সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন জ্বলছে, কিছুক্ষণ পরপর বিস্ফোরণ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে এখনো আগুন জ্বলছে। কিছুক্ষণ পরপর শোনা যাচ্ছে বিস্ফোরণের শব্দ। আজ রোববার সকাল ৭টা থেকে সাড় ৮টা পর্যন্ত সরেজমিনে এই চিত্র দেখা গেছে।
কন্টেইনার ডিপোর বাইরে অবস্থান করছেন ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা। তাঁরা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন।
লাশ উদ্ধার হলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। সবশেষ আজ সকাল ৮টার দিকে দুটি লাশ উদ্ধার করা ফায়ার সার্ভিস।
গতকাল শনিবার রাতে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের দুই কর্মীসহ অন্তত ১৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-সংলগ্ন সীতাকুণ্ডের শীতলপুর এলাকায় ৭০ কানি জায়গার ওপর কন্টেইনার ডিপোটি অবস্থিত।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান ও সুইজারল্যান্ডের এক ব্যক্তির যৌথ মালিকানায় ডিপোটি চালু হয়। আমদানি-রপ্তানি করা বিভিন্ন পণ্য এই ডিপোতে রাখা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, ডিপোর ভেতরে ৫০০ মিটারের একটি টিনের শেড রয়েছে। এই শেডের টিনের পুরো অংশ উড়ে গেছে। বাতাসে উড়ছে ছাই। আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে টিনের ভাঙা অংশ।
কিছুক্ষণ পরপর শোনা যাচ্ছে বিস্ফোরণের শব্দ। শেডের আশপাশে ঘুরে দেখা যায়, কোথায় আগুন জ্বলছে। কোথাও ধোঁয়া উড়ছে। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে পুরো এলাকা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ডিপোর শ্রমিক সুপারভাইজার মোহাম্মদ মহসিন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিস্ফোরণের পর ডিপোতে আগুন ধরে যায়। ডিপো থেকে শ্রমিকদের বের করে দিতে সঙ্গে সঙ্গে বাজিয়ে দেওয়া হয় সতর্ক-ঘণ্টা। তবে সব শ্রমিক বের হতে পারেননি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ডিপোর শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫০০ মিটার শেডের ভেতরে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নামে একটি কেমিক্যাল রয়েছে। এগুলো বিদেশে রপ্তানি করা হয়। রপ্তানির জন্য হাটহাজারীর ঠান্ডাছড়ি কারখানায় উৎপাদিত কেমিক্যাল কন্টেইনারে করে এই ডিপোতে রাখা হয়।
ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপপরিচালক আনিসুর রহমানকে আজ সকালে ডিপোর গেটের সামনে তাঁর লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। তিনি ঘটনাস্থলের বিভিন্ন তথ্য নিচ্ছিলেন।
জানতে চাইলে আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কন্টেইনার ডিপোটিতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নামে বিপুল পরিমাণ কেমিক্যাল রয়েছে। তবে ঠিক কী কারণে বিস্ফোরণ ঘটল, তা এখনো জানা যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু কাছাকাছি যাওয়া যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর পর ভেতর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ আসছে।
আনিসুর রহমান আরও বলেন, চট্টগ্রামের পাশাপাশি কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ফায়ার সার্ভিসের ২৩টি ইউনিটের ১৮৩ জন কর্মী আগুন নেভাতে কাজ করছেন। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর ক্ষয়ক্ষতিসহ আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যাবে।
ঘটনাস্থলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। বাইরে উৎসুক জনতার ভিড় আছে। অহেতুক লোকজন যাতে এখানে ভিড় না করতে পারে, উদ্ধারকাজে ব্যাঘাত ঘটাতে না পারেন, সে জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।
কন্টেইনার ডিপোর দক্ষিণ পাশে স্বেচ্ছাসেবক দল গাউছিয়া কমিটির সদস্য তাওহীদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভেতর থেকে কোনো লাশ উদ্ধার হলে তা নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। আজ সকাল থেকে ৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।’
গাউছিয়া কমিটির পাশাপাশি আল মানাহিলসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে ডিপোর আশপাশে অবস্থান করতে দেখা গেছে। উদ্ধারসহ নানা কাজে তাঁরা সহায়তা করছে।