General Knowledge

গাড়ির নাম্বার প্লেট ও নাম্বারপ্লেট সম্পর্কিত বিস্তারিত ধারনা।

1 min read

গাড়ি থাকলে তার একটি নাম্বার প্লেট থাকবে এটি খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার।

আপনাদের যে কারো যদি একটি গাড়ি থাকে, তাহলে নিশ্চিতভাবে সেই গাড়িতে সামনে ও পিছনে নাম্বার প্লেট থাকবেই নয়তো সে গাড়ি রাস্তায় চলাচলের অনুমোদন পায় না।

আর যদি কারো গাড়ি নাও  থাকে তাহলেও প্রতিদিন এর চলা ফেরায় যত গাড়ি চোখে পড়ে, সেইসব গাড়ির নাম্বার প্লেটে গাড়ির নাম্বার তো নিশ্চই দেখে থাকবেন। প্রতিটি গাড়ির নাম্বার প্লেট আলাদা, একটির সাথে আরেকটির কোনো মিল নেই। কেননা এই নাম্বার প্লেট ই গাড়িটির প্রকৃত পরিচয় বহন করে।

যেমন : ঢাকা মেট্রো ক ১২৩৫, ঢাকা মেট্রো জ- ২৩৪৫ ইত্যাদি ।

এখানে ঢাকা মেট্রো বলতে যে গাড়িটি ঢাকা মেট্রোপলিটনের আওতাধীন তা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে।

কিন্তু শহরের নাম আর সংখ্যার মাঝে একটি বাংলা বর্ণমালাও জুড়ে দেয়া হয় গাড়ির নাম্বার প্লেটে। এই বর্ণমালা দিয়ে কী বুঝানো হয় তা কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি?

আজকের আর্টিকেল টিতে আমি চেষ্টা করবো গাড়ির নাম্বার প্লেট ও এর বর্ণমালা দিয়ে কি বুঝানো হয় সে সম্পর্কিত বিস্তারিত ধারনা দিতে ।

হয়তো আমরা অনেকেই গাড়ির নাম্বারপ্লেটে বাংলা বর্ণমালার অর্থ জানা রয়েছে। আর না জানলেও ক্ষতি নেই।

কেননা আজ আমি আপনাদের এই নিয়েই ধারনা দিবো। তবে চলুন জেনে নেয়া যাক এই বর্ণমালার মাধ্যমে গাড়ির নাম্বার প্লেট কীভাবে প্রকাশ করা হয়ে থাকে।

গাড়ির নাম্বার প্লেট কারা করে?

বর্ণমালা গুলোর অর্থ কী তা জানার আগে আমাদের প্রথমেই জানতে হবে বাংলাদেশে গাড়ির নাম্বার প্লেট মূলত কারা এবং কীভাবে ঠিক করে থাকে।

যখন কেও একটি গাড়ি ক্রয় করে, তখন গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হয়। কেননা রেজিস্ট্রেশন ছাড়া রাস্তায় গাড়ি চালালে তা আইন লঙ্ঘন করা হয়।

আর গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করতে হয়- বাংলাদেশ রোডস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি বা বিআরটিএ থেকে।

বিআরটিএতে কোনো গাড়ির রেজিস্ট্রনের জন্য আবেদন করা হলে প্রথমেই তাদের ফর্মে গাড়ির তথ্যগুলো দিতে হয়।

গাড়ির তথ্য দেয়ার পর বিআরটিএ গাড়িটি কোন ক্যাটাগরিতে পড়ে সেটি নির্ধারণ করে এবং সেই অনুযায়ী গাড়িটির একটি নাম্বার প্রদান করে থাকে।

১৯৭৩ সালে BRTA কর্তৃক অনুমোদিত সকল যানবাহনে নাম্বার প্লেট ব্যবহারের নিয়ম চালু হয়।

নাম্বার প্লেট এর ফরমেট কি?

ক্যাটাগরি অনুসারে গাড়ির নাম্বার নির্ধারণ করার জন্য বিআরটিএ’র একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাট রয়েছে। ফরম্যাটটি হল-

১। প্রথমে থাকবে শহরের নাম

২। তারপর থাকবে গাড়ির ক্যাটাগরি

৩। এবং সর্বশেষ গাড়ির নাম্বার

এই ফরমেটটির মাঝের যে অংশ- গাড়ির ক্যাটাগরি এটি বুঝাতেই বাংলা বর্ণমালা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এবার আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে-

কোন বর্ণ দিয়ে কোন ক্যাটাগরি বুঝানো হয়ে থাকে?

বিআরটিএ যখন কোন গাড়িকে অনুমোদন দেয়, তখন গাড়ির ধরণ অনুসারে গাড়িকে একটি ক্যাটাগরিতে স্থান দেয়া হয়ে।

কোন গাড়িটি কোন ক্যাটাগরিতে পড়ছে, সেই ক্যাটাগরি অনুসারে গাড়ির জন্য একটি বর্ণমালা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

নাম্বারপ্লেট প্রদানের ক্ষেত্রে বিআরটিএ’র নিয়ম অনুসারে মোট ১৯ টি ক্যাটাগরি আছে।

যার মধ্যে একটি ক্যাটাগরি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের যেসকল গাড়ি আছে সেসকল গাড়ি, বাকি ১৮টি ক্যাটাগরিই হচ্ছে জনসাধারণের গাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

যেমন-

১। ক – প্রাইভেটকার, ৮০০ সিসি’র প্রাইভেট কারের নাম্বারপ্লেটে ব্যবহার করা হয়ে থাকে ব্যাঞ্জন বর্ণের প্রথম বর্ণ ক দিয়ে।

২। খ – প্রাইভেটকার, যেসকল প্রাইভেট কার ১০০০-১৩০০ সিসি’র হয়ে থাকে সেগুলোর নাম্বারপ্লেটে খ বর্ণ লিখা থাকে।

৩। গ – প্রাইভেটকার, ১৫০০-১৮০০ সিসি’র যেসব প্রাইভেটকার রয়েছে সেগুলোর নাম্বারপ্লেটে খেয়াল করলে দেখা যাবে গ বর্ণ রয়েছে।

৪। ঘ – জীপগাড়ি, জীপগাড়ির ক্যাটাগরি নির্ধারণের জন্য ঘ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

৫। চ – মাইক্রোবাসের নাম্বার প্লেটে ব্যবহার করা হয় বাংলা বর্ণমালার ৫ম বর্ণ ‘চ’।

৬। ছ – ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস যেগুলো সেগুলোর নাম্বার প্লেটে থাকে ‘ছ’।

আবার লেগুনার জন্যেও এই বর্ণটি নির্ধারিত।

৭। জ – মিনিবাসের ক্যাটাগরি বুঝানোর জন্য নাম্বার প্লেটে ‘জ’ বর্ণটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

৮। ঝ – বড় বাস বা কোস্টার বাসের ক্যাটাগরি ভিন্ন। এই ক্যাটাগরি বুঝাতে ব্যবহার করা হয় ‘ঝ’।

৯। ট – কোন গাড়ির নাম্বার প্লেটে যদি ‘ট’ বর্ণটি লিখা থাকে তাহলে বুঝতে হবে এটি বড় ট্রাকের নাম্বার প্লেট।

১০। ঠ

– নাম্বার প্লেটে ‘ঠ’ থাকলে বুঝতে হবে, নাম্বার প্লেটটি কোন ডাবল কেবিন পিক-আপ  এর নাম্বার প্লেট।।

১১। ড – মাঝারি ট্রাকের নাম্বার প্লেটের দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ড’ বর্ণটি।

১২। ন – কোন গাড়ি যদি ছোট পিক আপ ক্যাটাগরির হয়ে থাকে তাহলে নাম্বার প্লেটে ‘ন’ ব্যবহার করে ক্যাটাগরি নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে।

১৩। প – টাক্সি ক্যাবের জন্য নির্ধারিত ক্যাটাগরি হচ্ছে প ক্যাটাগরি।  ট্যাক্সি ক্যাবের নাম্বার প্লেটে ‘প’ বর্ণটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

১৪। ভ – ২০০০+ সিসি প্রাইভেটকার বুঝানোর জন্য এইসব গাড়ির নাম্বার প্লেটে শহরের নামের পর ‘ভ’ বর্ণমালা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

১৫। ম – পন্য পরিবহন এবং ডেলিভারির জন্য ব্যবহৃত পিক-আপ বুঝানোর জন্য বাংলা বর্ণমালার ‘ম’ বর্ণটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

১৬। দ – প্রাইভেট বা নিজস্ব পরিবহনের জন্য যেসব প্রাইভেট সিএনজি চলাচল করে থাকে সেগুলোর নাম্বার প্লেটে ‘দ’ ব্যবহার করে বুঝানো হয় এইটি একটি প্রাইভেট সিএনজি।

১৭। থ – ভাড়ায়  চালিত সিএনজির ক্ষেত্রে ‘দ’ এর বদলে ‘থ’ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

১৮। হ – যদি কোন মোটরবাইক ৮০-১২৫ সিসি’র হয়ে থাকে তাহলে সেই বাইকের নাম্বারপ্লেটে ‘হ’ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।

১৯। ল – যদি কোন মোটরবাইক ১৩৫-২০০ সিসি’র হয়ে থাকে তাহলে সেই বাইকের নাম্বারপ্লেটে ‘ল’ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।

২০। ই – ভটভটি টাইপের ট্রাকের নাম্বারপ্লেটে অনুমোদন দেয়ার সময় তাতে ‘ই’ বর্ণটি দিয়ে ক্যাটাগরি ঠিক করে দেয়া হয়।

২১। য– প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের গাড়িগুলোগুলো চিহ্নিত করতে নাম্বার প্লেটে ‘য’ বর্ণটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

নাম্বার প্লেট এর গুরুত্ব

এই নাম্বার প্লেট প্রত্যেকটি গাড়ির জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  কেননা এই নাম্বারপ্লেট এর মাধ্যমে যেমন ভাবে গাড়ির পরিচয় পাওয়া যায় ঠিক তেমন ভাবে গাড়ির মালিকের পরিচয় ও বহন করে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় কোনো গাড়ি চুরি হয়ে গেলে বা কোনো এক্সিডেন্ট হলে সে নাম্বার ট্রেস করে খুব সহজেই গাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। সুতরাং গাড়ির নাম্বার প্লেট থাকাটা বাধ্যতামূলক।

আজকে এই পর্যন্তই রইলো। আশা করছি লিখাটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে। ধন্যবাদ।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x