ভাষা পরিকল্পনা কাকে বলে?
সমাজভাষাবিজ্ঞানের চতুর্থ আক্রমের আলোচ্য বিষয় ভাষা সমস্যা। একে বলা হয় ভাষা সমস্যার সমাজভাষাবিজ্ঞান। পৃথিবীর এমন কোনো সমাজ নেই যেখানে ভাষা সমস্যা নেই। আবার এমন কোনো ভাষা নেই যেখানে সমস্যা নেই।
ভাষায় সমস্যা থাকলেই সেখানে পরিবর্তনের প্রশ্ন আসে, সুচিন্তিত পরিকল্পিত সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হয়। সাংগঠনিক এবং ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানীরা ভাষার আন্তর সংগঠন তথা বিবর্তন নিয়ে ভাবিত ছিলেন, ভাষার সমস্যার কথা তাঁরা ভাবেন নি।
ভাষা সমস্যা সমাধানের সচেতন প্রয়াসকে ভাষা পরিকল্পনা বলা হয়।
ভাষা পরিকল্পনা সমাজভাষাবিজ্ঞানের একটি ফলিত তথা প্রয়োগিক বিভাগ। ভাষা পরিকল্পনা পরিভাষাটি খুবই সাম্প্রতিক। হাউগেন যে সংবাদ পরিবেশন করেছেন, তার থেকে জানা যায় যে পরিভাষাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন অকালপ্রয়াত ভাষাবিজ্ঞানী উরিয়েল ওয়াইনরাইশ ১৯৫৭ সালে কমম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সেমিনারের আলোচ্য বিষয়ের জন্য।
রুবিন এবং য়ের্নুড মনে করেন আইনার হাউগেন এই পরিভাষাটি শুধুমাত্র প্রথম ব্যবহারই করেন নি, ভাষা পরিকল্পনার ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজও করেছেন। ভাষা পরিকল্পনাটি পাঁচের দশক থেকে সমাজভাষাবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হলেও, এ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয় অনেক আগে থেকেই। মনসুর মুসা জানান যে ১৯৩১ সালে International Communication – A Symposium on Language Problem নামে একটি পুস্তিকা বেরিয়েছিল। এই সঙ্কলনের বিভিন্ন প্রবন্ধে ভাষা সমস্যা, ভাষা পরিস্থিতি, নির্মিত ভাষা এবম্বিধ নানা ধারণা প্রকাশিত হয়।
আন্তর্জাতিক যোগাযোগের সমস্যার উত্তরণের জন্য পরিকল্পিত সহযোগ ইত্যাকার বক্তব্যও প্রকাশিত হয়। নতুন ভাষা সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সহজ করার কথাও তাতে আলোচিত হয়। এসব চিন্তাভাবনা, কর্মকাণ্ডকে পাঁচের দশকে ব্যবহৃত ভাষা পরিকল্পনার ধারণার পূর্বসূত্র হিসেবে গ্রহণ করা যায় বলে তিনি মনে করেন।
যাই হোক, ভাষা পরিকল্পনা ধারণাটি বিংশ শতাব্দীর অবদান হলেও, এই ধারণা সম্পৃক্ত বিষয়কে আরো প্রাচীনকালে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষা পরিকল্পক পাক-ভারত উপমহাদেশের অধিবাসী ছিলেন – তিনি হলেন ব্যাকরণকার পাণিনি।
ভাষা পরিকল্পনার উদ্দেশ্য
ভাষা পরিকল্পনার প্রধানত দুটি উদ্দেশ্য। যথাঃ-
ক) ভাষা পরিকল্পনা ও খ) গঠনগত পরিকল্পনা। এই দুই উদ্দেশ্য ছাড়াও আরও কতগুলো সাধারণ উদ্দেশ্য রয়েছে। সেগুলি হলো –
১) ভাষা পরিকল্পনার সাহায্যে ভাষাকে সামাজিক অবস্থান থেকে উন্নততর অবস্থানে রূপান্তর করা।
২) ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য বা প্রদেশ বিভাজন ও ভাষা পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত।
৩) ভাষা পরিকল্পনার মাধ্যমে কোনো ভাষার বানান উদ্ভাবন ও অর্থগত সমস্যার সমাধান করা।
৪) ভাষা ব্যবহারের অনুপাত, অনুযায়ী প্রথম ও দ্বিতীয় ভাষা নির্ধারণ করাও এই পর্বের উল্লেখযোগ্য কাজ।
৫) ভাষা পরিকল্পনার সঙ্গে ভাষার নীতিকে যুক্ত করা হয়।
৬) ভাষা পরিকল্পনার কাজ হলো বিভিন্ন তত্ত্ব যা সূত্র প্রতিষ্ঠা করা।
৭) মৃত ভাষাকে পুনর্জীবিত করা ও ভাষা পরিকল্পনার মধ্যে পড়ে।
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “ভাষা পরিকল্পনা কাকে বলে? ভাষা পরিকল্পনার উদ্দেশ্য” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।