IAD কি বা কাকে বলে? কম্পিউটার আসক্তির কুফল
আমরা সকলেই কম্পিউটার আসক্তির কুফল এর ব্যাপারে শুনেছি বা জেনেছি। কিন্তু এই কম্পিউটার বা ইন্টারনেট আসক্তি কি এবং এর কুফল ই বা কি তা নিয়ে আমরা অনেকেই এখনও বিস্তারিত কিছুই জানি না।
তো আজকে আমি আপনাদেরকে IAD কি? কম্পিউটার আসক্তির কুফল এবং এর থেকে কিভাবে বাঁচা যায় সে সম্পর্কে ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করবো। চলুন শুরু করা যাক।
IAD কি কম্পিউটার আসক্তির কুফল
IAD এই শব্দের পূর্ণরূপ হলো – “Internet Addition Disorder”.
এই শুনেই আন্দাজ করা যায় যে ইন্টারনেট আসক্তি বিষয়ক কিছু একটা। অর্থ্যাৎ যারা খুব বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে তাদের জন্য আইএডি (IAD) নামটি ব্যবহার করা হয়। আর যখন কেও অনেক বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করে তখন সেটি আসক্তিতে পরিণত হয়ে যায়।
কম্পিউটার আসক্তির কুফল
আজকাল দেখা যায় অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা তাদের শৈশব কাটিয়ে দেয় কম্পিউটার বা ইন্টারনেটে মুখ গুঁজে থেকে। অথচ এই অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের বেড়ে ওঠার জন্য মাঠে মাঠে ছোটাছুটি করতে হয়, খেলাধুলা করতে হয়। যে সময় খেলার মাঠে খেলার কথা ছিলো সে সময় ঘরের কোনায় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকাটা মোটেই ভালো কাজ নয় শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য।
যদি কেও কম্পিউটারে আসক্ত হয়ে পড়ে তবে সে আর কম্পিউটারের বাইরের কোনো কথা চিন্তাও করা যায় না।
কম্পিউটার আসক্তির কুফল-
প্রচুর মূল্যবান সময় নষ্ট হয়।
প্রচুর পরিমান অর্থ ব্যয় হয়।
অনেকক্ষণ ধরে কম্পিউটার নিয়ে গেইম খেলে বা বসে থাকার ফলে শরীরের দেহভঙ্গি ঠিক থাকে না এ কারণে মাংসপেশির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে।
ঘাড়, কোমরে ব্যাথা হয়।
ঘাড়ের মাংসপেশি অস্বাভাবিক ভাবে শক্ত হয়ে যায়।
কাঁধে ও হাতে অসহ্য ব্যাথা হতে পারে।
মাথা ব্যাথা করা,
চোখ ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
কম্পিউটার আসক্তির কুফল থেকে বাঁচার উপায় কি?
কম্পিউটার এর নেশা থেকে মুক্তির উপায় গুলোর মধ্যে জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপায় নিচে আলোচনা করা হল –
১. প্রয়োজন ছাড়া ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট থেকে দূরে থাকা:
কম্পিউটার আসক্তি কুফল কাটাতে হলে প্রথমেই আপনাকে মনের দিক থেকে দৃঢ় এবং শক্ত হতে হবে।
নিজেকে নিজে চ্যালেঞ্জ করতে হবে যে- আপনি যদি নিয়মিত দিনে ১০ ঘন্টা করে ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করেন তবে, তা কমিয়ে প্রথম সপ্তাহে দৈনিক ব্যবহার ৯ ঘন্টায় নামিয়ে আনতে।
এরকম ভাবে, প্রতি সপ্তাহে এক ঘন্টা করে দৈনিক ইন্টারনেট ব্যবহার কমিয়ে আনতে থাকুন।এবং এই চ্যালেঞ্জ জিতলে প্রতি সপ্তাহে জেতার জন্যে নিজেকেই নিজে ভালো কিছু ট্রিট উপহার দিন।
২. সারাদিনে কয়েক ঘন্টা সময় প্রকৃতির মাঝে থাকা:
প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক সেই আদিম কাল থেকেই। আর, প্রকৃতির মধ্যে মানুষ থাকলে, তার মন নিজে থেকেই ভালো হয়ে ওঠে।
তাই, আমাদের চেষ্টা করা উচিত, অন্ততপক্ষে, সারাদিনে ঘন্টাখানেক সময় কোনো পার্ক বা সবুজ ময়দানে খোলা হাওয়ার মধ্যে কাটাতে।
এছাড়াও আপনি আপনার কোনো সঙ্গীকে নিয়ে লং-ওয়াকেও যেতে পারেন।
এতে, আপনার মন ইন্টারনেট বা কোনো রকমের ডিভাইস থেকে সরে আসবে কিছুক্ষণের জন্য হলেও।
৩. বই বা ম্যাগাজিন পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলা:
আপনার ভালোলাগার বিষয়গুলো ক্রাইম থ্রিলারও হতে পারে, আবার কমেডিও হতে পারে।
আর, এই পৃথিবীতে অসংখ্য বই ও ম্যাগজিন সবই রয়েছে।
বই আমাদের মনোসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করার পাশাপাশি কম্পিউটার এডিকশন কমাতেও সাহায্য করবে।
কারণ, বইয়ের নেশা একবার করতে পারলে, তা আপনার জ্ঞান বাড়ানোর পাশাপাশি সৃজনশীলতাও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
আর কোনো মানুষ যখন কোনো সৃজনশীল কাজের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে, তখন সে মন থেকে খুশি থাকে ও ইন্টারনেট মাধ্যমের ব্যবহারকে ততটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে না।
তাছাড়া সাইকোলজির মতে, যে বইয়ের ছাপা অক্ষর মানুষের মনোসংযোগ বৃদ্ধিতে সহায়কও বটে।
এছাড়াও
একাকিত্ব থেকে কিন্তু মানুষের ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি আসাটা মোটেও বিরল কোনো ঘটনা নয়।
তাই, আপনি যদি কখনও নিজেকে একা অনুভব করেন, অথচ কোনো মানুষের সঙ্গ করতে চাইছেন না। তবে সে ক্ষেত্রে আপনার সুবিধা ও পছন্দমতো কোনো পোষ্য রাখতে পারেন।
তার যত্ন নেওয়া খাওয়া-দাওয়ার পিছনে সময় দিতে গেলে দেখবেন ইন্টারেন্ট থেকে মন অনেকটাই সরে এসেছে।
অর্থ্যাৎ, আমরা চাইলেই পারি কম্পিউটার এর প্রতি আসক্তি কমাতে। কিন্তু এতে আমাদের নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি জরুরি। তবেই কেবল এই আসক্তি থেকে বের হওয়া সম্ভব। নয়তো কখনোই সম্ভব না।
আশা করছি IAD ও কম্পিউটার আসক্তির কুফল আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে। ধন্যবাদ।