ধ্বনি কাকে বলে? প্রকারভেদ, স্বরধ্বনি,ব্যঞ্জনধ্বনি

আজ আমরা জানবো ধ্বনি কাকে বলে? প্রকারভেদ, স্বরধ্বনি,ব্যঞ্জনধ্বনি নিয়ে।

বাগযন্ত্র বা স্বরযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত হয় ধ্বনি। ভাষার উদ্ভব হয় এই ধ্বনি থেকেই। তাহলে আমরা বলতে পারি ধ্বনিই হলো ভাষার মূল উপাদান। আজকে আমরা আলোচনা করব ধ্বনিতত্ত্ব ও এর প্রকারভেদ  নিয়ে।

ধ্বনি কাকে বলে

মানুষের ভাষার উচ্চারিত শব্দ কে বিশ্লেষণ করলে যে অবিভাজ্য (যাকে আর ভাগ করা যায় না )অংশ পাওয়া যায় তাকে ধ্বনি বলে। শব্দকে অতিক্ষুদ্র রূপে ভাঙলে ধ্বনি পাওয়া যায়। তাহলে সহজ ভাবে বলা যায় ভাষার ক্ষুদ্রতম একক হল ধ্বনি।

ধ্বনি সাধারণত কোন অর্থ বহন করে না। কিছু ধ্বনি একত্রিত হয়ে একটি শব্দ গঠন করে আর সেই শব্দ থেকে বাক্য গঠনের মাধ্যমে আমরা ভাষা প্রকাশ করি। তাই ধোনিকে ভাষার মূল ভিত্তি বলা হয়।

মানুষের ফুসফুস থেকে বাতাস বের হওয়ার সময় মুখের বিভিন্ন জায়গায় বাধা পেয়ে ধ্বনি উৎপন্ন হয়। ধ্বনির লিখিত রূপ কে বর্ণ বলে।

ধ্বনি এর প্রকারভেদ

বাংলা ভাষায় ধ্বনি প্রধানত দুই প্রকার

স্বর ধ্বনি ও ব্যঞ্জন ধ্বনি

স্বর ধ্বনি কাকে বলে

যেসকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুসে বাতাস মুখবিবরের কোথাও বাধা পায় না তাদের স্বরধ্বনি বলে।

স্বর ধ্বনি অন্য ধ্বনির সাহায্য ছাড়াই  সম্পূর্ণভাবে নিজে উচ্চারিত হতে পারে। বাংলা ভাষায় স্বরধ্বনি 11 টি। এগুলো হলো অ,আ,ই,ঈ,উ,ঊ,ঋ,এ,ঐ,ও,ঔ।

স্বরধ্বনি প্রধানত দুই রকমের  

১.হ্রস্বস্বর 

২.দীর্ঘস্বর

১.হ্রস্বস্বর:  যে সমস্ত স্বরধ্বনি উচ্চারণে অপেক্ষাকৃত কম সময় প্রয়োজন  তাদের হ্রস্বস্বর বলে। হ্রস্বস্বর ৪ টি – অ, ই,উ,ঋ।

২.দীর্ঘস্বর: যে সমস্ত স্বরধ্বনি উচ্চারণে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় প্রয়োজন তাদের দীর্ঘস্বর বলে।দীর্ঘস্বর ৭টি- আ,ঈ,ঊ,এ,ঐ,ও,ঔ।

অন্য একধরনের স্বরধ্বনি আছে যাকে প্লুত স্বর বলে।

 প্লুত স্বরঃ যে স্বরধ্বনি অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ সময় ধরে টেনে উচ্চারণ করা হয় তাকে প্লুত স্বর বলে। সাধারণত গান বা কবিতা আবৃত্তিতে এইস্বর ব্যবহার করা হয়।

যেমনঃ হরি> হরি-ই-ই।

বিশ্লেষণ এর ভিত্তিতে স্বরধ্বনিকে আবার দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়।

১. মৌলিক স্বর

২.যৌগিক স্বর

১.মৌলিক স্বর:

যে স্বরধ্বনিকে বিশ্লেষণ করা যায়না সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে উচ্চারিত হয় তাকে মৌলিক স্বর বলে।  মৌলিক স্বর ধ্বনি ৭ টি। এগুলো হলো অ,আ,ই,উ,এ,অ্যা,ও।

মৌলিক স্বর ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিব্বার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে স্বরধ্বনিকে দুটি পৃথক ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো

সম্মুখস্থ স্বর ধ্বনি– এগুলো উচ্চারণের সময় জিব্বা সামনের দিকে আসে। যেমনঃ ই,এ,আ ইত্যাদি।

পশ্চাদ্ভাগস্থ স্বর ধ্বনি – এগুলো উচ্চারণের সময় জিব্বা পিছনের দিকে যায়। যেমনঃ উ,ও,অ ইত্যাদি।

মৌলিক স্বর ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখ কি অবস্থায় থাকে তার উপর ভিত্তি করে মৌলিক স্বর ধ্বনি কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

১. কুঞ্চিত স্বর ধ্বনি – উচ্চারণের সময় ওষ্ঠদ্বয় কুঞ্চিত হয়।

অ,ও ইত্যাদি

২. সংবৃত স্বর ধ্বনি  – উচ্চারণের সময়  মুখ কিছুটা সংকুচিত হয়।  ই,উ ইত্যাদি।

৩. বিবৃত স্বর ধ্বনি – উচ্চারণের সময়  মুখ খোলা থাকে।

আ, অ্যা ইত্যাদি।

.যৌগিকস্বর

যখন দুই বা ততোধিক স্বর ধ্বনি উচ্চারণের সময় সংযুক্ত হয়ে সংযুক্ত স্বর ধ্বনি উৎপন্ন হয় তাকে যৌগিক স্বর ধ্বনি বলে। যৌগিকস্বরকে দ্বৈতস্বরও বলা হয়।

যেমনঃ (আ+ই)আই = যাই, খাই।

(ই+ও)ইও= রাখিয়ো, করিয়ো। ইত্যাদি।

হ্রস্বস্বর অ,উ,ই,ঋ
দীর্ঘস্বর আ,ঈ,ঊ,এ,ঐ,ও,ঔ
প্লুত স্বর আ-আ-আ, ই-ই-ই, উ-উ-উ  ইত্যাদি
মৌলিক স্বর অ,আ,ই,ঊ,এ,অ্যা,ও

ব্যঞ্জন ধ্বনি কাকে বলে

 

যে সকল ধ্বনি উচ্চারিত হওয়ার সময় স্বর ধ্বনির সাহায্য নেয় তাদেরকে ব্যঞ্জন ধ্বনি বলে। যেমনঃ ক, খ,গ,ঘ ইত্যাদি।

আমাদের বাংলা ভাষায় ব্যঞ্জন ধ্বনি ৩৯ টি।

ব্যঞ্জনধ্বনি প্রধানত ৩ প্রকার

১. স্পর্শ ধ্বনি

২.অন্তঃস্থ ধ্বনি

৩.উষ্ম ধ্বনি

.স্পর্শ ধ্বনি কাকে বলে

যেসকল ব্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে আগত হতাশ মুখবিবরের(কন্ঠ,তালু, মূর্ধা, দন্ত,ওষ্ঠ) কোথাও না কোথাও বাধা পায় অথবা স্পর্শ করে তাদেরকে স্পর্শ ধ্বনি বলে।

বাংলা ভাষায় স্পর্শ ধ্বনি ২৫ টি।

উচ্চারণের স্হান অনুযায়ী

স্পর্শ ধ্বনিকে ৫ ভাগে বিভক্ত করা যায়

১. ক-বর্গীয়ঃ উচ্চারণের সময় জিহ্বামূল নরম তালু স্পর্শ করে।

২. চ-বর্গীয়ঃ উচ্চারণের সময় জিহ্বার অগ্রভাগ চ্যাপ্টা হয়ে তালুর সামনের দিকে মিলিত হয়।

৩. ট- বর্গীয়ঃ  উচ্চারণের সময় জিহ্বার অগ্রভাগ সামান্য উল্টা হয়ে মাড়ির মূলে বা মূর্ধায় যুক্ত হয়।

৪. ত-বর্গীয়ঃ উচ্চারণের সময় জিহ্বা সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে দাতের মূলে মিলিত হয়।

.প-বর্গীয়ঃ উচ্চারণের সময় ওষ্ঠের মিলন ঘটে।

বর্গ উচ্চারণের স্থান ধ্বনি নাম
কন্ঠ্য ক,খ,গ,ঘ,ঙ কন্ঠ্যধ্বনি
তালব্য চ,ছ,জ,ঝ,ঞ তালব্যধ্বনি
মূর্ধন্য ট,ঠ,ড,ঢ,ণ মূর্ধন্যধ্বনি
দন্ত ত,থ,দ,ধ,ণ দন্তধ্বনি
ওষ্ঠ প,ফ,ব,ভ,ম ওষ্ঠধ্বনি

উচ্চারণের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী

স্পর্শ ধ্বনি ৫ প্রকার

১. অঘোষ ধ্বনি কাকে বলে – যে ধ্বনি উচ্চারণে কণ্ঠস্বর  কম্পিত হয় না তাকে অঘোষ ধ্বনি বলে। যেমনঃ ক,খ,চ,ট,প ইত্যাদি

২.ঘোষ ধ্বনি কাকে বলে – যে ধ্বনি উচ্চারণে কণ্ঠস্বর  কম্পিত হয় তাকে অঘোষ ধ্বনি বলে। যেমনঃ গ,ঘ,ন,ম ইত্যাদি

৩. অল্প প্রাণ ধ্বনি কাকে বলে – যে ধ্বনি উচ্চারণে  ফুসফুসের বাতাস আস্তে বের হয় তাকে অল্পপ্রাণ ধ্বনি বলে।

৪. মহাপ্রাণ ধ্বনি কাকে বলে – যে ধ্বনি উচ্চারণে  ফুসফুসের বাতাস জোরে বের হয় তাকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে।

৫. নাসিক্য ধ্বনি কাকে বলে – যে ধ্বনি উচ্চারণে  ফুসফুসের বাতাস নাক দিয়ে বের হয় তাকে নাসিক্য ধ্বনি বলে।

উচ্চারণের স্থান অঘোষ অঘোষ ঘোষ ঘোষ ঘোষ
১. অল্পপ্রাণ ২. মহাপ্রাণ ৩. অল্পপ্রাণ ৪. মহাপ্রাণ ৫. নাসিক্য
কন্ঠ
তালু
মূর্ধ্য¨
দন্ত
ওষ্ঠ্য

২ উষ্ম ধ্বনি কাকে বলে

যে ধ্বনি উচ্চারণে শ্বাস যতোখুশি লম্বা করা যায় তাকে উষ্ম ধ্বনি বলে। যেমনঃস,শ,ষ ইত্যাদি

৩ অন্তঃস্থ ধ্বনি কাকে বলে

অন্তঃস্থ মানে হলো মাঝে।  যে ধ্বনি উচ্চারণ স্পর্শ ও উষ্মধ্বনির মাঝে থেকে হয় তাকে অন্তঃস্থ ধ্বনি বলে। যেমনঃ য়,য,র ইত্যাদি

এছাড়াও কয়েক প্রকার ধ্বনি আছে

পার্শ্বিক ধ্বনি কাকে বলে

ল এর উচ্চারণের সময় বাতাস জিহ্বার দুই পাশ দিয়ে বের হয়,  তাই একে পার্শ্বিক ধ্বনি বলে।

তাড়নজাত ধ্বনি কাকে বলে

ড়,ঢ় কে তাড়নজাত বনি বলে কারণ এগুলো উচ্চারণের সময় জিহ্বা দন্তমূলে আঘাত করে।

কম্পনজাত ধ্বনি কাকে বলে

র কে কম্পনজাত ধ্বনি বলে। কারণ এটি উচ্চারণে জিহ্বার অগ্রভাগ কম্পিত হয়।