পুষ্টি কি? পুষ্টি কাকে বলে? পুষ্টির প্রকারভেদ ও প্রয়োজনীয়তা কি?
পুষ্টি কাকে বলে?
পুষ্টি হলো জীব দেহের অন্যতম একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া।
তাছাড়াও বলা যেতে পারে যে এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জীব খাদ্য গ্রহণ করে, হজম করে, শোষণ করে এবং পরিবহন করে। শোষণের পরে খাদ্য উপাদানগুলো দেহের সকল অঙ্গের ক্ষয়প্রাপ্ত কোষের পুনর্গঠন ও দেহের বৃদ্ধি জন্য নতুন কোষ গঠন করে এবং কোষকে পুনরায় গঠন করে।
অর্থ্যাৎ যে প্রক্রিয়ায় খাদ্যবস্তু গ্রহন করার পর তা পরিপাক হয় এবং গৃহীত জটিল খাদ্য উপাদানগুলোকে ভেঙে সরল উপাদানে পরিণত করে দেহে শোষিত হয় তাকেই পুষ্টি বলে।
পুষ্টি বিজ্ঞান কাকে বলে?
যে বিজ্ঞান পুষ্টির শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া অধ্যয়ন করতে কাজে লাগে তাকে পুষ্টিবিজ্ঞান বলে।
পুষ্টি এর প্রকারভেদ কি কি?
পুষ্টিকে সাধারণত ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. উদ্ভিদ পুষ্টি
২. প্রানী পুষ্টি
১. উদ্ভিদ পুষ্টি কি:
উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ার সাহায্যে নিজের খাবার নিজেই তৈরি করতে পারে এদের অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন হয় না, কিন্তু এমন কিছু উদ্ভিদ ও আছে যারা নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে অক্ষম ।
এই পুষ্টির উৎস হলো –
– বায়ুমন্ডল
– পানি
– মাটি
উদ্ভিদ পুষ্টির ধরণ দুইটি। যথা-
১. ম্যাক্রোউপাদান ১০ টি। যথা- N, K, P, Mg, C, H, O, Fe এবং S.
২. মাইক্রোউপাদান ৬ টি। যথা- Zn, Mn, Mo,B, Cu, এবং Cl.
উদ্ভিদপুষ্টি সাধারণভাবে দুই প্রকার। যথা-
১. স্বভোজী পুষ্টি কি: যে সকল উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষের সাহায্যে নিজের দেহের পুষ্টির উৎপাদন করে তাদের স্বভোজীপুষ্টি বলা হয় । যেমন – আম, জাম, কাঁঠাল ইত্যাদি ।
২. পরভোজী পুষ্টি কি: যে সকল উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না বিধায় অন্যের ওপর বা মৃত জৈব পদার্থ থেকে পুষ্টিরস শোষণ করে তাদের পরভোজীপুষ্টি বলে । যেমন – স্বর্ণলতা ।
২. প্রাণী পুষ্টি কি:
ব্যতিক্রমী কিছু প্রাণী ছাড়া প্রায় সকল প্রাণীরাই নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরিতে অক্ষম অর্থাৎ খাদ্যের ব্যাপারে স্বনির্ভরশীল নয় , তাই প্রাণীদের মধ্যে পরভোজী পুষ্টির দেখা যায় (ইউগ্লিনা ক্লাইস্যামিবা প্রাণী পুষ্টিতে সক্ষম প্রাণী) । প্রাণীদের বিভিন্ন প্রকার পুষ্টির পদ্ধতি দেখা যায় সেগুলো হলো-
হ্যালোজোইক পুষ্টি কি: যে পদ্ধতির মাধ্যমে কঠিন ও জটিল খাদ্যবস্তু গ্রহণের মাধ্যমে পুষ্টির উৎপন্ন হয় তাকে হ্যালোজোইকপুষ্টি বলে । যেমন- মানুষ
মৃতজীবি পুষ্টি কি: এই পদ্ধতিতে প্রাণী মৃত বস্তু থেকে তরল পুষ্টির শোষণের মাধ্যমে নিজের পুষ্টি সম্পন্ন করে। যেমন – ইউগ্লিনা ।
মিথোজীবি পুষ্টি কি : এই পদ্ধতিতে একটি প্রাণী অপর একটি প্রাণীর সহবস্থানের থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে । যেমন – রোমারা
পরজীবী পুষ্টি কি: এই পুষ্টিতে একটি প্রাণী অপর একটি প্রাণীর তরল পুষ্টির মাধ্যমে পুষ্টি শোষণ করে । যেমন– গোলকৃমি
প্রানীর পুষ্টির উপাদান মূলত ৬ টি। যথা –
– আমিষ
– শর্করা
– স্নেহ পদার্থ
– ভিটামিন
– খনিজ লবণ ও
– পানি
পুষ্টি এর প্রয়োজনীয়তা কি
পুষ্টি ছাড়া আমাদের দেহ কাজ করতে প্রায় পুরোপুরি অক্ষম। পর্যাপ্ত পরিমান পুষ্টি দেহকে বাড়িয়ে তোলে এবং দেহের বৃদ্ধি ও মেরামতের জন্য পরিপুষ্ট করে তোলে। সেকারণে প্রতিদিন আমাদের প্রত্যেকের খাদ্য তালিকায় নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাবার রাখা বাধ্যতামূলক বলা চলে। শরীরের সঠিক পুষ্টি সরবরাহের জন্য সঠিক পুষ্টিগুন সম্পন্ন উপাদানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যেমন – শর্করা, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ লবন এবং পানি।
আমরা যদি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করি এবং প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করি তবে তা আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম তথা আনাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে এবং বিভিন্ন রোগ ব্যাধি থেকে আমাদের রক্ষা করবে।
তাহলে আজ এই পর্যন্তই রইলো। আশা করি পুষ্টি কি এবং পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অল্প কিছু হলেও ধারণা দিতে পেরেছি। আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ