সনাতন উদারনীতিবাদের মূল উপাদানগুলি কী?
সনাতন উদারনীতিবাদরে মূল উপাদান হলো –
১) ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠা,
২) রাষ্ট্রের ভিত্তি জনসমষ্টি,
৩) সর্বাধিক ব্যক্তির সর্বাধিক সুখস্বাচ্ছন্দ্য,
৪) অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবাধ নীতি এবং
৫) ব্যক্তির নৈতিক উন্নতিসাধন।
উদারনীতিবাদের সংজ্ঞা দাও।
উদারনীতিবাদ হলো এমন এক ধারণা যা সরকারি কাজের নীতি ও পদ্ধতি, সমাজগঠনের নীতি এবং ব্যক্তি ও সমাজের এক জীবনাদর্শন হিসেবে স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করে।
কীভাবে এবং কখন উদারনীতিবাদের উদ্ভব ঘটে?
সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে উদারনীতিবাদ প্রথম বিকশিত হয়। সামন্ততান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসন ও বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে উদারনৈতিক মতবাদ জন্মগ্রহণ করে। ইউরোপে মধ্যযুগের নবজাগরণ আন্দোলন ও ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সাফল্যের ফলে উদারনীতিবাদ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
উদারনীতিবাদের দুটি উৎস কী কী?
উদারনীতিবাদের দুটি উৎস হলো –
১) সংস্কার আন্দোলন এবং
২) ফরাসি বিপ্লব।
সংকীর্ণ অর্থে উদারনীতিবাদ বলতে কী বোঝায়?
সংকীর্ণ অর্থে উদারনীতিবাদ বলতে এমন এক তত্ত্বকে বোঝায় যা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বাধীনতাকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
ব্যাপক অর্থে উদারনীতিবাদ কী?
ব্যাপক অর্থে উদারনীতিবাদ হলো এমন এক মানসিক ধারণা যা ব্যক্তির অধিকার, স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিত্বের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের পক্ষপাতী।
সাবেকি উদারনীতিবাদ কাকে বলে?
মধ্যযুগে সংকীর্ণ গোঁড়ামির বদলে যুক্তি, ধর্মের বদলে বিজ্ঞান, ঐতিহ্যের বদলে আধুনিকতা, কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজজীবনের পরিবর্তে নগরজীবন প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে যে দর্শন তথা তত্ত্ব দাবি জানায় তাকে সাবেকি উদারনীতিবাদ বলে।
আধুনিক উদারনীতিবাদ বলতে কী বোঝায়?
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে সমাজতন্ত্রবাদ, জনকল্যাণকর রাষ্ট্রের ধ্যানধারণা এবং সমাজকল্যাণের আদর্শে সাবেকি উদারনীতিকে নতুনভাবে সংশোধন করে ব্যক্তিস্বাধীনতার সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারণার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে যে উদারনৈতিক চিন্তাধারার জন্ম হয় তাকে আধুনিক উদারনীতিবাদ বলা হয়।
সাবেকি উদারনীতিবাদের দুটি মূলনীতি কী?
সাবেকি উদারনীতিবাদের দুটি মূলনীতি হলো –
১) আইনের অনুশাসন এবং
২) শাসিতের সম্মতি।
আধুনিক উদারনীতিবাদের দুটি মূলনীতি কী?
আধুনিক উদারনীতিবাদের দুটি মূলনীতি হলো –
১) রাজনৈতিক সাম্য এবং
২) সাংবিধানিক পদ্ধতিতে শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তন।
উদারনীতিবাদ ও আধুনিক উদারনীতিবাদের দুটি ত্রুটি উল্লেখ করো।
উদারনীতিবাদ ও আধুনিক উদারনীতিবাদের দুটি ত্রুটি হলো –
১) এই রাষ্ট্রতত্ত্বের মূলনীতিগুলি অত্যন্ত নমনীয়, অস্পষ্ট এবং পরস্পরবিরোধী ও রক্ষণশীল এবং
২) উদারনীতিবাদে স্বাধীনতার যে ধারণা দেওয়া হয়েছে তাকে নেতিবাচক বলে অনেকে মনে করেন।
উদারনীতিবাদে রাষ্ট্রকে কীভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে?
উদারনীতিবাদ রাষ্ট্রকে মধ্যযুগীয় অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিস্থিতি থেকে স্বচ্ছ চিন্তার গতিশীল সমাজে এক নতুন চেহারাায় উপস্থাপিত করতে সক্ষম হয়েছে।
নয়া-উদারনীতিবাদ কী?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে যুদ্ধোত্তর শিল্পসমাজে উদারনীতিবাদী দর্শনের সীমিত করে ন্যূনতম কর্মসূচিসম্পন্ন রাষ্ট্র বা সীমিত রাষ্ট্রের ধারণাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে নতুন ধাঁচের যে উদারনীতিবাদী তত্ত্বের অবতারণা করেন, তাকে নয়া-উদারনীতিবাদ বলা হয়। বিংশ শতাব্দীর সাতের দশকে প্রচলিত উদারনীতিবাদের মুক্তিস্বরূপ এই নয়া-উদারনীতিবাদের জন্ম হয়।
নয়া-উদারনীতিবাদের প্রধান প্রবক্তা কারা?
নয়া উদারনীতিবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন – এফ. এ. হায়েক, জন রলস, মিল্টন ফ্রিডম্যান, ইশিয়া বার্লিন, রবার্ট নজিক প্রমুখ।
প্রাকৃতিক অধিকার সম্পর্কে নয়া উদারনীতিবাদের প্রবক্তা রবার্ট নজিকের মূল বক্তব্য কী?
রবার্ট নজিক তাঁর Anarchy, State and Utopia গ্রন্থে জন লকের প্রাকৃতিক অধিকার তত্ত্বের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, নাগরিকদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্জন ও ভোগের অধিকার এবং চুক্তি স্বাধীনতা অলঙ্ঘনীয়। রাষ্ট্র কোনক্রমেই এতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
নয়া উদারনীতিবাদের দুটি মূল নীতি উল্লেখ করো।
নয়া উদারনীতিবাদের দুটি মূলনীতি হলো –
১) সীমিত কর্মসূচি সম্পন্ন রাষ্ট্রের ধারণার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং
২) অবাধ বাণিজ্য নীতির পুনরুজ্জীবন।
বাজার অর্থনীতি সম্পর্কে উদারনীতিবাদ এর বক্তব্য কী?
নয়া উদারনীতিবাদ এর বক্তব্য অনুসারে, ব্যক্তিকে প্রকৃত উন্নতি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে তার অর্থনৈতিক জীবনকে সর্বপ্রকার নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হতে হবে। নয়া উদারনীতিবাদে মুক্ত বাজার অর্থনীতিকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। নয়া উদারনীতিবাদ মনে করে যে, একমাত্র অনিয়ন্ত্রিত বাজার অর্থনীতি প্রাচুর্য, দক্ষতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম।
নয়া উদারনীতিবাদের দুটি ত্রুটি উল্লেখ করো।
নয়া উদারনীতিবাদ এর দুটি ত্রুটি হল –
১) সমালোচকরা নয়া উদারনীতিবাদকে চরম ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী এক ভোগবাদী বাজার ও মৌলবাদের দর্শন রূপে আখ্যা দিয়েছেন এবং
২) অনেকে একে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল সমাজের পক্ষে অনুপযুক্ত বলে রায় দিয়েছেন।
সনাতন উদারনীতিবাদের প্রচারক কারা?
সনাতন উদারনীতিবাদ এর প্রচারক হলেন –
অ্যাডাম স্মিথ, জন স্টুয়ার্ট মিল, বেন্থাম প্রমুখ।
নয়া উদারনীতিবাদের মুখ্য প্রণেতা কারা?
নয়া উদারনীতিবাদ এর মুখ্য প্রণেতা হলেন – জন রলস, রবার্ট নজিক, ফ্রেডরিক হায়েক, ইশিয়া বার্লিন প্রমুখ।
আধুনিক উদারনীতিবাদের মুখ্য প্রবক্তা কারা?
আধুনিক উদারনীতিবাদের মুখ্য প্রবক্তা হলেন – গ্রিন, ম্যাকাইভার, ল্যাস্কি প্রমুখ।
আধুনিক উদারনীতিবাদের দুজন পথিকৃতের নাম লেখ।
আধুনিক উদারনীতিবাদের দুজন পথিকৃতের নাম হল গ্রিন ও ম্যাকাইভার।
নয়া উদারনীতিবাদের দুটি মূল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
নয়া উদারনীতি বাদের দুটি মূল বৈশিষ্ট্য হলো –
১) বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপস্থিতি এবং
২) গণমাধ্যমগুলো স্বাধীনতার স্বীকৃতি।
উদারনীতিবাদের বিকাশে কোন তিনটি ঐতিহাসিক ঘটনা বিশেষ উল্লেখযোগ্য?
ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব, ফরাসি বিপ্লব এবং আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম এই তিনটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা উদারনীতিবাদের বিকাশে সাহায্য করেছে।
গ্রীকদের দার্শনিকদের কোন দুটি প্রধান নীতির মধ্যে উদারনীতিবাদের সর্বপ্রথম প্রকাশ ঘটে?
গ্রীক দার্শনিকদের দুটি প্রধান নীতি –
চিন্তার স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার মধ্যে উদারনীতিবাদের সর্বপ্রথম প্রকাশ ঘটে।
উদারনীতিবাদের আদর্শ কোন ঘোষণায় বাস্তব রূপ লাভ করে?
1776 সালে আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণা এবং 1789 সালে ফরাসি মানবাধিকার সংক্রান্ত ঘোষণায় উদারনীতিবাদের আদর্শ বাস্তব রূপ লাভ করে।
হিতবাদী দর্শনের প্রবক্তা কে?
উনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জেরেমি বেন্থাম হিতবাদী দর্শনের মুখ্য প্রবক্তা।