Class 8বিজ্ঞান

ব্যাপন, অভিস্রবণ ও প্রস্বেদন   

1 min read

বিজ্ঞান : অষ্টম শ্রেণি 


তৃতীয় অধ্যায়

ব্যাপন, অভিস্রবণ ও প্রস্বেদন


উদ্ভিদ মুলের সাহায্যে মাটি থেকে পানি ও পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ শোষণ করে এবং সেই পানি ও রস কাণ্ডের ভিতর দিয়ে পাতায় পৌঁছায়। আবার দেহে শোষিত পানি উদ্ভিদ বাষ্প আকারে দেহ থেকে বের করে দেয়। উদ্ভিদ যে প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন গ্যাস ত্যাগ করে, দেহে পানি ও পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ শোষণ করে ঐ রস দেহের নানা অঙ্গে পরিবহন করে ও দেহ থেকে পানি বাষ্প আকারে বের করে দেয় সেই সব প্রক্রিয়া ব্যাপন, অভিস্রবণ, শোষণ, পরিবহন ও প্রস্বেদনের মাধ্যমে ঘটে।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা –

  • ব্যাপন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে পারবো।
  • অভিস্রবণ প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে পারবো।
  • প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের পানি পরিত্যাগ ব্যাখ্যা করতে পারবো।
  • উদ্ভিদের পানি শোষণ ব্যাখ্যা করতে পারবো।

পাঠ ১ ও ২ : ব্যাপন


আমরা জানি, সব পদার্থই কতগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু দিয়ে তৈরি। এ অণুগুলো সবসময় গতিশীল বা চলমান অবস্থায় থাকে। তরল ও গ্যাসের ক্ষেত্রে অণুগুলোর চলন দ্রুত হয় এবং বেশি ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘনত্বের দিকে অণুগুলো ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে যতক্ষণ না অণুগুলোর ঘনত্ব দুই স্থানে সমান হয়। অণুগুলোর এরূপ চলন প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে।

ব্যাপনকারী পদার্থের অণু – পরমাণুগুলোর গতিশক্তির প্রভাবে এক প্রকার চাপ সৃষ্টি হয় যার প্রভাবে অধিক ঘনত্বযুক্ত স্থান থেকে কম ঘনত্বযুক্ত স্থানে অণুগুলো ছড়িয়ে পড়ে। এ প্রকার চাপকে ব্যাপন চাপ বলে।

কোনো পদার্থের অণুর ব্যাপন ততক্ষণ চলতে থাকে যতক্ষণ না উক্ত পদার্থের অণুগুলোর ঘনত্ব সর্বত্র সমান হয়। অণুগুলোর ঘনত্ব সমান হওয়া মাত্রই পদার্থের ব্যাপন বন্ধ হয়ে যায়।

ব্যাপন বলতে কি বোঝায় তা কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে সহজে বোঝা যায়। পরীক্ষালব্দ জ্ঞানের ভিত্তিতে আলোচনা করে ব্যাপন সম্বন্ধে বাস্তব জ্ঞান পাওয়া যায় নিচে ব্যাপন প্রক্রিয়ার কয়েকটি পরীক্ষা আলোচনা করা হলো –

ব্যাপনের অনেক প্রমাণ আমাদের আশে পাশেই দেখা যায়। যেমন – ঘরে সেন্ট বা আতর ছড়ালে বা ধূপ জ্বালালে সমস্ত ঘরে তার সুবাস ছড়িয়ে পড়ে। এটি ব্যাপনের কারণে ঘটে। ধূপের ধোঁয়া ও সেন্টের অণুগুলো অধিক ঘনত্ব সম্পন্ন হওয়ায় সম্পূর্ণ ঘরে কম ঘনত্ব সম্পন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। তাই সমস্ত ঘর সবাসে ভরে যায়।


সেন্টের ব্যাপন

কাজঃ পানিতে তুঁতের ব্যাপন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ

প্রয়োজনীয় উপকরণঃ তুঁতে, বিকার, পানি।

পদ্ধতিঃ কিছু পরিমাণ তুঁতে বিকারের পানিতে ফেলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর। তুঁতে পানিতে দ্রবীভূত হবে এবং পানির রং তুঁতের রং ধারণ করবে। কেন এমন হলো ব্যাখ্যা কর। পরিশেষে আমাদের চারপাশে সংঘটিত বিভিন্ন ব্যাপন ক্রিয়ার তালিকা তৈরি কর।

তুঁতের কেলাস    হালকা নীল পানি    ঘন নীলপানি

 

ব্যাপনের গুরুত্ব

জীবের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজে ব্যাপন প্রক্রিয়া ঘটে। যেমন – উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের সময় বাতাসের কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। এই অত্যাবশক কাজ ব্যাপন দ্বারা সম্ভব হয়। জীবকোষে শ্বসনের সময় গ্লুকোজ জারণের জন্য অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়। ব্যাপন ক্রিয়ার দ্বারা কোষে অক্সিজেন প্রবেশ করে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড বের হয়ে যায়। উদ্ভিদ দেহে শোষিত পানি বাষ্পাকারে প্রস্বেদনের মাধ্যমে দেহ থেকে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় বের করে দেয়। প্রাণীদের শ্বসনের সময় অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের আদান-প্রদান ও রক্ত থেকে পুষ্টি উপাদান, অক্সিজেন প্রভৃতি লসিকায় বহন ও লসিকা থেকে কোষে পরিবহন করা ব্যাপন দ্বারা সম্পন্ন হয়।

পাঠ ৩ : অভিস্রবণ


অভিস্রবণ প্রক্রিয়াটি বোঝার জন্য আমাদের যে বিষয়ের ধারণা দরকার তার মধ্যে অন্যতম হলো ভিন্ন ঘনত্ব বিশিষ্ট দুইটি দ্রবণের মধ্যে অবস্থিত পর্দার বৈশিষ্ট্য জানা। পর্দাকে সাধারণত তিনভাগে ভাগ করা যায়। যেমন : অভেদ্য, ভেদ্য পর্দা ও অর্ধভেদ্য পর্দা।

অভেদ্য পর্দাঃ যে পর্দা দিয়ে দ্রাবক ও দ্রাব উভয় প্রকার পদার্থের অণুগুলো চলাচল করতে পারে না তাকে অভেদ্য পর্দা বলে। যেমন – পলিথিন, কিউটিনযুক্ত কোষপ্রাচীর।

ভেদ্য পর্দাঃ যে পর্দা দিয়ে দ্রাবক ও দ্রাব উভয়েরই অণু সহজে চলাচল করতে পারে তাকে ভেদ্য পর্দা বলে। যেমন – কোষপ্রাচীর।

অর্ধভেদ্য পর্দাঃ যে পর্দা দিয়ে কেবল দ্রবণের অণু (উদ্ভিদের ক্ষেত্রে পানি) চলাচল করতে পারে কিন্তু দ্রাব অণু চলাচল করতে পারে না তাকে অর্ধভেদ্য পর্দা বলে। যেমন – কোষপর্দা, ডিমের খোসার ভিতরের পর্দা, মাছের পটকার পর্দা ইত্যাদি।

আমরা লক্ষ করেছি যদি একটা শুকনা কিশমিশকে পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখি তাহলে সেটি ফুলে উঠে। এটি কিশমিশ দ্বারা পানি শোষণের কারণে ঘটে এবং পানি শোষণ অভিস্রবণ দ্বারা ঘটে। অভিস্রবণও এক প্রকার ব্যাপন। অভিস্রবণ কেবলমাত্র তরলের ক্ষেত্রে ঘটে এবং একটি অর্ধভেদ্য পর্দা অভিস্রবণের সময় দুটি তরলকে পৃথক করে রাখে। কিশমিশের উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা এখানে বোঝানো হলো।


কিশিমিশের সাহায্যে অভিস্রবণ পরীক্ষা

আমরা জানি দুটি ভিন্ন ঘনত্বের দ্রবণ একত্রে মিশ্রিত হলে স্বাভাবিকভাবেই এদের মধ্যে ব্যাপন সংঘটিত হয়। লক্ষ করে দেখ কিশমিশের ভিতরের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে কিশমিশগুলো কুচকে গেছে। কিশমিশগুলো পানিতে রাখলে পানি শোষণ করে ফুলে উঠবে। কারণ কিশমিশের ভিতরে শর্করার গাঢ় দ্রবণ একটি পর্দা দ্বারা পানি থেকে পৃথক হয়ে আছে। ফলে শুধু পানির অণু কিশমিশের অভ্যন্তরে অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করেছে, কিন্তু শর্করা অণু এই রকম পর্দা ভেদ করে বাইরে আসতে পারছে না। এ ধরনের পর্দাকে অর্ধভেদ্য পর্দা বলে।

যে প্রক্রিয়ায় একই পদার্থের কম ঘনত্ব এবং বেশি ঘনত্বের দুটি দ্রবণ অর্ধভেদ্য পর্দা দ্বারা পৃথক করা হলে দ্রাবক পদার্থের অণুগুলো কম ঘনত্বের দ্রবণ থেকে অধিক ঘনত্বের দ্রবণের দিকে যায় তাকে অভিস্রবণ বা অসমোসিস বলে।


অভিস্রবণ প্রক্রিয়া

পাঠ ৪ : অভিস্রবণের গুরুত্ব


জীবকোষের কোষাবরণ বা প্লাজমা পর্দা অর্ধভেদ্য পর্দা হিসেবে কাজ করে। প্লাজমা পর্দা দিয়ে অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় মাটিস্থ পানি মূলরোমের মধ্যে প্রবেশ করে বা বাইরে আসে। কোষস্থিত পানি খনিজ লবণকে দ্রবীভূত করে কোষ রসে পরিণত হয়। সুতরাং কোষের মধ্যে বিভিন্ন জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলোকে সচল রাখার জন্য অভিস্রবণের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রক্রিয়ার দ্বারা উদ্ভিদ কোষের রসস্ফীতি ঘটে। কাণ্ড ও পাতাকে সতেজ এবং খাড়া রাখতে সাহায্য করে। ফুলের পাপড়ি বন্ধ বা খুলতে পারে। তাছাড়া প্রাণীর অন্ত্রে খাদ্য শোষিত হতে পারে।

কাজঃ অভিস্রবণের পরীক্ষা

প্রয়োজনীয় উপকরণঃ থিসল ফানেল, মাছের পটকা, বিকার, চিনির গাঢ় দ্রবণ, স্ট্যান্ড-ক্ল্যাম্প।

পদ্ধতিঃ থিসল ফানেলের চওড়া মুখটি মাছের পটকায় ঢেকে সুতা দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে এবং বিকারটিতে অর্ধেক পানি নিতে হবে। বিকারে পানি নেওয়ার পর থিসল ফানেলের নল দিয়ে চিনির গাঢ় দ্রবণ ঢালতে হবে। এবার ফানেলের চওড়া মুখটি বিকারের পানিতে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে ফানেলটিকে ক্ল্যাম্পের সাহায্যে স্ট্যান্ডের সাথে আটকে রাখতে হবে। এরপর ফানেলের নলে চিনির দ্রবণের তলটি মার্কার পেন দিয়ে চিহ্নিত করে পরীক্ষা ব্যবস্থাটিকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দিতে হবে।

পর্যবেক্ষণঃ কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে থিসল ফানেলের নলের দ্রবণের তল উপরের দিকে উঠে গেছে। আরও কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল ফানেলের নলের দ্রবণের তল আর উপরে উঠছে না।

এ পরীক্ষায় তুমি যা পর্যবেক্ষণ করলে তা থেকে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ –

১) মাছের পটকার পর্দাটি কী ধরনের পর্দা?

২) চিনির দ্রবণ কেন ফানেলের নলের উপরে উঠে আসলো?

৩) কিছুক্ষণ পর ফানেলের দ্রবণ উপরে না উঠে স্থায়ীভাবে কেন অবস্থান করল?

 

পাঠ ৫ : উদ্ভিদের পানি ও খনিজ লবণ শোষণ


উদ্ভিদের পানি শোষণ পদ্ধতিঃ মাটি থেকে পানি ও পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ উদ্ভিদ দেহের সজীব কোষে টেনে নেওয়ার পদ্ধতিকে সাধারণভাবে শোষণ বলা যেতে পারে।স্থলে বসবাসকারী উদ্ভিদগুলো মূলরোমের সাহায্যে মাটি থেকে পানি শোষণ করে। পানিতে নিমজ্জিত উদ্ভিদ সারাদেহ দিয়ে পানি শোষণ করে। স্থলজ উদ্ভিদগুলোর মূলরোম মাটির সূক্ষ্মকণার ফাঁকে লেগে থাকা কৈশিক পানি অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় নিজ দেহে টেনে নেয়।

মূলের বিভিন্ন অঞ্চল

মূলরোমের প্রাচীরটি ভেদ্য, তাই প্রথমে ইমবাইবিশন প্রক্রিয়ায় পানি শোষণ করে এবং কোষপ্রাচীরের নিচে অবস্থিত অর্ধভেদ্য প্লাজমা পর্দার সংস্পর্শে আসে। মূলরোমের কোষীয় দ্রবণের ঘনত্বের তুলনায় তার পরিবেশের দ্রবণের ঘনত্ব কম থাকায় পানি (দ্রাবক) কোষের মধ্যে অন্তঃঅভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করে। মূলের বাইরের আবরণ থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব কোষের কোষ রসের ঘনত্ব সমান নয়।

ফলে কোষান্তর অভিস্রবণের কারণে মূলের এক কোষ থেকে অন্য কোষে পানির গতি অব্যাহত থাকে এবং পরিশেষে পানি কাণ্ডের জাইলেম বাহিকার মাধ্যমে পাতায় পৌঁছায়।

ইমবাইবিশন

অধিকাংশ কলয়েডধর্মী পদার্থই পানিগ্রাহী। উদ্ভিদদেহে বিভিন্ন ধরনের কলয়েডধর্মী পদার্থ বিদ্যমান। যথা – স্টার্চ, সেলুলোজ, জিলেটিন ইত্যাদি। এসব পদার্থ তাদের কলয়েডধর্মী গুণের জন্যই পানি শোষণ করতে সক্ষম। কলয়েডধর্মী পদার্থ (উদ্ভিদের ক্ষেত্রে কোষপ্রাচীর) যে প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের তরল পদার্থ (উদ্ভিদের ক্ষেত্রে পানি) শোষণ করে তাকে ইমবাইবিশন বলে।

উদ্ভিদের খনিজ লবণ শোষণ পদ্ধতিঃ উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য কতগুলো খনিজ লবণের প্রয়োজন হয়। উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ লবণের উৎস মাটিস্থ পানি। মাটিস্থ পানিতে খনিজ লবণ দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে।

মূলের কোষে অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় পানি শোষণ

খনিজ লবণগুলো মাটিস্থ পানিতে দ্রবীভূত থাকলেও পানি শোষণের সঙ্গে উদ্ভিদের লবণ শোষণের কোনো সম্পর্ক নেই, দুটি প্রক্রিয়াই ভিন্নধর্মী। উদ্ভিদ কখনো লবণের সম্পূর্ণ অণুকে শোষণ করতে পারে না।

মূল দ্বারা পানি ও খনিজ লবণ শোষণ

লবণগুলো কেবল আয়ন হিসেবে শোষিত হয়। উদ্ভিদ মাটির রস থেকে খনিজ লবণ শোষণ দুইভাবে সম্পন্ন করে। যথা-

১. নিষ্ক্রিয় শোষণ

২. সক্রিয় শোষণ।

 

পাঠ ৬ : প্রস্বেদন


প্রস্বেদন বা বাষ্পমোচন উদ্ভিদের একটি বিশেষ শারীরবৃত্তীয় প্র্রক্রিয়া। আমরা পূর্বের পাঠে জেনেছি, উদ্ভিদের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য পানি অপরিহার্য। তাই উদ্ভিদ মূলরোমের সাহায্যে মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি শোষণ করে। শোষিত পানির কিছু অংশ উদ্ভিদ তার বিভিন্ন বিপাকীয় কাজে ব্যবহার করে এবং বাকি অংশ বাষ্পাকারে বায়ুমণ্ডলে পরিত্যাগ করে। উদ্ভিদের দেহাভ্যন্তর থেকে পাতার মাধ্যমে বাষ্পাকারে পানির এই নির্গমনের প্রক্রিয়াকে প্রস্বেদন বা বাষ্পমোচন বলে।

প্রস্বেদন প্রধানত পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে হয়। এছাড়া কাণ্ড ও পাতার কিউটিকল এবং কান্ডের ত্বকে অবস্থিত লেন্টিসেল নামক এক বিশেষ ধরনের অঙ্গের মাধ্যমেও অল্প পরিমাণ প্রস্বেদন হয়। প্রস্বেদন কোথায় সংঘটিত হচ্ছে তার ভিত্তিতে প্রস্বেদন তিন প্রকার। যথা –

১) পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন,

২) ত্বকীয় বা কিউটিকুলার প্রস্বেদন এবং

৩) লেন্টিকুলার প্রস্বেদন।


প্রস্বেদনের স্থান

সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পত্ররন্ধ্র এবং খালি চোখে কাণ্ডের লেন্টিসেল সহজে দেখা যায়।

 

পাঠ ৭ : প্রস্বেদনের গুরুত্ব


উদ্ভিদ জীবনে প্রস্বেদন একটি অনিবার্য প্র্রক্রিয়া। প্রস্বেদনের ফলে উদ্ভিদদেহ থেকে প্রচুর পানি বাষ্পাকারে বেরিয়ে যায়। এতে উদ্ভিদের মৃত্যুও হতে পারে। তাই আপাতদৃষ্টিতে উদ্ভিদের জীবনে প্রস্বেদনকে ক্ষতিকর প্রক্রিয়া বলেই মনে হয়। এজন্য প্রস্বেদনকে বলা হয় উদ্ভিদের জন্য এটি একটি ‘Necessary evil’, তবুও প্রস্বেদন উদ্ভিদ জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রস্বেদনের ফলে উদ্ভিদ তার দেহ থেকে পানিকে বের করে অতিরিক্ত পানির চাপ থেকে মুক্ত করে।

প্রস্বেদনের ফলে কোষরসের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। কোষরসের ঘনত্ব বৃদ্ধি অন্তঃঅভিস্রবণের সহায়ক হয়ে উদ্ভিদকে পানি ও খনিজ লবণ শোষণে সাহায্য করে। উদ্ভিদদেহকে ঠাণ্ডা রাখে এবং পাতায় প্রস্বেদনের ফলে জাইলেজ বাহিকায় পানির যে টান সৃষ্টি হয় তা মূলরোম কর্তৃক পানি শোষণ ও উদ্ভিদের শীর্ষে পরিবহনে সাহায্য করে।

উদ্ভিদের প্রস্বেদন প্রক্রিয়া সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসনের মতো পরিবেশ তেমন কোনো প্রভাব রাখে না। তবে পানিচক্রে বাষ্পীভবনে অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের পানি জলীয়বাষ্প হিসেবে বায়ুমন্ডলে প্রেরণ করতে স্থলজ উদ্ভিদের প্রস্বেদন প্রক্রিয়া ভূমিকা রাখে। প্রস্বেদনের ফলে প্রচুর পানি বাষ্পাকারে বায়ুমন্ডলে পৌঁছায়।

 

পাঠ ৮ ₋ ১০ : পানি ও খনিজ লবণের পরিবহন


আমরা জেনেছি যে উদ্ভিদের মূলের মূলরোমের সাহায্যে মাটি থেকে পানি ও খনিজ লবণ শোষণ করে। এই পানি ও খনিজ লবণের দ্রবণকে কাণ্ড এবং শাখা-প্রশাখার মধ্য দিয়ে পাতায় পৌঁছানো দরকার। কারণ পাতাই প্রধানত এগুলোকে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরিতে রসদ হিসেবে ব্যবহার করে।

আবার পাতায় তৈরি খাদ্য উদ্ভিদ তার দেহের বিভিন্ন অংশে যথা – কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখায় পাঠিয়ে দেয়। উদ্ভিদের মূলরোম দ্বারা শোষিত পানি ও খনিজ লবণ মূল থেকে পাতায় পৌঁছানো এবং পাতায় তৈরি খাদ্যবস্তু সারা দেহে ছড়িয়ে পড়াকে পরিবহন বলে।

শোষণের মতো পরিবহন পদ্ধতি ও উদ্ভিদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। জাইলেম ও ফ্লোয়েম নামক পরিবহন টিস্যুর মাধ্যমে উদ্ভিদে পরিবহন ঘটে। জাইলেমের মাধ্যমে মূল দ্বারা শোষিত পানি পাতায় যায় এবং ফ্লোয়েম দ্বারা পাতায় উৎপন্ন তরল খাদ্য সারা দেহে পরিবাহিত হয়। সুতরাং জাইলেম ও ফ্লোয়েম হলো উদ্ভিদের পরিবহনের পথ। উদ্ভিদের পরিবহন প্রক্রিয়াটি নিম্নলিখিতভাবে সম্পন্ন হয়।


উদ্ভিদদেহে পরিবহন (উভমুখী)

উদ্ভিদের মূলরোম দিয়ে পানি অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় এবং পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ নিষ্ক্রিয় ও সক্রিয় শোষণ পদ্ধতিতে শোষিত হয়ে জাইলেম টিস্যুতে পৌঁছায়। জাইলেমের মাধ্যমে উদ্ভিদদেহে রসের উর্ধ্বমুখী পরিবহন হয়। ফ্লোয়েমের মাধ্যমে পাতায় তৈরি খাদ্যরসের উভমুখী পরিবহন করে।

উদ্ভিদের সংবহন বা পরিবহন বলতে প্রধানত ঊর্ধ্বমুখী পরিবহন এবং নিম্নমুখী পরিবহনকে বোঝায়।

মাটি থেকে মূলরোমের দ্বারা শোষিত পানি ও খনিজ লবণের দ্রবণ (রস) যে জাইলেম বাহিকার মধ্য দিয়ে পাতায় পৌঁছায় তা একটি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করা যায়। এ জন্য প্রয়োজন পেপারোমিয়া উদ্ভিদ। এ গাছের কান্ড ও মধ্য শিরা স্বচ্ছ।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x