রসায়ন পরীক্ষাগার ব্যবহারে ও পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারে সতর্কতা গ্রহণ
রসায়ন পরীক্ষাগার ব্যবহারে ও পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারে সতর্কতা গ্রহণ
(Safety Measures in Chemsitry Laboratory and in Use of Chemicals)
সার্বজনীন নিয়ম
সার্বজনীন নিয়ম বলতে সেই নিয়মগুলোকে বুঝায় যা সারাবিশ্বে একই সাথে সমভাবে পালিত হয়।
G.H.S -এর পূর্ণরূপ
G.H.S – এর পূর্ণরূপ হলো Globally Harmonized System.
পরিবেশ ও উন্নয়ন নামক সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয়
জাতিসংঘের উদ্যোগে পরিবেশ ও উন্নয়ন নামে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল –
১. রাসায়নিক পদার্থকে ঝুঁকি ও ঝুঁকির মাত্রার ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা।
২. ঝুঁকির সতর্কতা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত তৈরি করা।
৩. ঝুঁকি ও ঝুঁকির মাত্রা বুঝবার জন্য সার্বজনীন সাংকেতিক চিহ্ন নির্ধারণ করা।
আন্তর্জাতিক সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহারের সুবিধাসমূহ
কোনো রাসায়নিক দ্রব্য সরবরাহ বা সংরক্ষণ করতে হলে তার পাত্রের গায়ে লেবেলের সাহায্যে শ্রেণিভেদ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সাংকেতিক চিহ্ন প্রদান করলে ব্যবহারকারী সহজেই কোনো রাসায়নিক দ্রব্যের পাত্রের গায়ে লেবেল দেখেই এর কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিতে পারবে এবং এর কার্যকারিতার ঝুঁকি মাথায় রেখে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করতে পারবে। যেমন- বিপজ্জনক সাংকেতিক চিহ্ন সংবলিত কোনো পাত্রের গায়ের লেবেল দেখে এটা বুঝা যাবে যে, পাত্রের রাসায়নিক দ্রব্যটি একটি মারাত্মক বিষাক্ত পদার্থ। সাথে সাথে ব্যবহারকারীর মাথায় এটাও কাজ করবে যে ব্যবহারের সময় অবশ্যই বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে এটা শরীরের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে। এছাড়াও পরীক্ষার পর পরীক্ষণ মিশ্রণ উন্মুক্ত পরিবেশে ফেলে দেওয়া যাবে কি না বা পরিশোধন করতে হবে কি না, সে সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবে। সংগৃহীত রাসায়নিক দ্রব্য কোথায়, কিভাবে সংরক্ষণ করলে রাসায়নিক দ্রব্যের মান ঠিক থাকবে ও অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
বিস্ফোরিত বোমা সাংকেতিক চিহ্ন
রাসায়নিক দ্রব্য : বিস্ফোরক দ্রব্য যেমন- জৈব পার অক্সাইড।
ঝুঁকি ও ঝুঁকির মাত্রা : নিজে নিজেই বিক্রিয়া করতে পারে।
সাবধানতা :
১. নির্জন জায়গায় সংরক্ষণ করা।
২. সাবধানে নাড়াচাড়া করা।
৩. ঘর্ষণ হতে পারে এমন জায়গায় না রাখা।
৪. অন্য পদার্থের সাথে মিশ্রণের সময় অতি ধীরে যুক্ত করা।
৫. ব্যবহারের সময় চোখে নিরাপদ চশমা পরা।
আগুনের শিখা সাংকেতিক চিহ্ন
রাসায়নিক দ্রব্য : দাহ্য পদার্থ- গ্যাস, তরল, কঠিন।
ঝুঁকি ও ঝুঁকির মাত্রা : সহজেই আগুন ধরতে পারে এবং বিপুল পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয়।
সাবধানতা : আগুন বা তাপ থেকে দূরে রাখা, ঘর্ষণ হতে পারে এমন অবস্থা এড়িয়ে রাখা।
বৃত্তের উপর আগুনের শিখা সাংকেতিক চিহ্ন
রাসায়নিক দ্রব্য : জারক গ্যাস বা তরল পদার্থ। যেমন- ক্লোরিন গ্যাস।
ঝুঁকি ও ঝুঁকির মাত্রা : নিঃশ্বাসে গেলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ত্বকে লাগলে ক্ষত হতে পারে।
সাবধানতা :
১. গ্যাস হলে নিছিদ্রভাবে রাখতে হবে।
২. জারণ ক্রিয়া করতে পারে এমন পাত্রে না রাখা।
৩. ব্যবহারের সময় হাতে দস্তানা, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে-মুখে মাস্ক ব্যবহার করা।
বৃত্তের উপর আগুনের শিখা সম্বলিত চিহ্নের অর্থ
কোনো পাত্রের গায়ে ‘বৃত্তের উপর আগুনের শিখা’ সম্বলিত চিহ্ন থেকে বোঝা যায় যে, জারক গ্যাস বা তরল পদার্থ আছে। এটি নিঃশ্বাসে গেলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, ত্বকে লাগলে ক্ষত হতে পারে। গ্যাস হলে নিচ্ছিদ্রভাবে রাখা, জারণ ক্রিয়া করতে পারে এমন পাত্রে না রাখা, ব্যবহারের সময় হাতে দস্তানা, চোখে ও নাকে-মুখে মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
বিপদজনক সাংকেতিক চিহ্ন
রাসায়নিক দ্রব্য : বিষাক্ত পদার্থ- গ্যাস, তরল বা কঠিন।
ঝুঁকি ও ঝুঁকির মাত্রা : নিঃশ্বাসে, ত্বকে লাগলে বা খেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
সাবধানতা : তালাবদ্ধ স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। ব্যবহারের সময় হাতে দস্তানা, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
স্বাস্থ্য -ঝুঁকির সংকেত চিহ্ন
ঝুঁকি ও ঝুঁকির মাত্রা: দেহের শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত তন্ত্রের জন্য সংবেদনশীল। জীবাণু সংক্রমণ ঘটাতে পারে। ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
সাবধানতা :
১. সর্বসাধারণের বাইরে নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করা।
২. ব্যবহারের সময় হাতে দস্তানা, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে-মুখে মাস্ক ব্যবহার করা।
৩. পরীক্ষণ মিশ্রণের সংগ্রহ ও যথাযথ পরিশোধন করা।
পরিবেশ সাংকেতিক চিহ্ন
ঝুঁকি ও ঝুঁকির মাত্রা : পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, বিশেষ করে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর।
সাবধানতা :
১. এ ধরনের পদার্থ নদী নালার পানিতে মিশতে দেওয়া উচিত নয়।
২. পরীক্ষণ মিশ্রণ সংগ্রহ ও পরিশোধন করা।
তেজষ্ক্রিয় রশ্মি চিহ্ন
রাসায়নিক দ্রব্য : তেজষ্ক্রিয় পদার্থ।
ঝুঁকি ও ঝুঁকির মাত্রা : অতিরিক্ত ক্ষতিকর আলোক রশ্মি নির্গমন করে যা দেহকে বিকলাঙ্গ করে দিতে পারে এবং শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
সাবধানতা :
১. রশ্মি বের হতে না পারে এ রকম বিশেষ পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।
২. কাজ করার সময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
৩. উপযুক্ত পোশাক পরিধান করতে হবে।
৪. চোখে বিশেষ ধরনের চশমা ব্যবহার করতে হবে।
তেজষ্ক্রিয় রশ্মি চিহ্নটি যা বোঝায়
তেজষ্ক্রিয় রশ্মি চিহ্নটি ১৯৪৬ সালে আমেরিকাতে প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল। চিহ্নটিকে ট্রিফয়েলও বলা হয়। এটি দ্বারা অতিরিক্ত ক্ষতিকর আলোক রশ্মিকে বুঝানো হয়। এ ধরনের রশ্মি মানবদেহকে বিকলাঙ্গ করে দিতে পারে এবং শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। এ ধরনের রশ্মি সম্বলিত কোনো জিনিস নিয়ে কাজ করার সময় নিরাপদ দূরত্ব বজায়, উপযুক্ত পোশাক পরিধান করা, চোখে বিশেষ ধরনের চশমা পরা ইত্যাদি সতর্কতা মেনে চলা উচিত।
ট্রিফয়েল
তেজষ্ক্রিয় রশ্মি চিহ্নকে ট্রিফয়েল বলা হয়। এটি দ্বারা অতিরিক্ত ক্ষতিকর আলোক রশ্মিকে বোঝানো হয়।