মানবাধিকার কাকে বলে? মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের সম্পর্ক, মানবাধিকারের পরিধি ও তাৎপর্য, মানবাধিকার সকল মানুষের অধিকার, মানবাধিকার আদায়যোগ্য, মানবাধিকার সার্বজনীন, জাতিসংঘের ঘোষণায় বর্ণিত মৌলিক মানবাধিকারের নীতিসমূহ

মানবাধিকার কাকে বলে?

মানবাধিকার বলতে বোঝায় প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অতি আবশ্যিক সেই সকল সুযোগ-সুবিধা যেগুলি জন্মসূত্রে প্রাকৃতিক ভাবে মানুষ অর্জন করে থাকে।

সাধারণত অধিকার বলতে বোঝায় রাষ্ট্রীয় আইন কর্তৃক স্বীকৃত এবং সংরক্ষিত কিছু সুযোগ সুবিধা কিন্তু মানবাধিকার হলো সেই সকল সার্বজনীন মানবিক অধিকার যেগুলি সীমিত ও সংকীর্ণ রাষ্ট্রীয় অধিকারের থেকে অনেক বেশি এবং সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ধারণের জন্য একান্ত অপরিহার্য।

মানুষ পৃথিবীতে জন্মগতভাবে যে সকল সুযোগ-সুবিধার দাবিদার হয় এবং যা ছাড়া মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে না সে সকল সুযোগ-সুবিধা হচ্ছে মানবাধিকার। মানবাধিকার অধিকারেরই একটি বিস্তৃত রূপ, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আইনগত ও নৈতিক অধিকারগুলোর মধ্যে সেসব অধিকারকে মানবাধিকার বলা হয় যা পৃথিবীর সকল মানুষ শুধু মানুষ হিসেবে দাবি করতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে মানব পরিবারের সকল সদস্যদের জন্য সহজাত, সর্বজনীন ও হস্তান্তরযোগ্য কিছু অধিকারই হলো মানবাধিকার।

মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের সম্পর্ক

মৌলিক অধিকার বলতে সেই অধিকার বুঝায় যা সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংবিধানে সন্নিবেশিত ও বলবৎযোগ্য। রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যেই মৌলিক অধিকার উপভোগযোগ্য। অপরপক্ষে মানবাধিকার আন্তর্জাতিক সংস্থা কতৃৃক ঘোষিত ও গৃহীত এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপভোগযোগ্য। সংবিধান কর্তৃক গৃহীত হওয়ার ফলে মৌলিক অধিকার সুস্পষ্ট এবং অধিকতর দৃঢ়তার সাথে বলবৎযোগ্য। কিন্তু মানবাধিকার সুস্পষ্ট হলেও জনমত সৃষ্টি করা গেলেও তাকে বিরত করা সব সময় সম্ভব হয় না। এসব পার্থক্য থাকলেও এরা একে অপরকে প্রভাবিত করে। মৌলিক অধিকারের ধারণা থেকেই মানবাধিকারের সৃষ্টি। অপরপক্ষে, মৌলিক মানবাধিকারসমূহ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে মৌলিক অধিকারের কামানাকে বেগবান করে। তাই এরা একে অপরের পরিপূরক।

মানবাধিকারের পরিধি ও তাৎপর্য

মানবাধিকার বলতে কি বোঝায়, এর পরিধি কতটুকু বিস্তৃত তা যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাব যে,

প্রথমত, মানবাধিকার এমন কিছু অধিকারকে নির্দিশ করে যা ‘শুধু মানুষের, পশু পাখি বা গাছপালার নয়।

দ্বিতীয়ত, মানবাধিকার হচ্ছে সকলের অধিকার, কোন শ্রেণী বা দলের নয়।

তৃতীয়ত, মানবাধিকার সকল মানুষের সমানভাবে প্রাপ্য, কারো কম বা কারো বেশি নয়।

চতুর্থত, মানবাধিকার কোন বিশেষ মর্যাদা বা সম্পর্কের উপর নির্ভরশীল নয়।

পঞ্চমত, মানবাধিকার হচ্ছে এমন অধিকার যা আদায়যোগ্য।

ষষ্ঠত, মানবাধিকার সমগ্র বিশ্বের সর্বস্থানে, সর্বকালের সকল নির্ভরশীল নয়; মানুষ যেহেতু মানুষ সেহেতু সে এসকল অধিকার লাভ করে।

মানবাধিকার সকল মানুষের অধিকার

মানবাধিকার হচ্ছে সকল মানুষের অধিকার। এ অধিকার কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, শ্রেণী বা দেশের অধিকার নয়। সকল মানুষ অভিন্ন নয়, বরং প্রত্যেক মানুষই স্বতন্ত্র, কিন্তু জীবনের বৃহৎ এলাকায় সকল মানুষ অভিন্ন, এক। এই অভিন্ন এলাকায় যেকোনো ধরনের বৈষম্য মানবাধিকারের পরিপন্থি।

মানবাধিকার আদায়যোগ্য

মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণায় বর্ণিত অধিকারসমূহ হচ্ছে এমন যেগুলো আদায়যোগ্য। মানবাধিকার হচ্ছে এমন অধিকার যেগুলো বিমূর্ত এবং অবাস্তব কিছু নয়। মানুষের বাস্তব জীবনের সাথে এ সকল অধিকারের যোগ, মানবজীবন থেকে এসবকে বিচ্ছিন্ন করার কোন উপায় নেই। মানুষকে বেঁচে থাকলে হলে, মানুষের মতো বেঁচে থাকতে হলে এসকল অধিকার আদায় করতে হবে এবং এগুলো আদায়ের অযোগ্য বা অসম্ভব কিছু নয়।

মানবাধিকার সার্বজনীন

সকল স্থান, কাল, পাত্রভেদে যে সকল অধিকারে তারতম্য হয় না সে সকল অধিকারই মানবাধিকার। সময়ের চাকা ঘুরতে থাকবে, সভ্যতার বিকাশ হবে, চলতে থাকবে মানব জীবন, সমাজ পরিবর্তন হবে, ভৌগলিক অবস্থানগত করণে মানুষের জীবন জীবিকার পার্থক্য হবে কিন্তু পরিবর্তন হবে না মানবাধিকার। মানবাধিকার হচ্ছে এমন কতগুলো অধিকার যেগুলো সকল স্থানের, সকল সময়ের সকল মানুষের। আর সেজন্যই এ অধিকারগুলোকে বলা হয় সার্বজনীন। এ অধিকারগুলো চিরন্তন। ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, অঞ্চল ইত্যাদির নিরিখে মানবাধিকার বিভক্ত করার কোন উপায় নেই।

জাতিসংঘের ঘোষণায় বর্ণিত মৌলিক মানবাধিকারের নীতিসমূহ

১) সকল মানুষই জন্মগতভাবে স্বাধীন, সম অধিকার ও সমমর্যাদা সম্পন্ন। সকলেই বিবেক বিবেচনার অধিকারী। সুতরাং তারা পরস্পর ভ্রাতৃত্বমূলক আচরণ করবে।

২) এ ঘোষণায় উল্লিখিত সকল অধিকার ও স্বাধীনতা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী, পুরুষ, ধনী, নির্ধন, রাজনৈতিক মতাদর্শ, পদমর্যাদা নির্বিশেষে সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।

৩) পৃথিবীর সব স্বাধীন, অর্ধস্বাধীন বা অ-স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রের নাগরিকবৃন্দকে তাদের দেশের রাজনৈতিক বা আন্তর্জাতিক মর্যাদা নির্বিশেষে সমদৃষ্টিতে দেখা হবে।

Similar Posts