রসায়নের সাথে বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার সম্পর্ক (Relationship Between Chemistry and Other Branches of Science)

রসায়নের সাথে বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার সম্পর্ক (Relationship Between Chemistry and Other Branches of Science)

রসায়ন হলো প্রধান বিজ্ঞানগুলোর মধ্যে অন্যতম। রসায়নের সাথে বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা যেমন – গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞান ইত্যাদির বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। মোট কথা অন্যান্য বিজ্ঞানসমূহ যেমনভাবে রসায়নের উপর নির্ভরশীল, তেমনভাবে রসায়নের অনেক বিষয়ের ব্যাখ্যা প্রদান করা, অন্য বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়েই করতে হয়।

আমরা জানি, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমগ্র প্রাণীকূলের খাদ্যের যোগানদাতা উদ্ভিদ। আবার জীবের দেহ বিভিন্ন জটিল অণু যেমন – প্রোটিন চর্বি, ক্যালসিয়ামের যৌগ, DNA দ্বারা গঠিত। জীবের জন্মও বৃদ্ধি রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সাধিত হয় যা জীববিজ্ঞানের বিষয়।

আবার, বিদ্যুৎ, চুম্বক, কম্পিউটার ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স এর তত্ত্ব উৎপাদন ও ব্যবহারের আলোচনা পদার্থবিজ্ঞানে করা হয়।

লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, বিভিন্ন রাসায়নিক গুণাবলির সমন্বয়েই এসব পদার্থের সৃষ্টি হয়। আবার কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক্স এর বিভিন্ন ক্ষুদ্রাংশগুলোর প্রত্যেকটির গুণাবলি বিভিন্ন পদার্থের রাসায়নিক ধর্মের সমন্বয় ঘটিয়ে প্রস্তুত করা হয়।

বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সাথে রসায়নের শক্ত যোগসূত্র রয়েছে

বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার দিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, এদের সাথে রসায়নের শক্ত যোগসূত্র রয়েছে। যেমন- জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমগ্র প্রাণিকূলের খাদ্যের যোগানদাতা উদ্ভিদ। উদ্ভিদ ‘সালোকসংশ্লেষণ’ নামক জীব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে প্রাণীজগতের জন্য খাদ্য তৈরি করে। জীবের জন্ম ও বৃদ্ধি জীব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সাধিত হয়। যা জীববিজ্ঞানের বিষয়।

 

আধুনিককালে বিজ্ঞানের অবদান বলে খ্যাত বিদ্যুৎ, চুম্বক, কম্পিউটার ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স এর তত্ত্ব, উৎপাদন ও ব্যবহারের আলোচনা পদার্থবিজ্ঞানে করা হয়। আমরা যদি লক্ষ করি, তাহলে দেখতে পাই যে, পদার্থের বিভিন্ন রাসায়নিক গুণাবলির সমন্বয় ঘটিয়েই এসব বস্তুর সৃষ্টি।

অন্যদিকে, উদ্ভিদ ও প্রাণির মৃত্যুর পর দেহের পচন হয় এবং নানা অনুজীব প্রক্রিয়ার ফলে মাটির সাথে মিশে যায়। ভূ-গর্ভের বিশোধিত তাপ ও চাপের প্রভাবে মাটিতে মিশে যাওয়া পদার্থের আরও রাসায়নিক পরিবর্তন হয়। ফলে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ যেমন- পেট্রোলিয়াম, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদিতে পরিণত হয়। বায়ুমন্ডলীয় বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ওজোনস্তর ও ওজোনস্তর ক্ষয়কারী গ্যাসসমূহের চিহ্নিতকরণ রসায়নের বিভিন্ন পদ্ধতির সাহায্যেই করা হয়। এবার অন্যান্য বিজ্ঞানের উপর রসায়নের নির্ভরশীলতা বিবেচনা করা যেতে পারে। গণিত ব্যতীত রসায়ন বিজ্ঞানের তত্ত¡ প্রদান করা এবং তত্ত্বীয়  জ্ঞানার্জন অসম্ভব।  আবার  রসায়নের  বিভিন্ন পরীক্ষণ  যন্ত্র  নির্ভর।  এসব  যন্ত্রের মূলনীতি বা পরীক্ষণ মূলনীতি পদার্থবিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত।

তাই উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট বুঝা গেল যে, বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সাথে রসায়নের শক্ত যোগসূত্র রয়েছে।

 

প্রত্যেকের রসায়ন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অতীব জরুরি

আমাদের পরিবেশকে বসবাস উপযোগী করার জন্য রসায়নের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। নিম্নে এর কারণ আলোচনা করা হলো –

দৈনন্দিন জীবনে রসায়নের ব্যবহার ব্যাপক। আবার রসায়নের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশকে দারুণভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। যেমন – অতিরিক্ত সার, কীটনাশক, সাবান প্রভৃতি মাটিকে নদী-নালা, খাল-বিলের পানিকে দূষিত করছে। কসমেটিকস, রং ইত্যাদি রক্তের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে ক্ষতি করছে। অন্যদিকে জ্বালানি হিসেবে কাঠ কয়লা পোড়ানো হয় তা থেকে নির্গত তাপশক্তি এবং কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া আমাদের পরিবেশকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। যার ফলে পরিবেশ বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে। মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ ব্যবহারেও মানুষের মৃত্যু ঘটছে। তাই পরিবেশকে বসবাসের উপযোগী করার জন্য এবং ভালো থাকার জন্য রাসায়নিক পদার্থের পরিমিত ব্যবহার অত্যন্ত জরুরী। কেবলমাত্র রসায়ন পাঠের মাধ্যমেই রাসায়নিক পদার্থের বিভিন্ন ক্ষতিকারক দিক ও ঝুঁকি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন সম্ভব। তাই বিভিন্ন রাসায়নিক সামগ্রী ব্যবহারকারী এবং প্রস্তুতকারী রাসায়নিক পদার্থের গুণাগুণ বিবেচনাপূর্বক এদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে সমাজ ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি।

তাই পরিবেশকে বসবাসের উপযোগী করার জন্য রসায়ন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অতীব প্রয়োজন।