মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ও হযরত আয়েশা (রা.) কে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও তার সহকর্মী নবীন কুমার জিন্দালের অশ্লীল আপত্তিকর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝরের মুখে ভারত অনেকটা কোণঠাসা। মধ্যপ্রাচ্যে দেশগুলোসহ লিবিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান রাষ্ট্রীয়ভাবে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। মালদ্বীপও এর প্রতিবাদ জানাতে দ্বিধা করেনি।

কিন্তু, এর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলমানের দেশ হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশ। গুজরাটে মুসলিম গণহত্যার নেতৃত্বে থাকায় যিনি ইতোমধ্যে গুজরাটের কসাই হিসাবে পরিচিত। ভারতের হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল বিজেপি’র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সাথে সখ্যতার খাতিরে শেখ হাসিনা এখনো এবিষয়ে মুখ খুলেননি। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ ইতোমধ্যেই সভা সমাবেশের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ভারতীয় পণ্য ও ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল বর্জনের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল।

জাতীয় সংসদ অধিবেশন চলছে। সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের ৭টি আসন রয়েছে। তাদের পক্ষ থেকেও সংসদে এবিষয়ে এখনো পর্যন্ত আলোচনার দাবী উঠেনি। বিশ্বব্যাপি রাষ্ট্রীয়ভাবে ভারত সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানানো হলেও বাংলাদেশের সংসদে সরকারি ও বিরোধী দল মিলে নীরব থাকার ঘটনাটি দেশের মানুষকে আহত করেছে।

শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে ভারতের প্রকাশ্য হস্তক্ষেপের বিষয়টি সকলেরই জানা রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের আগে তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশ সফরে এসে ২০ দলীয় জোটকে নির্বাচনের বাইরে রেখে কিভাবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখা যায় সেই দূতিয়ালি করেছিলেন। মরহুম এরশাদের সাথে বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব যা বলেছিলেন সেটা পরবর্তীতে এরশাদ পাবলিক মিটিংয়ে বলে দিয়েছিলেন। এরশাদকে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল ভারতের পক্ষ থেকে সেটাও বলেছিলেন প্রকাশ্যেই। ভারতের সেই ঋন শোধ করছেন শেখ হাসিনা মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিষয়ে চুপ থেকে।

শেখ হাসিনার ভারত তোষণ নীতি নিয়ে বাংলাদেশের দলদাস মিডিয়া কোন শব্দ করছে না। তবে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা শেখ হাসিনার চুপ থাকার রহস্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
“Narendra Modi: বহু দেশ নিন্দা করলেও মৈত্রী, ঘরে শান্তির লক্ষ্যে নূপুর-মন্তব্য নিয়ে এখনও চুপ ঢাকা”-শিরোনামে বৃহস্পতিবার (৯ জুন) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা।
আনন্দবাজার পত্রিকার দীর্ঘ এ প্রতিবেদনের শেষ প্যারায় বলা হয়েছে কেন শেখ হাসিনা চুপ করে আছেন। আনন্দবাজার উল্লেখ করেছে-“ প্রশ্ন উঠছে, অন্য দেশগুলির সঙ্গে গলা মিলিয়ে হাসিনা সরকার নূপুর-কাণ্ডের নিন্দা করে বিবৃতি দিল না কেন? এখানকার রাজনৈতিক মহল বলছে, তার কারণ মূলত দু’টি। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বহু ঝড়ঝাপটার পর এখন আবার ‘সোনালি অধ্যায়ের’ মুখ দেখছে। রেল, স্থল, সমুদ্র এবং বাণিজ্য সংযোগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাত্রা বাড়ছে। এই বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার ভারত সফরে আসার কথা। ওই সফরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আরও কিছু নতুন দিক খোলার সম্ভাবনা। ফলে এখন এমনিতেই কোণঠাসা মোদী সরকারকে বিদ্ধ করতে চাইছেন না শেখ হাসিনা, কূটনৈতিক কারণে। দ্বিতীয়ত, বিষয়টিতে বাংলাদেশও শামিল হয়ে গেলে এ দেশে মৌলবাদী, উগ্রপন্থী জামাত গ্রামে-গঞ্জে রাস্তায় নেমে নৈরাজ্য তৈরি করতে পারে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে যত চর্চা হবে, রোষ তত বাড়তে পারে, এবং এখানকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা হতে পারে বলে জানাচ্ছে ঢাকার সরকারি সূত্র। এই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার কিছু কট্টরপন্থী গোষ্ঠী মিছিলের পরিকল্পনা করেছে বলে সূত্রের খবর। তাদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে।”
আনন্দবাজারের এই প্রতিবেদনের শেষ লাইনটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা নিজেই শুধু চুপ করে আছেন তা কিন্তু নয়। যারা প্রতিবাদে সোচ্চার হতে চাইছেন তাদেরকেও প্রতিবাদ থেকে বিরত থাকতে বোঝানোর চেষ্টা চলছে।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিজেপি মুখপাত্রদের নিন্দনীয় মন্তব্যের জেরে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান-সহ পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এবং ইসলামী সংগঠনের তীব্র রোষের মুখে মোদী সরকার। কিন্ত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলির এই রোষানলের তালিকায় এখনও পর্যন্ত ব্যতিক্রম প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ।

এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি বিবৃতি নেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় থেকে। তবে ভারতের এই ঘটনাকে সামনে নিয়ে এসে বাংলাদেশের মুসলিম সমাজ এমনকি, সংখ্যালঘুরাও দাবি করছেন, ধর্মীয় সহিষ্ণুতার প্রশ্নে পশ্চিমা দুনিয়া তাদের যতই সমালোচনা করুক না কেন, হাসিনা সরকারের জমানায় পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভারতের চেয়ে অনেকটাই ভাল।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সেল রয়েছে। এই সেলের এক অফিসারের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, “গত বছর মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যে প্রতিবাদ (আনন্দবাজারের ভাষায়- অরাজকতা) হয়েছিল, তার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের প্রত্যেকেই এখন কারাগারে”।

সূত্রঃ আমার দেশ

Rate this post

By Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.