জোবায়দা রহমানের আবেদন গ্রহণ করে হাইকোর্ট সংবিধান লঙ্ঘন করেছে- আপিল বিভাগ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে হাইকোর্ট বিভাগ বাড়তি সুবিধা দিয়েছিল বলে রায়ে উল্লেখ করেছে আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের প্রকাশিত বিস্তারিত রায়ে বলা হয়েছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। পলাতক অবস্থায় জোবায়দা রহমানের কোয়াশিং আবেদন গ্রহণ করে হাইকোর্ট বিভাগ বাড়তি সুবিধা দিয়েছিল।
বুধবার (১জুন) আপিল বিভাগের এই রায় প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
উল্লেখ্য, গত ১৩ এপ্রিল সংক্ষিপ্ত রায়ে জোবায়দা রহমানের আপিল খারিজ করে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। এই রায়ের বিস্তারিত প্রকাশ করেছে আওয়ামী আপিল বিভাগ।
রায়ে জোবায়দা রহমানকে পলাতক উল্লেখ করে বলা হয়, পলাতক ব্যক্তি হাইকোর্ট বিভাগে কোয়াশিং আবেদন করার এখতিয়ার নেই। দুর্নীতির মামলা বাতিল চেয়ে জোবায়দা রহমানের আবেদন শুনানীর জন্য গ্রহণ করে হাইকোর্ট বিভাগ সংবিধান লঙ্ঘন করেছিল।
শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অনুগত আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, ইনায়েতুর রহিম, বোরহান উদ্দিন ও নুরুজ্জামান আপিল বিভাগে জোবায়দা রহমানের লিভ টু আপিল আবেদন শুনানী করে ১৩ এপ্রিল রায় দিয়েছিল।
উল্লেখ্য, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী একজন আওয়ামী লীগার হিসাবে পরিচিত। প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর তাঁর নিজ এলাকায় সংবর্ধনার আয়োজন করা হলে সেখানে তিনি আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আনুগত্যের কথা প্রকাশ্যেই বর্ণনা করেছিলেন।
ইনায়েতুর রহিম আওয়ামী পরিবারের সদস্য। তাঁর পিতা ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা এবং নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হওয়া সাবেক সংসদ সদস্য। তাঁর ছোট ভাই ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। বর্তমান আওয়ামী লীগের মনোনীত জাতীয় সংসদের হুইপ। ইনায়েতুর রহিম নিজে বাকশাল ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া আওয়ামী ফোরাম থেকে সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনে সেক্রেটারি পদে নির্বাচন করেছেন। শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ইনায়েতুর রহিমকে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। বোরহান উদ্দিন এবং নুরুজ্জামান হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার আগে সরাসরি আওয়ামী রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
চিহ্নিত আওয়ামী লীগাররাই এখন হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগে বসে বেগম খালেদা জিয়া এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিচারের নামে শাস্তি দিচ্ছেন।
আপিল বিভাগ তথা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতাদের দেওয়া রায়ে বলা হয়-২০০৮ সাল থেকেই পলাতক হিসেবে গণ্য হবেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমানের দুর্নীতি মামলা চলবে বলে গত ১৩ এপ্রিল রায় দেয় আপিল বিভাগ। কিন্তু সেই রায়ের কোন ব্যাখ্যা সেদিন দেননি দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করা হয়। মামলায় তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়।
এই মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ফৌজদারি আবেদন করেছিলেন ডা. জোবায়দা। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। ওই রুলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে মামলা বাতিলে জারি করা রুল খারিজ করে দেন। একইসঙ্গে জোবায়দা রহমানকে আট সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল হাইকোর্টের রায়ে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন জোবায়দা রহমান। দীর্ঘদিন পর শুনানী শেষে গত ১৩ এপ্রিল হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগ রায় দেয়। তাদের রায়ে জোবায়দা রহমানের লিভ টু আপিল খারিজ করে দেওয়া হয়। এই রায়ের বিস্তারিত বুধবার (১ জুন) প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্রঃ আমার দেশ uk