ফ্রি ফায়ার গেমে আসক্ত হওয়ায় শিকলবন্দি স্কুল ছাত্র!
যশোরের ঝিকরগাছায় ফ্রি-ফায়ার গেমে আসক্ত মো. তামিম হোসেন (১৬) নামে এক কিশোরকে নিজ ঘরে তালাবদ্ধ ও শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। অমানবিক ও নিষ্ঠুর এই ঘটনাটি ঘটেছে ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি ইউনিয়নের সৈয়দপাড়া গ্রামে।
ভুক্তভোগী তামিম হোসেন ওই গ্রামের সৌদি প্রবাসী মোঃ সবুর আলীর ছেলে ও টাওরা আজিজুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির কারিগরি বিভাগের ছাত্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় তাকে ঘিরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে তামিম হোসেনকে অমানবিকভাবে আটকে রাখা হয়েছে এমন খবর পেয়ে শনিবার (১৪ মে) সকালে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাকে নিজ বসতঘরের বারান্দার গ্রিলের সাথে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এ সময় সে সাংবাদিকদের দেখে অস্বাভাবিক আচরণ ও অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকে।
ছবি তুলতে গেলে পাশে থাকা তার মা মালঞ্চী বেগম ও একমাত্র বোন লাবণী আক্তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ছবি তুলতে আপত্তি করেন।
তাকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তারা দাবি করেন, তার উপর অশুভ দৃষ্টির আছড় পড়েছে। আমরা ওর চিকিৎসা দিচ্ছি। যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ আমিনুল ইসলাম তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি নিয়মিত কুইন্স (প্রাইভেট) হাসপাতালের চেম্বারে তামিমকে দেখেছেন। ডাক্তার বলেছেন ওর ঘুমের সমস্যা আছে। ও ভালো হয়ে যাবে।
তামিমের মা ও বোন দাবি করেন, সে অত্যন্ত ভালো ছেলে। তার কোন বদঅভ্যাস ও আড্ডা নেই।
মোবাইল ফোনে ফ্রি ফায়ার খেলায় আসক্ত হয়ে এমন অবস্থা হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে তারা দাবি করেন, ‘এসবই গুজব। প্রতিবেশী আল-আমিন ফেসবুকে তামিমের ছবি ছেড়ে দিয়ে এসব মিথ্যা গুজব রটিয়েছে।’
সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে তামিমের মা মালঞ্চী বেগম বলেন, গত (৭ মে) শনিবার রাতে তামিম গভীর রাত পর্যন্ত না ঘুমিয়ে জেগে ছিলো। এরপর আমি ঘুমিয়ে পড়লে তামিম রাত ৩টার দিকে আমাকে না বলে সে নিকটবর্তী সৈয়দপাড়া জামে মসজিদে নামাজ পড়তে যায়। সেখান থেকে ফিরে এসে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। এদিন বিকাল থেকে সে কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ ও অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকায় আমার সন্দেহ হয়।
পরে তামিমের কাছে জানতে চাইলে সে আমাকে জানায়, ‘গতরাতে মসজিদে নামাজ আদায় করতে গেলে ৪ মাস আগে মৃত. হারাণ দাদাকে মসজিদের বারান্দায় শুয়ে থাকতে দেখি। দাদা আমাকে আজান দিতে বললে আমি ভয় পেয়ে বাসায় চলে আসি। এরপর সন্ধ্যার আগে থেকে তার কয়েকজন মৃত নিকটাত্মীয়ের নাম উল্লেখ করে ভুলভাল বলতে থাকে।’
টাওরা আজিজুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
তামিমের চাচাতো ভাই সাদেকুজ্জামানের ছেলে তারেকুরজ্জামান পলাশ জানান, স্কুল বন্ধ থাকায় তামিম প্রায়শই মোবাইল ফোনে ফ্রি ফায়ার গেম খেলতো। শুনেছি এই খেলায় আসক্ত হয়ে নাভারণ এলাকায় কয়েকজন ছেলের তামিমের মতো অবস্থা হয়েছে।
প্রতিবেশী ইজিবাইক চালক শুকুর আলী জানান, ছেলেটা সর্বনাশা ফ্রি ফায়ার গেমে আসক্ত ছিলো। যখনই দেখেছি তামিম মোবাইলে ফ্রি ফায়ার গেম খেলায় মত্ত।
এদিকে, মোবাইল ফোনে ফ্রি ফায়ার নামের সর্বনাশা এই খেলায় ছাত্র, যুবক, কিশোর-তরুণদের আসক্তের সংখ্যা দিন দিন উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। কোন মতে প্রতিকার করতে পারছেন না সম্ভাবনাময় এসব ছাত্র-যুবকদের পিতা- মাতা ও অভিভাবকরা। সর্বনাশা এই খেলা বন্ধে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অসহায় অভিভাবক ও সচেতন মহল।