অভিকর্ষজ ত্বরণ কাকে বলে? কি কি কারণে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান পরিবর্তন হয়?

অভিকর্ষজ ত্বরণ কাকে বলে? অভিকর্ষজ ত্বরণ কি?

অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ভূ-পৃষ্ঠে মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর বেগ বৃদ্ধির হারকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে।

প্রত্যেকটি বস্তুকে পৃথিবী পৃষ্ঠের উপরের যেকোনো উচ্চতা থেকে ছেড়ে দিলে অভিকর্ষ বলের প্রভাবে তা নিচের দিকে পড়তে থাকে বা গতিশীল হয়। যতই নিচে নামে বলের প্রভাবে বস্তুর গতি তত বৃদ্ধি পেতে থাকে বা ত্বরণ হয়। নিউটনের সূত্র থেকে আমরা জানি বস্তুর উপর  বল প্রয়োগে ত্বরণ হয়। তাই অভিকর্ষ বলের প্রভাবে বস্তুর ত্বরণ হয়। অভিকর্ষ বলের প্রভাবে মুক্তভাবে ভূ-পৃষ্ঠে পড়ন্ত বস্তুর ত্বরণ বা বেগ বৃদ্ধির হারকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে।

অভিকর্ষজ ত্বরণকে g দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

অভিকর্ষজ ত্বরণের একক ও মাত্রা

অভিকর্ষজ ত্বরণ এর এককঃ ms-2

অভিকর্ষজ ত্বরণ এর মাত্রাঃ LT-2

ভূ-পৃষ্ঠে অভিকর্ষজ ত্বরণের সমীকরণ

যদি অভিকর্ষজ ত্বরণ g, মহাকর্ষ ধ্রুবক G, পৃথিবীর ভর M, পৃথিবীর ব্যাসার্ধ R হয়,

তাহলে –

ভূ-পৃষ্ঠে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান নির্ণয়

অভিকর্ষজ ত্বরণের সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে, এর ডান পাশে বস্তুর ভর (m) অনুপস্থিত। সুতরাং, অভিকর্ষজ ত্বরণ বস্তুর ভরের উপর নির্ভরশীল নয়। যেহেতু, G এবং M ধ্রুবক, তাই, g এর মান পৃথিবীর কেন্দ্র হতে বস্তুর মধ্যবর্তী দুরত্বের উপর নির্ভর করে। সুতরাং, বলা যায়, অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বস্তু নিরপেক্ষ হলেও স্থান নিরপেক্ষ নয়। ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে,

যেহেতু, পৃথিবী সম্পূর্ণ গোলাকার নয় অর্থাৎ পৃথিবীর ব্যাসার্ধ্য সব জায়গায় সমান নয় তাই ভূপৃষ্ঠে স্থানভেদে অভিকর্ষজ ত্বরণের মানের পরিবর্তন দেখা যায় এবং এটি পৃথিবীর ব্যাসার্ধ্যর বর্গের ব্যস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয়। মেরু অঞ্চলে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ সবচেয়ে কম বলে সেখানে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান সবচেয়ে বেশি (৯.৮৩২১৭ ms-2) হয়। বিষুবীয় অঞ্চলে ব্যাসার্ধ্য অপেক্ষাকৃত বেশি বলে অভিকর্ষজ তরণের মান অপেক্ষাকৃত কম (৯.৭৮০৩৯ ms-2) হয়। ক্রান্তীয় অঞ্চলে এর মান ৯.৭৮৯১৮ ms-2

অভিকর্ষজ ত্বরণের আদর্শ মান

ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বিভিন্ন বলে ৪৫ অক্ষাংশে সমুদ্র সমতলে এর মানকে আদর্শ মান ধরা হয়। এ মান হলো 9.80665 ms-2

হিসাবের সুবিধার জন্য একে 9.8 ms-2 বা 9.81 ms-2 ধরা হয়।

কি কি কারণে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান পরিবর্তন হয়?

অভিকর্ষজ ত্বরণ ‘g’ কোনো ধ্রুব সংখ্যা নয়। স্থানভেদে এর পরিবর্তন হয়। পৃথিবী যেহেতু সম্পূর্ণ গোলাকার নয়, তাই R এর মানও ধ্রুবক নয়। কিন্তু G ও M ধ্রুবক। কাজেই R এর মান পরিবর্তনের সাথে সাথে g এর মানেরও পরিবর্তন ঘটে। নিম্নোক্ত কারণে g এর মান পরিবর্তিত হতে পারে।

১) পৃথিবীর আকৃতির কারণে

২) ভূ-পৃষ্ঠ হতে উচ্চতার পরিবর্তনের কারণে

৩) পৃথিবীর অভ্যন্তরে অবস্থানের কারণে

৪) পৃথিবীর আহ্নিক গতির কারণে।