মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে ১১ টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। একই সাথে কোনো রকম প্রতিশোধ, ভীতি প্রদর্শন এবং হয়রানির ছাড়াই মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করা সংস্থাগুলোকে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানানো হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকার এর নিবন্ধন বাতিলের প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার (৯ই জুন) বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করা ১১টি আন্তর্জাতিক সংস্থা এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন থেকেই রাষ্ট্রীয় রোষানলে থাকা বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর নিবন্ধন গত ৬ জুন বাতিল করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন এনজিও বিষয়ক ব্যুরো। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আমেরিকান সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে কাজ করা মানবাধিকার সংস্থা ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার প্রতিশোধের একটি প্যাটার্নের অংশ হিসাবেই অধিকারের নিবন্ধন বাতিল করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই অধিকার ১৯৯৪ সাল থেকে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত করছে এবং দেশে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত তৈরি করছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নিষেধাজ্ঞার পরপরই, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো অধিকারকে একটি চিঠি পাঠায়। যার মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়ে নিহত এবং ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে গুম হয়ে যাওয়া প্রত্যেকের নাম এবং ঠিকানা সহ নির্দিষ্ট তথ্য এবং নথি দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পর থেকে অধিকারের সদস্যরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা অতিরিক্ত নজরদারি এবং হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছিলেন। বাংলাদেশ সরকার এর আগেও অধিকারের কাজ স্তব্ধ করতে তাদের সদস্যদের হয়রানি করেছিল।
২০১৩ সালে অধিকার এর সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে বিতর্কিত ৫৪ ধারায় আটক করে ৬২ দিন এবং সংস্থাটির পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানকে ২৫ দিন কারাগারে আটক রাখা হয়। ২০১৩ সালের মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সরকারী বাহিনীর হাতে নিহতদের তালিকা তৈরি করেছিল অধিকার। এরপরই অধিকারের বিরুদ্ধে “বানোয়াট প্রতিবেদন” তৈরির অভিযোগ এনে তাদেরকে আটক করে জেলে রাখা হয়েছিল।
মানবাধিকার রক্ষাকারী ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পদ্ধতিগত দমন-পীড়নের বিষয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
অধিকারের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্তের সময় এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর বর্ণনা অনুযায়ী, গুম-খুনসহ বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে অধিকারের নিজস্ব ওয়েবসাইটে যে তথ্য উপস্থাপন করেছে, তাতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিদারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে অধিকার বরাবরই নিখুঁত অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য পরিবেশনের চেষ্টা চালিয়েছে। মানবাধিকারের বিষয়ে সাহসী পদক্ষেপের ফলে অধিকার সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কারও দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতি দেয়া সংস্থাগুলো হলো:
Amnesty International
Anti-Death Penalty Asia Network (ADPAN)
Asian Federation Against Involuntary Disappearances (AFAD)
Capital Punishment Justice Project
Elios Justice, Monash University
Human Rights Watch
International Coalition Against Enforced Disappearance (ICAED)
International Federation for Human Rights (FIDH), within the framework of the Observatory for the Protection of Human Rights Defenders
Robert F. Kennedy Human Rights
World Organisation Against Torture (OMCT), within the framework of the Observatory for the Protection of Human Rights Defenders
Human Rights First
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরই মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা এই সংগঠনটি রাষ্ট্রীয় রোষানলে পড়ে। আর্থিক ফান্ড আটকে দেওয়া থেকে শুরু করে নানামুখী হয়রানির শিকার হতে হয় সংগঠনটির সাথে সংশ্লিষ্টদের। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উদঘাটন করায়, এক পর্যায়ে ২০১৩ সালে “অধিকার” এর সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। নেওয়া হয়েছিল রিমান্ডে। তিনি পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি পান।
রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে আদিলুর রহমান খানসহ সংস্থাটির পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টে মামলাও দায়ের করে সরকার। নানামুখী চাপে রেখে ‘অধিকার’-এর কার্যক্রম রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টা করেছিল সরকার। কিন্তু “অধিকার” তার মানবাধিকার সুরক্ষার নীতি ও আদর্শে অটল থেকে লড়াই অব্যাহত রেখেছিল। সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারায় শেষ পর্যন্ত নিবন্ধন বাতিল করা হলো।
২০১৫ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে থেকেই “অধিকার” এর নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বাংলাদেশের এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর কাছে “অধিকার” এর নিবন্ধন পুনর্নবায়নে নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিল। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে “অধিকার” এর দায়ের করা একটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এমনটা জানতে চেয়েছিল।
কিন্তু, হাইকোর্টের ব্যাখ্যার সাড়া তিন বছর পর, অর্থাৎ ২০২২ সালে দেয় এনজিও বিষয়ক ব্যুরো। ২০২২ সালের ২৬শে মে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার সর্বশেষ শুনানি হয় এবং পরবর্তী শুনানি ২০২২ সালের ৮ জুন হওয়ার কথা রয়েছে। বিষয়টি বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও এনজিও বিষয়ক ব্যুরো ইচ্ছাকৃতভাবেই “অধিকার” এর নিবন্ধন বাতিল করেছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের র র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে কাজ করা মানবাধিকার সংস্থা ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রতিশোধের একটি প্যাটার্নের অংশ বলে মনে হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই সংস্থাটি ১৯৯৪ সাল থেকে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত করছে এবং দেশে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত তৈরি করছে।
কিন্তু বছরের পর বছর নিষ্ক্রিয়তার পর, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাগুলি পাস হওয়ার পরপরই, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো অধিকারকে একটি চিঠি পাঠায়, যার মধ্যে বিচারবহির্ভূতভাবে নিহত এবং ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে গুম হয়ে যাওয়া প্রত্যেকের নাম এবং ঠিকানা সহ নির্দিষ্ট তথ্য এবং নথির অনুরোধ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পর থেকে অধিকারের সদস্যরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা অতিরিক্ত নজরদারি এবং হয়রানির মুখোমুখি হওয়ার কথা জানিয়েছেন। বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ এর আগে অধিকার কাজকে স্তব্ধ করতে তাদের সদস্যদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।
২০১৪ সালে অধিকার এর সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান এবং পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানকে যথাক্রমে ৬২ দিন এবং ২৫ দিনের জন্য আটক করা হয়েছিল। ২০১৩ সালের মে মাসে সরকারী বাহিনীর হাতে বিক্ষোভের সহিংস তথ্যাদি নথিভুক্ত করার কারণে “বানোয়াট প্রতিবেদন” তৈরির অভিযোগ এনে তাদেরকে এভাবে আটকে রাখা হয়।
মানবাধিকার রক্ষাকারী ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পদ্ধতিগত দমন-পীড়নের বিষয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করা, “অধিকার” এর নিবন্ধন পুনর্নবায়ন, এবং বিচারিক পর্যায়েসহ সকল ধরনের হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ করার দাবিও জানানো হয়।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর বর্ণনা অনুযায়ী, গুম-খুনসহ বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে অধিকারের নিজস্ব ওয়েবসাইটে যে তথ্য উপস্থাপন করেছে, তাতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিদারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে অধিকার বরাবরই নিখুঁত অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য পরিবেশনের চেষ্টা চালিয়েছে। মানবাধিকারের বিষয়ে সাহসী পদক্ষেপের ফলে অধিকার সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কারও দেওয়া হয়েছে।
সূত্রঃ আমার দেশ