আইসোটোপ (Isotopes)

আইসোটোপ (Isotopes)


কোনো মৌলের দুই বা ততোধিক পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা একই কিন্তু পারমাণবিক ভর সংখ্যা ভিন্ন হলে ঐ পরমাণুগুলোকে পরস্পরের আইসোটোপ বলে। যেমন- প্রোটিয়াম(1H), ডিউটেরিয়াম(2H) ও ট্রিটিয়াম(3H) হলো হাইড্রোজেনের তিনটি আইসোটোপ।

তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ও তাদের ব্যবহার
(Radioactive Isotopes and Their Uses)


তেজস্ক্রিয় মৌল

যে সকল মৌল থেকে   রশ্মি বিকিরিত হয় তাদেরকে তেজস্ক্রিয় মৌল বলে। যেমন- ইউরেনিয়াম হলো একটি তেজস্ক্রিয় মৌল।

তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ

মৌলের যে সমস্ত আইসোটোপ বিভিন্ন ধরনের রশ্মি (α, β, γ) বিকিরণ করে অন্য মৌলের পরমাণুতে পরিণত হয় তাদেরকে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বলে। যেমন- 99Tc, 60Co ইত্যাদি।

তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার

মানব জীবনে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার ব্যাপক। চিকিৎসাক্ষেত্রে, কৃষিক্ষেত্রে, খাদ্য সংরক্ষণে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার নিম্নে দেয়া হলো –

চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহার : চিকিৎসাক্ষেত্রে তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপের দু’ধরনের ব্যবহার রয়েছে। কোনো রোগ বা রোগাক্রান্ত স্থান নির্ণয় করতে এবং রোগ নিরাময়ে। নিম্নে চিকিৎসাক্ষেত্রে তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার উল্লেখ করা হলো –

১. দেহের হাড় বেড়ে যাওয়া এবং কোথায়, কেন ব্যথা হচ্ছে তা নির্ণয়ের জন্য Tc-99m ইঞ্জেকশন দিলে বেশ কিছু সময় পরে পর্দায় দেখা যায় হাড়ের কোথায় কী ধরনের সমস্যা আছে। 99mTc থেকে গামা রশ্মি নির্গত হওয়ার পর 99Tc আইসোটোপ উৎপন্ন হয়।

২. 153Sm অথবা 89Sr ব্যবহার করে হাড়ের ব্যথার চিকিৎসা করা হয়।

৩. টিউমারের উপস্থিতি নির্ণয় ও তা নিরাময়ে তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়। নিরাময়ের জন্য 60Co থেকে নির্গত গামা রশ্মি নিক্ষেপ করে ক্যান্সার কোষকলাকে ধ্বংস করা হয়।

৪. 131I থাইরয়েড গ্রন্থির কোষ-কলা বৃদ্ধি প্রতিহত করে।

৫. রক্তের লিউকোমিয়া রোগের চিকিৎসায় 32P এর ফসফেট ব্যবহৃত হয়।

৬. 238Pu হার্টে পেইসমেকার বসাতে ব্যবহার করা হয়।

কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার : তেজস্ক্রিয় রাশ্মি ব্যবহার করে কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন উন্নত মানের বীজ উদ্ভাবন করা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে ফলনের মানের উন্নতি ও পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। তেজস্ক্রিয় 32P যুক্ত ফসফেট দ্রবণ উদ্ভিদের মূলধারায় সূচিত করা হয়। গাইগার কাউণ্টার ব্যবহার করে পুরো উদ্ভিদে এর চলাচল চিহ্নিত করে বিজ্ঞানীরা কী কৌশলে ফসফরাস ব্যবহার করে তা জানতে পারেন।

খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহার : সকল প্রকার শাক-সবজি, ফল সঠিক সংরক্ষণের অভাবে বা রান্না প্রক্রিয়া সঠিক না হলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয় যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত 60Co থেকে যে গামা রশ্মি নির্গত হয় তা এসব ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। পোলট্রি ফার্মেও এ রশ্মি ব্যবহার করা হয় যখন কোনো ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের উদ্ভব ঘটে। একটি নির্দিষ্ট মাত্রার তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রয়োগ করে খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়। অতিরিক্ত তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহার করা স¦াস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। খাদ্যদ্রব্য তেজস্ক্রিয় রশ্মি অবশ্যই পরিমিত মাত্রায় সংরক্ষিত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে। পরিমিত মাত্রায় এ তেজস্ক্রিয় রশ্মি সূর্যের আলোর ন্যায় নিরাপদ।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার : আইসোটোপসমূহ ক্ষয়ের সময় বা নিউক্লিয় বিক্রিয়ার সময় প্রচুর পরিমাণে তাপ উৎপন্ন করে। এই তাপশক্তিকে বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পারমাবিক চুল্লি থেকে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয় নিউক্লিয় বিক্রিয়ার মাধ্যমে।

তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপের ক্ষতিকর প্রভাব

তেজষ্ক্রিয় পদার্থ থেকে বিভিন্ন ধরনের রশ্মি নির্গত হয়। বিভিন্ন ধরনের রশ্মি নির্গমনের ঘটনাকে তেজষ্ক্রিয়তা বলে। আর এই তেজষ্ক্রিয়তা ক্যান্সার হওয়ার একটি বিশেষ কারণ। ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য তেজষ্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহৃত হয়। যার কারণে মাথার চুল পড়ে যায়, বমি বমি ভাব হয়। এমনকি আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়াকেও মেরে ফেলে। তেজষ্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহার করে নিউক্লিয় বিক্রিয়া সংঘটিত হয়, যা প্রচুর শক্তি উৎপাদন করে। এই শক্তিকে ব্যবহার করে এটম বোমা, পারমাণবিক বোমা ইত্যাদি তৈরি করা হচ্ছে। যা আমাদের জীবনকে বিপন্ন করতে পারে।