নিষেক কি? নিষেকের গুরুত্ব ও তাৎপর্য কি?
নিষেক কি ?
যৌন প্রজননে শুক্রাণু বা পুংগ্যামেট ও ডিম্বাণু স্ত্রীগ্যামেটের মিলন ঘটে এবং তাদের সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস এর মিলনের ফলে যে জাইগোট উৎপন্ন হয় তাকে নিষেক বলে।
নিষেক প্রক্রিয়ায় ২ টি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে।যথা-
১. মিলনের ফলে ডিম্বানু সক্রিয় হয় এবং ভ্রুন সৃষ্টিতে উদ্ভুদ্ধ হয়।
২. নিউক্লিয়াস এর মিলনের ফলে মাতা পিতার যে জিন গুলো বংশগতির বৈশিস্ট্য বহন করে সেগুলো ভ্রুনের প্রতিটি কোষে সঞ্চারিত হয়। একে অ্যাম্ফিমিক্সিস ও বলা হয়ে
নিষেক এর প্রকারভেদঃ
নিষেক প্রক্রিয়া বিশেষ ভাবে সুনির্দিষ্ট। এটি অপরিবর্তনশীল। একটি ডিম্বাণু একবার নিষিক্ত হলে তাকে আর পুনরায় নিষিক্ত করা যায় না।
উদ্ভিদের নিষেকঃ
যৌন প্রজননে শুক্রাণু বা পুংগ্যামেট ও ডিম্বাণু স্ত্রীগ্যামেটের মিলনকে নিষেক বলে়।
দ্বি- নিষেক কি
উদ্ভিদে প্রায় একই সময়ে দুটি পুং জননকোষ এর একটি ডিম্বাণু এবং অপরটি গৌণ নিউক্লিয়াস এর সাথে মিলিত হয় এ ঘটনাকে দ্বি নিষেক বলা হয।
শস্যঃ
দ্বি নিষেক এর সময় একটি পুং গ্যামেট ডিম্বানুর সাথে মিলিত হয় আবার আরেকটি পুং গ্যামেট একই সাথে ডিপ্লয়েড গৌণ নিউক্লিয়াস এর সাথে যুক্ত হয় এবং ট্রিপ্লয়েড শস্য উৎপন্ন করে।
নিষেক প্রক্রিয়া কি
পরাগায়নের ফলে পরাগরেণু স্ত্রী স্তবকের গর্ভমুন্ড এর তরল পদার্থ শোষণ করে প্রস্ফুটিত হয়। পরাগরেণুর অভ্যন্তরের নালী কোষটি পরাগরন্ধ্র পথে পরাগনালিকা তৈরি করে এতে প্রবেশ করে ।পরবর্তীতে জনন কোষটিও পরাগনালিকায় প্রবেশ করে এবং ২ বার বিভাজিত হয় । পরাগনালিকা টি গর্ভমুণ্ড হতে গর্ভদন্ড বেয়ে গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে ডিম্বকের অভ্যন্তরে পুং গ্যামেট দুটি নিক্ষেপ করে । প্রায় একই সময়ে দুটি পুংগ্যামেটের একটি ডিম্বানুর সাথে মিলিত হয়ে নিষেক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এবং অপর পুং গ্যামেট গৌণ নিউক্লিয়াস এর সাথে মিলিত হয় দ্বি নিষেক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে । নিষেকের ফলে ডিপ্লয়েড (2n) জাইগোট সৃষ্টি হয় এবং দ্বি নিষেক এর ফলে ট্রিপ্লয়েড (3n) শস্য কোষে পরিণত হয়। পরবর্তীতে ডিম্বক টি শস্য ও ভ্রুনসহ বীজে পরিণত হয়।
নিষেক পরিণতি কি
ফুলের পরাগায়ন এর ফলে পুংজননকোষ ডিম্বানুর সাথে মিলিত হয়ে নিষেক ঘটায়। নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়া শেষে ফল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ প্রক্রিয়া গর্ভাশয় ধীরে ধীরে ফলে এবং ডিম্বক গুলো বীজে পরিণত হয় । এরপর পরিপক্ক ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে সেগুলো বপন করলে নতুন চারা উদ্ভিদের জন্ম হয়। আবার ফল খাদ্য পুষ্টির যোগান দেয় । জীব জগতের সকল প্রাণীই খাদ্যের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রজাতির উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে ।অন্যদিকে বীজের অঙ্কুরোদগম এর মাধ্যমে জীবের পরবর্তী পুষ্টির চাহিদা পূরন করতে পারে।
প্রাণীদেহে নিষেক
প্রাণীদেহে নিষেক ২ প্রকার। যথাঃ
১. বহিঃনিষেক
২. অন্তঃনিষেক
বহিঃ নিষেক কি
যে প্রক্রিয়া প্রানীদেহের বাইরে ঘটে তাকে বলে বহিঃনিষেক। এ ধরনের নিষেক মূলত পানিতে বাস করে এমন সব প্রাণীদের হয়ে থাকে। যেমনঃ বিভিন্ন ধরনের মাছ, ব্যাঙ ইত্যাদি।
অন্তঃ নিষেক কি
যে নিষেকে প্রানীর স্ত্রী দেহের ভিতরে সংঘটিত হয় তাকে অন্তঃনিষেক বলে। অন্তঃনিষেক মানুষ সহ ডাঙায় বাসকারী প্রাণীর অন্যতম বৈশিস্ট্য।
নিষেক এর গুরুত্ব বা তাৎপর্য কি
যৌন জনন কারী প্রাণীর জন্য নিষেক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। নিম্নে নিষেকের কয়েকটি তাৎপর্য উল্লেখ করা হলাে-
১. নিষে্কের দ্বারা পিতা-মাতার বৈশিষ্ট্যকে সমন্বিত হয়।
২. নিষেকের ফলে জাইগােটে জিনের নতুন সমন্বয় ঘটে এবং এতে জীবে প্রকরণের সূচনা হয়।
৩. নিষেকের ফলে ডিম্বাণু পরবর্তী পর্যায়ের বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত হয়।
৪. নিষেকে জীবের ডিপ্লয়েড সংখ্যাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
৫. নিষেকে ডিম্বাণুর বিপাক হার ও প্রোটিন সংশ্লেষণের হার বৃদ্ধি হয়।
৬. নিষেকের মাধ্যমে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারিত হয়।
৭. নিষেকে জীবের বংশ রক্ষার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত হয়।তাই বলা যায়, নিষেক জীবজগতের টিকে থাকার নিয়ামক অর্থাৎ এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে জীবের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেত।