RNA কি? RNA এর ভৌত ও রাসায়নিক গঠন

আজকে আমরা জানবো RNA কি ও এর বিস্তারিত।

RNA কি

RNA বলতে মূলত বুঝায়- এটি একধরনের নিউক্লিক এসিড যা DNA থেকে উৎপন্ন এবং এদের বিশেষ শর্করা ও ক্ষারক হিসেবে যথাক্রমে রাইবোজ ও ইউরাসিল থাকে ।

এর পূর্নরূপ হলো Ribo Nucleic Acid । প্রোটিন তৈরিই হলো RNA এর প্রধান কাজ। কিছু কিছু ভাইরাস ছাড়া প্রায় সকল জীবকোষেই RNA থাকে।

আবিষ্কারক:

বিজ্ঞানী Altman সর্বপ্রথম নিউক্লিক এসিড আবিষ্কারের পর পরই বিজ্ঞানী Albrecht kossel নিউক্লিক এসিডের মধ্যে ২ ধরনের নাইট্রোজেন বেস,পেন্টোজ সুগার,ফসফরিক এসিড ইত্যাদি শনাক্ত করেন।এরপর বিজ্ঞানী Lavine বিভিন্ন পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে ২ ধরনের নিউক্লিক এসিড DNA ও RNA আবিষ্কার করেন।

RNA এর অবস্থান:

সাধারণত দেখা যায় কোষের ৯০ ভাগ আরএনএ থাকে সাইট্রোপ্লাজমে এবং বাকী ১০ ভাগ আরএনএ থাকে নিউক্লিয়াসে। এছাড়াও আরোও বিভিন্ন অঙ্গানু যেমন- রাইবােসােম, ক্রোমােসােম, মাইটোকন্ড্রিয়া এবং প্লাস্টিডেও আরএনএ পাওয়া যায়। ব্যাকটেরিয়া এবং কিছু কিছু ভাইরাসেও আরএনএ এর উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়।

RNA এর ভৌত গঠন কি

এটি একটি পলিনিউক্লিওটাইড চেইন দ্বারা গঠিত হয়। যেহেতু পলিনিউক্লিউটাইড চেইন দ্বা্রা গঠিত তাই এটি একটি একক সূত্রক চেইনের মতো দেখায়। তবে এই সূত্রাকার দেহটি মাঝে মাঝেই সরল ফাঁস গঠন করে থাকে। এটি স্থানে স্থানে কুন্ডলিত হয়ে থাকে। এ কুন্ডলিত স্থানগুলোতেই সংশ্লিষ্ট নাইট্রোজেন ক্ষারকগুলোর মধ্যে DNA এর মত সিঁড়ি সদৃশ হাইড্রোজেন বন্ধনী সৃষ্টি হতে দেখা যায়। তবে ফাঁসহীন যে অংশ থাকে সেখানে ক্ষারকগুলো বন্ধনহীন অবস্থায় থাকে।

RNA এর রাসায়নিক গঠন কি

RNA এর রাসায়নিক গঠন উপাদন তিনটি-

১. পেন্টোজ শুগ্যার

২. নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষারক

৩. ফসফোরিক এসিড

১. পেন্টোজ শুগ্যারঃ

পেন্টোজ শুগ্যার বলতে বুঝায়- পাঁচ কার্বন যুক্ত শুগ্যার বা চিনি। এই পেন্টোজ শুগ্যারে রাইবোজ শুগ্যারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

২. নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষারকঃ

এর নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষারক চার ধরনের হয়ে থাকে। যথা-

১. অ্যাডেনিন (A)

২.  ইউরাসিল (U)

৩.  সাইটোসিন (C)

৪. গুয়ানিন (G) ।

পিউরিন বেস বা দুই রিং বিশিষ্ট ক্ষারক হলো – অ্যাডেনিন ও গুয়ানিন

পাইরিমিডিন বেস বা এক রিং বিশিষ্ট ক্ষারক হলো – ইউরাসিল ও সাইটোসিন ।

৩. ফসফোরিক এসিডঃ

এই ফসফরিক এসিডে তিনটি একযোজী হাইড্রোক্সিল গ্রূপ ও একটি দ্বিযোজী অক্সিজেন পরমানু নিয়ে গঠিত।

RNA এর প্রকারভেদ কি

গঠন ও কাজের ভিত্তিতে এটিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

১. ট্রান্সফার বা t RNA

২. বার্তাবহ বা মেসেন্জার  বা m RNA

৩. রাইবোজোমাল বা  r RNA

৪. বংশগতি বা জেনেটিক  বা g RNA

৫. মাইনর RNA

১. t RNA কি

যেসব RNA জেনেটিক কোড অনুযায়ী একেকটি অ্যামিনো এসিডকে m RNA অনুতে স্থানান্তরিত করে প্রোটিন সংশ্লেষনে সহায়তা করে তাদেরকে t RNA বলে। এরা কোষের সাইটোপ্লাজমে দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে এবং সেখানেই অবস্থান করে। এছাড়াও নিউক্লিয়াসের ভিতরেও t RNA সৃষ্টি হয়ে থাকে। এতে প্রায় ৯০ টি নিউক্লিয়োটাইড রয়েছে।

গঠনঃ

t RNA হলো এক সূত্রক এবং এটি লম্বা চেইনের মতো থাকে এবং পরবর্তীতে এটি ভাঁজ হয়ে যায় এবং বিভিন্ন বেস এর মধ্যে জোড়ার সৃষ্টি হয়ে একটি  t RNA তে একাধিক ফাঁস বা লুপ সৃষ্টি করে। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ফাঁস হলো অ্যান্টিকোডন ফাঁস যা mRNA এর কোডনের সাথে মুখোমুখি বসে যেতে পারে।t RNA এর 3’ এর প্রান্ত এক সূত্রক এবং এটি সবসময় CCA ধারায় বেস সজ্জিত হয়। এখানে অ্যামিনো এসিড যু্ক্ত হয় বলে একে অ্যামিনো এসিড সাইটও বলা হয়। অ্যান্টিকোডন ফাঁস ও অ্যামিনো এসিড সাইট পরস্পর বিপরীত দিকে অবস্থান করে।

কাজঃ

t RNA কোষের সাইটোপ্লাজম হতে  m RNA কর্তৃক নির্দেশিত সংকেত অনুসারে সঠিক অ্যামিনো এসিড টিকে পরিবহন করে প্রোটিন সংশ্লেষনের স্থানে নিয়ে যায়।

২. m RNA কি

যে সব RNA জিনের সংকেত অনুযায়ী প্রোটিন সংশ্লেষনের ছাঁচ হিসেবে কাজ করে এবং নির্দিষ্ট অ্যামিনো এসিড অনুক্রমকে বাছাই করে তাদেরকে বার্তাবহ বা m RNA  বলে।

গঠনঃ

DNA থেকে ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে m RNA সৃষ্টি হয়। m RNA এক সূত্রক চেইনের ন্যায়, ফাঁস বিহীন এবং অত্যন্ত ক্ষনস্থায়ী একটি RNA , m RNA এর 5’ প্রান্তের কয়েকটি বেস হলো কোডনবিহীন, এ প্রান্তকে  5’ হেডার বলা হয়। আবার 3’ প্রান্তের কয়েকটি বেস কোডনবিহীন, এ প্রান্তকে 3’ ট্রেলার বলা হয়। এর মাঝখানের যে অঞ্চল তাকে কোডিং অঞ্চল বলে। পরপর তিনটি বেস একত্রে মিলে একটি কোডন সৃষ্টি হয়।

কাজঃ

১. নির্দিষ্ট প্রোটিন সংশ্লেষনের যে বার্তা তা নিউক্লিয়াস হতে সাইটোপ্লাজমে বহন করে নিয়ে যায়।

২. রাইবোসোম এবং t RNA এর সাহায্যে নির্দিষ্ট অ্যামাইনো এসিডের অনুক্রমের শৃঙ্খল তৈরি করে থাকে।

৩. r RNA কি

যেগুলোতে রাইবোসোম গাঠনিক উপাদান হিসেবে কাজ করে তাকে r RNA বলে। কোষের সমগ্র RNA এর শতকরা ৮০-৯০ ভাগই এই আর আরএনএ

গঠনঃ

এরা শাখাহীন এবং এক সূত্রক। এতে প্রায় ৩০০০ টি নিউক্লিওটাইড রয়েছে, এরা সর্বাপেক্ষা স্থায়ী ও অদ্রবনীয়।

কাজঃ

এর প্রধান কাজ রাইবোসোম নামক কোষ অঙ্গানু সৃষ্টিতে অবদান রাখা যার মাধ্যমে কোষে প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়।

৪. g RNA কি:

যে সকল RNA বংশগতীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রন করে এবং তা বহন করে নিয়ে যায় তাদেরকে বংশগতীয়  বা g RNA বলে।

কাজ:

প্রোটিন তৈরি করা ও বংশগতীয় বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে।

৫. মাইনর RNA কি

যে সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র RNA কোষের বিভিন্ন ধরনের প্রোটিনের সাথে মিশে এনজাইমের আকার দান করে তাদেরকে মাইনর RNA বলে। যেমন- সাইটোপ্লাজমীয় (sc RNA), নিউক্লিয় (sc RNA) ইত্যাদি।

কাজ:

বিভিন্ন ধরনের এনজাইমের কাঠামো বা আকার দান করা ও এনজাইম হিসেবে কাজ করা।

RNA এর কাজ কি

১.  এর প্রধান কাজ হলো প্রোটিন সংশ্লেষন করা।

২. t RNA অ্যামিনো এসিডকে স্থানান্তর করে।

৩. r RNA রাইবোনিউক্লিয় প্রোটিন গঠন করে।

৪. m RNA, D NA হতে বার্তা বহন করে রাইবোসোমে নিয়ে যায়।

আশা করি আজকে আপনাদের RNA কি, RNA এও গঠন ও কাজ নিয়া কিছুটা ধারনা দিতে পেরেছি।

Similar Posts