বীমা কি? জীবন বীমা এর প্রকারভেদ কি কি?

জীবন বীমা কি এটা নিয়ে জানার পূর্বেই আমাদের উচিত বীমা কি সে সম্পর্কে জানা। তো চলুন বীমা কি তা জেনে নেই।

আমরা সকলেই কম বেশি বীমা বা জীবন বীমা সম্পর্কে ধারনা রাখি।  কিন্তু আমাদের অনেকের এই সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো ধারনা নেই।  আজকে আমরা এই আর্টিকেলটিতে-  জীবন বীমা কি?  এবং জীবন বীমা এর প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করবো। আশা করছি আপনারা এই লিখাটি থেকে উপকৃত হবেন।

 

বীমা কি?

খুব সহজ কথায় বলতে গেলে, ভবিষ্যতের সম্ভাব্য কোনো  ক্ষতি থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য এটি একটি সত্তাকে একমুঠো অর্থ প্রদানের মতো। এইভাবে, যখন কিছু দুর্ভাগ্যের ঘটনা ঘটে, তখন বীমাকারী আপনাকে উক্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে সাহায্য করে।

বীমা মানে কোন সংস্থার সাথে এমন একটি চুক্তি, যা আপনার অসুস্থতা বা অকাল মৃত্যুতে বা আপনার জীবদ্দশায় কোনো বিপদের সম্মুখীন হলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করে থাকে।

বীমার প্রকারভেদ কি কি?

বীমা মূলত ২ প্রকার। যথা-

১। জীবন বীমা

২। সাধারণ বীমা

যেহেতু আজকে আমাদের প্রধান আলোচ্য বিষয় জীবন বীমা কি সেই সংক্রান্ত। তাই আজ আমরা জীবন বীমা নিয়ে আলোচনা করবো৷

জীবন বীমা কি?

M. N. Mishra বলেন, জীবন বীমা হলো এমন একটি চুক্তি যেখানে বীমাকারী সেলামী বা কিস্তি পরিশোধের প্রতিদানে বিমাকারী বিমাগ্রহীতার মৃত্যুতে বা নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ পরিশোধের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

জীবন বীমা এমন এক ধরনের চুক্তি যা মূলত একজন বীমা গ্রহীতা ও বীমা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পাদিত হয়। এই পদ্ধতিতে বীমা প্রতিষ্ঠান এই নিশ্চয়তা প্রদান করে যে, বীমা গ্রহীতার মৃত্যু হলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বীমাগ্রহীতার যে উত্তরাধিকারী থাকবে তাকে প্রদান করা হবে। সেই উত্তরাধিকারী হতে পারে তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী বা তার কাছের কেউ ।

যেকানো বীমা প্রতিষ্ঠান এর চুক্তির শর্তানুযায়ী কখনো কোন ধরনের মারাত্মক অসুস্থ হলেও বীমা গ্রহীতা অর্থ পেয়ে থাকে। আর বীমা গ্রহীতা এককালীন বা নির্দিষ্ট সময় পরপর বীমা কর্তৃপক্ষকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হয়।

এক কথায় বলতে গেলে, জীবন বীমা এমন এক ধরনের চুক্তি যেখানে এককালীন অর্থ বা নির্দিষ্ট সময় পরপর কিস্তি আকারে পরিশোধের প্রতিদানে বীমাগ্রহীতার মৃত্যুতে বা নির্দিষ্ট বছর সমূহের শেষে বীমাকারী বৃত্তি বা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধের দায়িত্ব গ্রহণ করে।

জীবন বীমা বিবর্তনের ইতিহাস:

১। জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান সর্বপ্রথম ১৮৯৬ সালে ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত হয়।

২।  তারপর ১৮১৯ সালে The Oriental Life Assurances Company গঠিত হয়।

৩। ১৯৭২ সালে ডাক জীবনবীমা চালু হয়।

৪। ১৯৭৪ সালে ALICO বাংলাদেশে তাদের কাজ শুরু করে।

৫। ১৮২৪ সালে Alliance Insurance Company গঠিত হয়।

জীবন বীমার প্রকারভেদ কি কি?

কিছু বিষয়ের উপর ভিত্তি করে জীবনবীমাকে কয়েকটি ভাগে করা হয়ে থাকে। সেগুলো হলো –

১। মেয়াদের ভিত্তিতে

২। প্রিমিয়াম পরিশোধ পদ্ধতির ভিত্তিতে

৩। মুনাফার অংশগ্রহণের ভিত্তিতে

৪। বিমাগ্রহীতার সংখ্যার ভিত্তিতে

৫। বীমাদাবি পরিশোধ পদ্ধতির ভিত্তিতে।

১। মেয়াদের ভিত্তিতে জীবন বীমার প্রকারভেদ কি কি?

মেয়াদের ভিত্তিতে জীবন বীমা তিন প্রকার। যথাঃ

১.১। মেয়াদী বীমাপত্র

১.২। আজীবন বিমাপত্র

১.৩। সাময়িক বীমাপত্র

১.১। মেয়াদী বীমা কি

: যে বীমাপত্রের মাধ্যমে এই প্রকারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে, বিমাগ্রহীতা নির্দিষ্ট বয়সে পদার্পণ করার পর বীমাপত্রে উল্লেখিত নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান তাকে করা হবে।

অথবা উক্ত সময়ের পূর্বে বিমাগ্রহীতার মৃত্যু হলে তার উত্তরাধিকারী বা মনোনীত ব্যক্তি বীমা পত্রে উল্লেখিত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ  পাবে। এ বীমাপত্রকে মেয়াদী বীমাপত্র বলা হয়।

১.২। আজীবন বীমা কি

যেই বীমা চুক্তির মাধ্যমে বিমাগ্রহীতা কে তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত টাকা পরিশোধ করতে হয় এবং বীমাকারী বীমাগ্রহীতার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারী বা মনোনীত ব্যক্তিকে বীমাপত্রে উল্লেখিত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং উল্লেখ্য তার উত্তরাধীকারী কে প্রদান করে তাকে আজীবণ বীমাপত্র বলা হয়।

১.৩। সাময়িক বীমা কি

এই বীমার মেয়াদ সাধারণত দুই থেকে সাত পর্যন্ত হতে পারে। এ সময়ের আগে বীমাকৃত ব্যাক্তি যদি মারা যায় তবে বীমাদাবির অর্থ পরিশোধ করা হয়। আর বীমাকৃত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মারা না গেলে বীমাদাবি পাবেনা।

২। প্রিমিয়াম পরিশোধ পদ্ধতির ভিত্তিতে প্রকারভেদ কি কি?

প্রিমিয়াম পরিশোধ পদ্ধতির ভিত্তিতে জীবন বীমা দুই প্রকার।

যথাঃ

২.১। একক কিস্তি বীমাপত্র

২.২। সমকিস্তি বীমাপত্র

৩। মুনাফায় অংশগ্রহণের ভিত্তিতে জীবন বীমার প্রকারভেদ কি কি?

মুনাফায় অংশগ্রহণের ভিত্তিতে জীবন বীমা দুই প্রকার।যথা-

৩.১। একক জীবন বীমাপত্র

৩.২। বহু জীবন বীমাপত্র

৪।  বীমাদাবি পরিশোধ পদ্ধতির ভিত্তিতে জীবন বীমার প্রকারভেদ কি কি?

বীমাদাবি পরিশোধের পদ্ধতির ভিত্তিতে জীবন বীমা দুই প্রকার।যথাঃ

৪.১। এককালীন বীমাপত্র

৪.২। বৃত্তি বীমাপত্র

জীবন বীমা সংক্রান্ত কিছু বিষয়-

প্রিমিয়াম কি?

যদি বীমাকারী বীমাগ্রহীতাকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে বীমা গ্রহীতার কাছ থেকে, বিভিন্ন কিস্তিতে  অর্থ গ্রহণ করে তবে তাকে প্রিমিয়াম বলা হয়।

প্রিমিয়াম নির্ধারণের পদ্ধতি কি?

এটি হচ্ছে সর্বাধিক প্রাচীন একটি পদ্ধতি অর্থাৎ নিরূপণ পদ্ধতি।

যা কিনা মৃত্যু সম্ভাবনার হার এর উপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়। মৃত্যু সম্ভাবনার হার বাড়লে প্রিমিয়ামও বাড়ে ।

বোনাস

বীমা কোম্পানির মূল্যায়নের পর উদ্বৃত্ত প্রকাশিত হলে তার একটা অংশ মুনাফা যুক্ত বীমাপত্রের মালিকদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হয়। এ ব্যবস্থাকে বোনাস বলা হয়।

বার্ষিক বৃত্তি

নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর পরিশোধ করাকে বার্ষিক বৃত্তি বলা হয়।

বার্ষিক বৃত্তি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন-

১। সাধারণ বার্ষিক বৃত্তি: যে বার্ষিক বৃত্তির মাধ্যমে ভাতাভোগী নির্দিষ্ট হারে সারা জীবন ধরে ভাতা পেতে থাকে তাকে সাধারণ বার্ষিক বৃত্তি বলে।

২। তাৎক্ষণিক বৃত্তি: যে ব্যবস্থায় বীমা কোম্পানিকে চুক্তি অনুযায়ী অর্থ প্রদানের পরপরই ভাতা প্রদান কার্যকরী হয়,তাকে তাৎক্ষণিক বৃত্তি বলে।

৩। প্রতিশ্রুতি বৃত্তি: বৃত্তি গ্রহীতা বৃত্তি চুক্তিতে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যাপ্ত ভাতা প্রাপ্তি বিষয়টি নিশ্চিত করে চুক্তি সম্পাদন করতে পারে। যাকে বলা হয় প্রতিশ্রুতি বৃত্তি।

৪। একক জীবন বৃত্তি: যেকোনো ধরনের ভিত্তি চুক্তিতে ভাতা ভোগীর সংখ্যা সকল অবস্থায়়় একজন হলে তাকে একক জীবন বৃত্তি বলা হয়ে থাকে।

৫। যৌথ জীবন বৃত্তি: যে বৃত্তি ব্যবস্থায় দুই বা ততোধিক ব্যক্তি যৌথ জীবনকাল পর্যন্ত ভাতা পেয়ে থাকে  তাকে যৌথ জীবন বৃত্তি বলে।

৬। সাময়িক বৃত্তি: এ ধরনের চুক্তিতে ভাতা প্রদানের একটা নির্দিষ্ট সময় বা মেয়াদ উল্লেখ করা থাকে।

সমর্পণ মূল্য কি?

বীমাপত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই বীমাপত্র শেষ করলে যে মূল্য বা প্রতিদান চাওয়া হয়, তাকে সমর্পণ মূল্য বলে।

বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৮০% সমর্পন মূল্য দেওয়া হয়।

যদি বীমার মেয়াদ সর্বনিম্ন দুই বছর না হলে সমর্পণ মূল্য দেওয়া হয় না।

আজ এই পর্যন্তই। আশা করছি আপনারা জীবন বীমা কি এই সম্পর্কে পূর্নাঙ্গ ধারনা পেয়েছেন। ধন্যবাদ।

Similar Posts