স্থিতিশীল উন্নয়নের গুরুত্ব
স্থিতিশীল উন্নয়নের গুরুত্ব
মানুষ একাধারে সম্পদের স্রষ্টা, সম্পদের ভোক্তা এবং সম্পদের ধ্বংসকর্তা। চাহিদা, যোগান ও ভোগের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকার দরুণ মানুষ সম্পদ সৃষ্টির নামে অধিকাংশ সম্পদ ধ্বংস করে চলেছে। কার্যত উৎপাদনের অঙ্গ হিসেবেই বিনাশের শুরু। উৎপাদন যত বৃদ্ধি পেতে থাকে ধ্বংসও অনুরূপভাবে বৃদ্ধি পায়। আসলে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ যত প্রসারিত হবে, চাহিদা যত বাড়বে, মানুষের অতৃপ্তি যত নতুন সম্পদের খোঁজে মানুষকে কর্মব্যস্ত রাখবে, মানুষের ধ্বংসকারী ভূমিকা ততই বৃদ্ধি পাবে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে স্থিতিশীল উন্নয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।
নিচে স্থিতিশীল উন্নয়নের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো –
১) স্থিতিশীল উন্নয়নের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখে আর্থ-সামাজিক উন্নতি ঘটানো সম্ভবপর হয়।
২) এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজন বা চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে, বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটানো যায়।
৩) এই পরিকল্পনার মাধ্যমে মানুষের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নতি ঘটে। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, বুভুক্ষা প্রভৃতি আর্থ-সামাজিক অভিশাপ থেকে মুক্তি করতে সহায়তা করে।
৪) এটি সামাজিক সাম্য ও সামাজিক ন্যায় রক্ষা এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা হ্রাস করে। সমাজের নানা অসাম্য দূর করে। ধনী – দরিদ্রের বৈষম্য কমিয়ে সকলের জন্য সুখী ও সমৃদ্ধশালী জীবনযাত্রা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এটি রাষ্ট্রে – রাষ্ট্রে, মানুষে – মানুষে জীবনযাত্রার মানের তারতম্য দূর করতে সাহায্য করে।
৫) এটি ভালো থাকা বা জীবনের গুণমানের (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি) বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৬) স্থিতিশীল উন্নয়ন সার্বজনীন। এটি উন্নয়নের ফল সকলের কাছে সমানভাবে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।এই উন্নয়নের সুফল দীর্ঘস্থায়ী হয় যা টিকিয়ে রাখা যায় কয়েক প্রজন্ম ধরে।
৭) রবার্ট রিপোর্টার এর মতে, স্থিতিশীল উন্নয়ন বৈদেশিক ঋণের বোঝা থেকে ভবিষ্যত নাগরিকদের মুক্ত করে, ভবিষ্যত প্রজন্মের দক্ষতা ও মানবিক গুণাবলির বৃদ্ধি করে এবং পরিবেশের অবনতি ও সম্পদ হ্রাস রোধ করে।
৮) এর মাধ্যমে একটি দেশ অল্প সময়ের মাধ্যমে প্রভূত পরিমাণ উন্নতি লাভ করে। দারিদ্র্য দূরীকরণ হলো স্থিতিশীল উন্নয়নের মূলকথা। স্থিতিশীল উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্রের হাত থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব।