আগ্নেয়গিরি কাকে বলে? আগ্নেয়গিরি উৎপত্তির কারণ

আগ্নেয়গিরি কাকে বলে?

ভূ-ত্বকের শিলান্তর সর্বত্র সমান কঠিন বা গভীর নয়। তাই কোন কোন সময় ভূ-ত্বকের চাপ প্রবল হয়ে শিলা স্তরের কোন দুর্বল অংশ দিয়ে ভূগর্ভ থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত একটি বিরাট সুড়ঙ্গের সৃষ্টি হয়। সে পথ দিয়ে ভূ-গর্ভস্থ বাষ্প, গলিত ধাতব পদার্থ, উত্তপ্ত প্রস্তর খন্ড কর্দম, ধুম্র, ভস্ম ইত্যাদি প্রবলবেগে ভ‚পৃষ্ঠের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং ছিল পথ বা ফাঁটলের মুখের চারদিকে ক্রমশঃ জমাট বেঁধে উঁচু মোচাকৃতি পর্বতের সৃষ্টি করে। সাধারণত এ ধরণের মৌচাকৃতি আগ্নেয় পর্বতকে আগ্নেয়গিরি বলে।

আগ্নেয়গিরি উৎপত্তির কারণ

নিম্নলিখিত কারণে আগ্নেয়গিরির উৎপত্তি হয়।

১) ভূ-ত্বকের সর্বত্র সমান পুরত্ব নেই। পাতলা ভূ-ত্বক বা ফাঁটল থেকে ভূ-অভ্যন্তরের গলিত ম্যাগমা, ভস্ম, বাষ্প, ধাতু, ধুম্র ইত্যাদি প্রবল বেগে বের হয়ে আগ্নেয়গিরির উৎপত্তি হয়।

২) ভূ-গর্ভে ক্রমবর্ধমান সঞ্চিত বাষ্পরাশি সর্বদা বাইরে আসতে চায়। ফলে ভূত্বকের তলদেশে প্রবল উর্ধ্বচাপ পড়ে। এর দরুন উপস্থিত ভূ-ত্বক নিম্নস্থ কঠিন শিলার উপর যে চাপ দেয় তা বহুগুণে কমে যায়। এ হ্রাসমান চাপই আগ্নেয়গিরি উৎপত্তিতে সাহায্য করে।

৩) কখনও কখনও ভূ-ত্বকের ফাঁটল দিয়ে নদী, নালা খাল বিল এমনকি সমুদ্রের পানি ভূ-গর্ভে প্রবেশ করে। ভূঅভ্যন্তরস্থ প্রচন্ড উত্তাপে ঐ পানি বাষ্পিভূত হয় ও আয়তনে বৃদ্ধি পায়। ভূত্বক ফেটে যায়। ঐ তপ্ত, আঠালো শিলা প্রবল বেগে বের হয়ে অগ্নুৎপাত ঘটায়।

৪) ভূ-গর্ভস্থ পদার্থ সমূহের আয়তন ফলে ভ‚গর্ভে প্রচন্ড চাপের সৃষ্টি হয়। এর ফলে ভূত্বক ফেঁটে গিয়ে আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হয়।

৫) ভূগর্ভে নানা প্রকার রাসায়নিক ক্রিয়ার দরুন গ্যাস ও তাপের সৃষ্টি হয়। এতে ভূঅভ্যন্তরের পদার্থ সমূহ উত্তপ্ত হয়ে চাপের সৃষ্টি করে এবং আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হয়।

৬) রেডিয়াম, থোরিয়াম, ইউরিয়ান প্রভৃতি তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রচুর তাপের সৃষ্টি করে আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং অগ্নুৎপাতের সৃষ্টি হয়।

৭) ভূ-আন্দোলনের ফলে পার্শ্বচাপের ফলে ভূ-ত্বকের দূর্বল অংশ ভেদ করে উত্তপ্ত তরল লাভা উপরে উঠে আসে।

৮) ভূ-পৃষ্ঠ সর্বদা তাপ বিকিরণ করে শীতল ও সংকুচিত হয়। এতে ভাঁজের সৃষ্টি হয়, চাপ হ্রাস পায় এবং ভূ-ত্বক ফেটে অগ্নুৎপাত ঘটায়।