অর্থনীতি

স্থিতিশীল উন্নয়ন কাকে বলে? স্থিতিশীল উন্নয়নের বৈশিষ্ট্য, স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

1 min read

স্থিতিশীল উন্নয়ন কাকে বলে?

স্থিতিশীল উন্নয়ন হল পরিবেশ ও সম্পদের মধ্যে সমন্বয় সাধনকারী একটি আধুনিক ধারণা। স্থিতিশীল উন্নয়নকে অর্থনীতি, সমাজবিদ্যা, পরিবেশবিদ্যা, ভূগোল প্রভৃতি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার দৃষ্টিকোণ থেকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

স্থিতিশীল উন্নয়নের আরও কিছু সংজ্ঞাঃ 

“স্থিতিশীল উন্নয়ন বলতে সেই উন্নয়ন প্রকল্পকে বোঝায়, যার মাধ্যমে দীর্ঘকাল যাবৎ প্রাকৃতিক গুণগতমান ও কার্যকারিতা অক্ষুণ্ন রেখে সর্বাধিক অর্থনৈতিক সুবিধা আদায় করা যায়”। – আর্নেস্ট সিমোনিস ইউকো, ১৯৮৩।

“স্থিতিশীল উন্নয়ন হচ্ছে মানুষের জীবনের গুণগত মানের এবং মানুষের চাহিদার স্থায়ী সন্তুষ্টি অর্জনের ব্যবস্থা করা” – অ্যালেন, ১৯৮০।

“স্থিতিশীল উন্নয়ন হলো উন্নয়নের এমন একটি ধারা যার ভিত্তি সম্পদের সুবিবেচনা প্রসূত ব্যবস্থাপনা, যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য আসে।”

“স্থিতিশীল উন্নয়ন হল অর্থনৈতিক উন্নয়ন যা অর্থনৈতিক কার্যাবলির পরিবেশগত পরিণতির পূনর্বিবেচনা করে এবং সেই সব সম্পদের ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে যা প্রতিস্থাপনযোগ্য ও পুনর্ভব”।

“স্থিতিশীল উন্নয়ন হল প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিসীমার মধ্যে বাস্তুতন্ত্রের বহন ক্ষমতা অনুসারে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন”।

“স্থিতিশীল উন্নয়ন মানে কোনো লক্ষ্য পূরণ নয়, এটি হল দীর্ঘস্থায়ী এক প্রক্রিয়া এবং এক ধরনের মানদণ্ড, যার মাধ্যমে মানুষের আচার-ব্যবহার ও কর্মকাণ্ডের বিচার বিবেচনা করা যায়। – ডেভিড মার্নো।

“স্থিতিশীল উন্নয়ন হল সেই জাতীয় উন্নয়ন পদ্ধতি যা বৈদেশিক ঋণের বোঝা থেকে ভবিষ্যৎ নাগরিকদের মুক্ত করে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দক্ষতা ও মানবিক গুণাবলি বৃদ্ধি করে এবং পরিবেশের অবনতি ও সম্পদ হ্রাস রোধ করে” – রবার্ট রিপোটো।

 

স্থিতিশীল উন্নয়নের বৈশিষ্ট্য

  • এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি।
  • এর পথ নিয়ন্ত্রিত ও অখণ্ড। এর একটি সর্বাঙ্গীণ দৃষ্টিভঙ্গি আছে।
  • বসুন্ধরার উৎসকে ব্যবহার করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে উন্নয়ন এগিয়ে যায়।
  • স্থিতিশীল উন্নয়ন সর্বদা সম্পদের পরিকল্পনামাফিক ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করে।
  • এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদের গুণমান ও কার্যকারিতা বজায় রেখেও সর্বাধিক অর্থনৈতিক সুবিধা আদায় করা যায়।
  • সাধারণ উন্নয়ন বসুন্ধরাকে নানাভাবে ক্ষতি করে, স্থিতিশীল উন্নয়ন তা করে না। এটি মানুষের সুখ শান্তি বাজায় রাখে ও বসুন্ধরাকে সুস্থ রাখে।
  • স্থিতিশীল উন্নয়নের মাধ্যমে শুধুমাত্র বর্তমান প্রজন্মের প্রয়োজন মেটে না, সেই সাথে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর মতো সংস্থানও থেকে যায়। অর্থাৎ এটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। এর ফলাফল দীর্ঘস্থায়ী হয়, যা টিকিয়ে রাখা যায় কয়েক প্রজন্ম ধরে।
  • এর প্রধান তিনটি স্তম্ভ – পরিবেশগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক।
  • এটি সততা ও ন্যায় পরায়ণতার উপর প্রতিষ্ঠিত।
  • এটি বিশেষ করে পৃথিবীর গরিব মানুষের চাহিদা পূরণের দিকে বেশি নজর রাখে। এটি সামাজিক সাম্য, সামাজিক সুবিচার ও নিরাপত্তাবিধানের উপর জোর দেয়।
  • এটি ত্রিমাত্রিক। এর প্রধান তিনটি মাত্রা বা স্তম্ভ হল সমাজ, অর্থনীতি ও পরিবেশ। অর্থাৎ স্থিতিশীল উন্নয়নে অর্থনৈতিক ছাড়াও সকল সামাজিক ও বাস্তুতান্ত্রিক বিষয়ের উপর দৃষ্টি দেওয়া হল।
  • পরিবেশের গুণগত মানকে সুরক্ষিত রেখে মানুষের জীবনযাত্রার স্থায়ী উন্নয়ন করা এর প্রধান লক্ষ্য।

 

স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

যে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আবশ্যকীয় জিনিসপত্রের যোগান অক্ষুণ্ন রেখে বর্তমান প্রজন্মের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করা হয়, তাকেই স্থিতিশীল উন্নয়ন বলা হয়। উন্নয়ন হলো একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, স্থিতিশীল উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বর্তমানের উন্নয়ন ভবিষ্যতের উন্নয়নের বাধা না হয়ে তা ভবিষ্যতের উন্নয়ন প্র্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। স্থিতিশীল উন্নয়নের মূল লক্ষ্য হল সমস্ত মানুষের জীবনযাত্রার গুণগতমানের নিরবচ্ছিন্ন অগ্রগতি।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x