কোষ বিভাজন কাকে বলে এবং প্রকারভেদ
আজকে আমরা আলোচনা করবো কোষ বিভাজন কাকে বলে এবং এর প্রকারভেদ নিয়ে।
কোষ বিভাজন কাকে বলে
যে প্রক্রিয়ায় মাতৃকোষ বিভাজিত হয়ে অপত্য কোষের সৃষ্টি করে তাকে কোষ বিভাজন বলে৷
বিভাজনের মাধ্যমে সংখ্যাবৃদ্ধি কোষের একটি স্বাভাবিক এবং অতি গুরত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোষ এককোষী নিষিক্ত ডিম্বক হতে একটি পরিণত মানুষের সৃষ্টি করে। কোষ বিভাজন একটি মৌলিক ও অতীব অত্যাবশ্যকীয় একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জীবের দৈহিক বৃদ্ধি ও বংশ বিস্তার ঘটে।
অর্থ্যাৎ যে প্রক্রিয়ায় জীবের সংখ্যাবৃদ্ধি, দৈহিক বৃদ্ধি ও জননের উদ্দেশ্যে একটি থেকে দুটি বা দুটি থেকে চারটি কোষের সৃষ্টি হয় তাকে কোষ বিভাজন বলা হয়।
চিত্রঃ কোষ বিভাজন
যে কোষটি বিভাজিত হবে সেটি মাতৃকোষ এবং বিভাজনের ফলে যে নতুন কোষটি উৎপন্ন হয়ে থাকে তাকে অপত্য কোষ বলা হয়।
কোষ বিভাজন আবিষ্কারঃ
Walter Fleimming ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম সামুদ্রিক সালামান্ডার কোষে কোষ বিভাজন লক্ষ্য করেন।
সাধারনভাবেই কোষের প্রধান দুটি অংশ থাকে। যেমন- নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম। কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম উভয়েই বিভাজিত হতে পারে।
ক্যারিওকাইনেসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় কোষের নিওক্লিয়াসের যে বিভাজন ঘটে তাকে বলা হয় ক্যারিওকাইনেসিস।
সাইটোকাইনেসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে কোষের বিভাজন প্রক্রিয়ায় কোষের সাইটোপ্লাজম এর বিভাজন কে বলা হয় সাইটোকাইনেসিস।
কোষ বিভাজন এর প্রকারভেদঃ
এটি প্রধানত ৩ প্রকার। যথা-
১. মাইটোসিস
২. মিয়োসিস
৩. অ্যামাইটোসিস
মাইটোসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে
যে প্রক্রিয়ায় মাতৃ কোষের নিউক্লিয়াসটি মাত্র একবার বিভাজিত হয়ে সমআকৃতির, সমসংখ্যক, সমগুনসম্পন্ন ক্রোমোজোমের দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি করে তাকে মাইটোসিস কোষ বিভাজন বলে।
মাইটোসিসে নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের ক্রোমোজোম সংখ্যা সবসময় সমান থাকে বিধায় একে সম বিভাজন বা সদৃশ বিভাজন বলা হয়।
স্থানঃ মূলত উদ্ভিদের বর্ধনশীল মূলের অগ্রভাগ এবং কান্ডে, প্রানীদের ভ্রুনের পরিস্ফুটনের সময় সমস্ত দেহকোষে এই বিভাজন লক্ষ্য করা যায়।
মাইটোসিস মূলত ৪ টি দশায় সম্পন্ন হয়। যথাঃ
১. প্রোফেজ
২. মেটাফেজ
৩. অ্যানাফেজ
৪. টেলোফেজ
১. প্রোফেজ দশাঃ
এই দশায় ক্রোমোজোম এর স্থুলীকরন, আকৃতি হ্রাস্ব ও কুন্ডলীকরন ঘটে । ক্রোমোজোম এর যে ক্রোমাটিড দুটি রয়েছে তা সেন্ট্রোমিয়ারের সাথে যুক্ত হয়ে পাশাপাশি অবস্থান করে।
২. মেটাফেজঃ
এই দশার শুরুতেই নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয়ার পর্দা বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং স্পিন্ডল তন্তু গঠন করে। এর ক্রোমোজোম গুলো স্পিন্ডল তন্তুর বিষুব অঞ্চলে অবস্থান করে৷ মাইটোসিসের এই পর্যায়ে ক্রোমোজোম গুলো সর্বোচ্চ খাটো ও মোটা হয়ে থাকে৷
৩. অ্যানাফেজঃ
এই ধাপে সেন্ট্রোমিয়ার বিভাজিত হয়। ক্রোমোজোম এর ক্রোমাটিড দুটি বিচ্ছিন্ন হয়ে অপত্য ক্রোমোজোম গঠন করে৷ এই সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে ক্রোমোজোম গুলো সাধারনত V,L,J,I আকৃতির হয়ে থাকে।
৪. টেলোফেজঃ
এই ক্ষেত্রে ক্রোমোজোম গুলো স্পিন্ডল তন্তুর বিপরীত মেরু তে অবস্থান করে। নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয়ার পর্দার পুনরায় আবির্ভাব ঘটতে থাকে।
মাইটোসিস এর বৈশিস্ট্যঃ
১. এ প্রক্রিয়ায় প্রতিটি ক্রোমোসোম লম্বালম্বি ভাবে তথা অনুদৈর্ঘ্য বরাবর দুটি ক্রোমাটিডে বিভক্ত হয়ে যায়।
২. প্রতিটি ক্রোমাটিড তথা অপত্য ক্রোমোসোম তার নিকটের মেরুতে পৌছে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি করে। কাজেই দুটি অপত্য কোষে ক্রোমসোম এর সংখ্যা সমান থাকে।
৩. অপত্য কোষগুলো মাতৃকোষের সমগুনসম্পন্ন হয়ে থাকে,কারণ জীবের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রক জিনসমূহ বহনকারী ক্রোমোসোমগুলোর প্রতিটি লম্বালম্বি ভাবে বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষের নিউক্লিয়াসে পৌঁছায়।
৪. অপত্য কোষের ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার সমান হয়ে থাকে।
৫. অপত্য কোষ বৃদ্ধি পেয়ে মাতৃকোষের সমান আয়তনের হয়ে থাকে।
মিয়োসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে
যে বিভাজন প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াস পরপর দুইবার ও ক্রোমোজোম মাত্র একবার করে বিভক্ত হয়ে মাতৃকোষের ক্রোমোজোমের অর্ধেক সংখ্যক ক্রোমোজোম যুক্ত চারটি অপত্য কোষের সৃষ্টি হয় তাকে মিয়োসিস বলে।
স্থানঃ উন্নত জীবের জনন মাতৃকোষে মায়োসিস হয়ে থাকে । দেহকোষে অথবা হ্যাপ্লয়েড কোষে মিয়োসিস হয়না । তবে নিম্নশ্রেণীর উদ্ভিদ (হ্যাপ্লয়েড উদ্ভিদে) এর জাইগোটে মিয়োসিস বিভাজন হতে পারে।
মিয়োসিস বিভাজন দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত। যথাঃ
১. মিয়োসিস-১
২. মিয়োসিস-২
মিয়োসিস এর বৈশিষ্ট্যঃ
১. এটি জীবের জনন মাতৃকোষে ঘটে থাকে।
২. মাতৃকোষটি বিভাজিত হয়ে চারটি অপত্য কোষের সৃষ্টি করে।
৩. অপত্য কোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়।
৪. এই প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট অপত্য কোষ জনন কোষ হিসেবে জীবের যৌন জননে অংশ নেয়।
৫. মিয়োসিসে নিউক্লিয়াস দুইবার এবং ক্রোমোসোম একবার মাত্র বিভক্ত হয়।
অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে
যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম কোন জটিল মাধ্যমিক পর্যায় ছাড়াই সরাসরি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি করে তাকে অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন বলে ।
স্থানঃ এককোষী বা অনুন্নত অথবা নিম্নশ্রেণির জীবে এই ধরনের কোষ বিভাজন হয়ে থাকে । যেমন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অ্যামিবা ইত্যাদি।
অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিঃ এই সময় মাতৃকোষের মধ্যাকার নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোম গুলো লম্বা হয়ে ডাম্বেলের ন্যায় আকার ধারণ করে এবং মাঝ বরাবর সংকুচিত হয়ে পরস্পর বিচ্ছিন্ন বা পৃথক হওয়া শুরু করে । একই সাথে মাতৃকোষের প্রাচীর সাইটোপ্লাজম সহ সংকুচিত হয়ে রিং আকারের খাঁজ সৃষ্টি করে। খাঁজটি ক্রমশ গভীর হতে থাকে এবং নিউক্লিয়াস সহ সাইটোপ্লাজম দুইটি অংশে বিভক্ত হয়ে যায় এবং দুটি অপত্য কোষে পরিণত হয় । পরবর্তীতে প্রতিটি অপত্য কোষ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং মাতৃকোষের আকার ধারণ করে।
অ্যামাইটোসিস এর বৈশিষ্ট্যঃ
১. একে প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলা হয়ে থাকে।
২. এটি ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট, ছত্রাক প্রভৃতি এককোষী জীবে সম্পন্ন হয়।
৩. এ বিভাজনে নিউক্লিয়াসটি ডাম্বেল ন্যায় আকার ধারণ করে।
৪. এতে একটি কোষ বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি করে।
৫. এ বিভাজন পদ্ধতিটি জটিলতা বিহীন একটি পদ্ধতি।
আজকে এই পর্যন্তই। আশা করছি কোষ বিভাজন কাকে বলে এবং এর প্রকারভেদ সম্পর্কে আপনাদের ভালো একটি ধারণা দিতে পেরেছি।