আজকে আমাদের প্রধান আলোচনার বিষয় হলো পদার্থ কাকে বলে । পদার্থের সঙ্গা, প্রকারভেদ এবং এদের যে বৈশিস্ট্য বা গুনাগুন রয়েছে তা নিয়েই আজকে আমরা আলোচনা করবো এবং সবাই কে খুব সহজ ভাবে এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো।
পদার্থ কাকে বলে ?
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলতে ফিরতে আমরা আমাদের চারপাশে নানান ধরনের জিনিসপত্র লক্ষ্য করে থাকি। যেমন- ইট, বালি, সিমেন্ট, বায়ু, পানি, মাটি, খাট, চেয়ার, টেবিল, লোহা ইত্যাদি। আর এই সকল কিছুই মূলত পদার্থের তৈরী।
অর্থ্যাৎ, যার ওজন আছে, কোনো স্থানে রাখলে তবে তা নির্দিষ্ট পরিমান জায়গা দখল করে, যার আকার, আয়তন ও আকৃতি লক্ষ্যনীয় এবং বল প্রয়োগের ফলে বাধার সৃষ্টি করে তাকে পদার্থ বলে।
পদার্থ কত প্রকার ও কি কি?
গঠনগত, গুণগত, অবস্থানগত ইত্যাদি বিভিন্ন ভিত্তিতে পদার্থকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।
পদার্থের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে একে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা–
১. কঠিন( solid)
২. তরল এবং ( liquid)
৩. বায়বীয় বা গ্যাসীয়( gaseous)
১। কঠিন (Solid Matter) পদার্থ কাকে বলে
যেসকল পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন আছে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় এর আকার ও আয়তনের কোনোরকম কোনো পরিবর্তন হয় না তাকে কঠিন পদার্থ বলে। যেমন – সোনা, তামা, লোহা, পাথর, ইট ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য:
১. এর নির্দিষ্ট আকার রয়েছে।
২. ওজন আছে।
৩. জায়গা দখল করে থাকে।
৪. তাপ দিলে সংকুচিত প্রসারিত হয়।
৫. বল প্রয়োগর ফলে বাধার সৃষ্টি করে।
এছাড়াও কিছু কিছু কঠিন পদার্থ রয়েছে যাদের তাপ দিলে তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়। যেমন – ন্যাপথলিন।
২. তরল পদার্থ( liquid) পদার্থ কাকে বলে
যেসকল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন রয়েছে কিন্তু কোনো আকার নেই তবে এটি যে পাত্রে রাখা হয় সে পাত্রের আকার ধারণ করে, তাকে তরল পদার্থ বলে। যেমন – পানি, তেল, দুধ ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য:
১. তরল পদার্থের আয়তন আছে কিন্তু এর কোনো আকার নেই।
২. এর ওজন আছে।
৪. জায়গা দখল করে থাকে।
৫. এই তরল পদার্থকে যে পাত্রে রাখা হয় সে পাত্রেই আকার ধারণ করে।
৬. এটি সাধারনত নিচের দিকে গড়িয়ে চলে
৩। বায়বীয় / গ্যাসীয় পদার্থ কাকে বলে
যেসকল পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন কিছুই নেই তবে ওজন রয়েছে তাকে বায়বীয় / গ্যাসীয় পদার্থ বলে।
বৈশিষ্ট্য
১. এই পদার্থের কোনো আকার ও আয়তন নেই।
২. ওজন আছে।
৩. এটি জায়গা দখল করে।
৪. এটিকে ঠান্ডা করলে তরলে পরিণত হয়।
এছাড়াও বস্তুত পক্ষে পদার্থকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা–
১. বিশুদ্ধ পদার্থ ও
২. অবিশুদ্ধ বা মিশ্র পদার্থ।
বিশুদ্ধ :
একটিমাত্র বস্তু নিয়ে গঠিত সমসত্ত্ব পদার্থকে বিশুদ্ধ পদার্থ বলে।
অবিশুদ্ধ বা মিশ্র পদার্থ কাকে বলে
একাধিক বিশুদ্ধ পদার্থের মিশ্রণকে অবিশুদ্ধ পদার্থ বলে, যা সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব দুই-ই হতে পারে।
বিশুদ্ধ পদার্থকে/ উৎপাদন ভেদে পদার্থকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা–
১. মৌলিক ও
২. যৌগিক পদার্থ।
মৌলিক পদার্থ কাকে বলে?
যে পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করলে ওই পদার্থ ছাড়া অন্য আর কোনো পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক পদার্থ বলে। যেমন: কার্বন (C), হাইড্রোজেন (H), লৌহ (Fe) ইত্যাদি।
এখানে কার্বনকে যত ভাগে ভাগ করা হোক না কেন কার্বনই পাওয়া যাবে অন্য আর কিছুই পাওয়া যাবে না। একইভাবে হাইড্রোজেনকে ভাগ করলেও শুধু হাইড্রোজেনই পাওয়া যায়।
যৌগিক পদার্থ কাকে বলে?
যে সকল পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করলে একাধিক মৌলিক পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া যায় সেসকল পদার্থকে যৌগিক পদার্থ বলে। যেমন– পানি (H2O) একটি যৌগিক পদার্থ।
এখানে পানিকে ভাগ করলে হাইড্রোজেন (H2) ও অক্সিজেন (O) পাওয়া যাবে। আর হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন হলো একধরনের মৌলিক পদার্থ। যৌগিক পদার্থকে অসীম সংখ্যক হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
কিছু সহজ প্রশ্ন ও উত্তর: :
১। কোন পদার্থের ক্ষেত্রে পাত্রভেদে আকার পরিবর্তন হলেও আয়তন একই থাকে?
উত্তর- তরল
২। কোন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন নেই?
উত্তর- বায়বীয়
৩। বস্তুর অবস্থা কয়টি?
উত্তর- ৩ টি
৪। বরফ পানির কোন অবস্থা?
উত্তর- কঠিন অবস্থা
৫। কোনো বস্তু যতটুকু জায়গা দখল করে সেটি বস্তুর কী?
উত্তর- আয়তন
৬। একখণ্ড লোহাকে তাপ দিয়ে গলাতে সময় বেশি লাগে কেন?
উত্তর – লোহার দৃঢ়তা বেশি বলে
৭। বাতাসের আকৃতি কীরূপ?
উত্তর – নিরাকার
৮। পানি কোন অবস্থার কঠিন পদার্থ বলে বিবেচিত?
উত্তর – বরফ
৯। পাত্রের আয়তন দ্বারা কিসের আয়তন বের করা হয়?
উত্তর – গ্যাস