি ধরা পড়ে।

তাছাড়া-

লিভারে চর্বি বেশি পরিমাণে জমা হলে ধীরে ধীরে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। প্রথমদিকে পেটের ডান দিকে উপরে যে ফ্যাটি লিভার থাকে, সে অংশে একটু একটু ব্যথা হয় ও পেটটা একটু ভারী ভারী লাগে। ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রথমে শুধু লিভারে চর্বি জমা থাকে। অন্য কোনো ইনজুরি হয় না। পরে বেশি চর্বি জমার ফলে লিভারে প্রদাহ দেখা দেয়।

যকৃতকে সুস্থ রাখার উপায় কি:

ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধের উপায় হলো- ওজন নিয়ন্ত্রণ করা। ওজন নিয়ন্ত্রণ করলে ফ্যাটি লিভার সম্পর্কিত যেসব রোগ আছে, যেমন, ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল— এগুলো নিয়ন্ত্রণ হয়ে যাবে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের নিয়ম অনুযায়ী কায়িক পরিশ্রম করতে হবে, ব্যায়াম করতে হবে, প্রয়োজনে আমাদের খেলাধুলা করতে হবে। যে পরিমাণ খাবার আমরা খেয়েছি, সে পরিমাণ এনার্জি খরচ করলে আমাদের ডায়াবেটিস কমে যাবে, ব্লাড প্রেসার কমে যাবে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যাবে।

সুতরাং ফ্যাটি লিভার এবং এ সম্পর্কিত রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রথম উপায় হলো, পরিমিত পরিমাণে খাবার গ্রহণ। এরপর কায়িক পরিশ্রম বাড়ানা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ দুটি কাজের মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

অগ্ন্যাশয়(Pancreas) কি?

অগ্ন্যাশয় হচ্ছে মেরুদন্ডী প্রানীদের পরিপাক তন্ত্রের(বহিঃক্ষরা) ও অন্তক্ষরা তন্ত্রের অন্তর্গত একটি মিশ্র গ্রন্থি।

সহজ ভাবে বলতে গেলে- আমাদের পাকস্থলীর পিছনের দিকে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ন মিশ্র গ্রন্থি যা এনজাইম ও হরমোন নিঃসরন করে তাকে অগ্ন্যাশয় বলে।

অগ্ন্যাশয়ের অবস্থান

অগ্ন্যাশয় পাকস্থলীর পিছনের দিকে আড়াআড়ি ভাবে অবস্থিত একটি অংশ।

অগ্ন্যাশয় কে মিশ্র গ্রন্থি বলার কারণ কি?

এটি মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ন মিশ্র গ্রন্থি। কারণ এটি একইসাথে আমাদের পরিপাকের কাজে অংশগ্রহনকারী যে এনজাইম তা নিঃসৃ্ত করে এবং আমাদের রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রনকারী যে হরমোন সেটিও নিঃসৃত করে। অর্থ্যাৎ অগ্ন্যাশয় বহিঃক্ষরা ও অন্তঃক্ষরা উভয় গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে থাকে। যেহেতু এটি একইসাথে ২ ধরনের গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে তাই একে মিশ্র গ্রন্থি বলে।

অগ্ন্যাশয়ের গঠন

অগ্ন্যাশয় পাকস্থলীর পেছনের দিকে অবস্থিত একটি মিশ্র গ্রন্থি। এই অংশ থেকে অগ্ন্যাশয় রস নিঃসৃত হয়। এই রস অগ্ন‍্যাশয় নালির মাধ্যমে যকৃত অগ্ন্যাশয় নালি দিয়ে ডিওডেনামে প্রবেশ করে। এটি পরিপাকে অংশগ্রহণকারী এনজাইম, ও রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রনকারী হরমোন নিঃসরণ করে। অর্থাৎ এটি বহিঃক্ষরা ও অন্তঃক্ষরার উভয় গ্রন্থির ন্যায় কাজ করে।

অগ্ন্যাশয়ের কাজ

  • অগ্ন্যাশয় হতে একধরনের রস নিঃসৃত হয়।
  • এই অগ্ন্যাশয় রসে থাকে ট্রিপসিন, লাইপেজ, অ্যামাইলেজ নামক বিভিন্ন ধরনের উৎসেচক । এই এনজাইম গুলো প্রধানত শর্করা, আমিষ এবং স্নেহজাতীয় খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে।
  • এটি অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্যতা, পানির সমতা ও দেহতাপ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
  • অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে এটি গুরুত্বপূর্ণ কিছু হরমোন (যেমন -গ্লুকাগন, ইনসুলিন) নিঃসরণ করে থাকে।
  • এটি অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা উভয় ধরনের গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে।
5/5 - (32 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x