হিসাব বিজ্ঞান কাকে বলে?

যে পদ্ধতি বা কৌশল ব্যবহার করে কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ফলাফল ( profit/ loss ) এবং আর্থিক অবস্থা (asset/ liability) সম্পর্কে অবগত হওয়া সম্ভব হয়, তাকে হিসাববিজ্ঞান বলা হয়।

একটি নির্দিষ্ট সময়ে, কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, আয়, ব্যয়, দায়, সম্পত্তি সংক্রান্ত একই ধরনের লেনদেনগুলোকে হিসাব বিজ্ঞানের নিয়ম অনুসরণ করে উপযুক্ত শিরোনামের অধীনে সংক্ষিপ্ত এবং শ্রেণিবদ্ধ বিবরণী আকারে লিপিবদ্ধ করাকে বলা হয় হিসাব।

হিসাববিজ্ঞান হল এমন এক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির যাবতীয় আর্থিক কার্যক্রমকে ( আয়, ব্যয়, ক্রয়, বিক্রয়, পরিশোধ, পাওনা ইত্যাদি) হিসাবের বইতে সুষ্ঠুভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং নির্দিষ্ট সময় শেষে আর্থিক কার্যাবলির ফলাফল জানা যায়।

হিসাব বিজ্ঞানের সংজ্ঞা:

হিসাবশাস্ত্রবিদ ‘ডব্লিউ জনসন’ হিসাব বিজ্ঞানের সংজ্ঞানুসারে,

“the collection, compilation and systematic recording of business transactions in terms of money, the preparation of financial reports, the analysis and interpretation of these reports for the information and guidance of management.”

অর্থাৎ, অর্থের অংকে ব্যবসায়ের বিভিন্ন লেনদেনসমূহ সংগ্রহকরণ, সংবদ্ধকরণ, লিপিবদ্ধকরণ, আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিকরণ এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে এই সব ধরনের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ ও বিশদ ব্যাখ্যা করে যথাযথ তথ্য যোগানকে বলা হয় হিসাব বিজ্ঞান।

সুতরাং, যে শাস্ত্র পাঠ করে কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আর্থিক কার্যাবলিকে হিসাবের বইয়ে সুষ্ঠুভাবে লিপিবদ্ধ করা যায় এবং নির্দিষ্ট সময় শেষে এর সঠিক ফলাফল নিরূপণ করা যায় তাকে হিসাববিজ্ঞান বলে।

হিসাব বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য:

হিসাব বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য নিচে দেওয়া হল –

১. লেনদেন সমূহকে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুযায়ী সঠিকভাবে হিসাবের বইয়ে লিপিবদ্ধ করা।

২. প্রতিষ্ঠানের আয়, ব্যয়, দায়, সম্পদ ও মালিকানা স্বত্বের পরিমাণ নির্ণয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারনা দেয়া।

এছাড়াও হিসাব বিজ্ঞানের আরো কিছু উল্লেখযোগ্য উদ্দেশ্য রয়েছে।

যেমন:

  • প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনগুলোকে লিপিবধকরার মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা।
  • একটি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহকে প্রয়োজন মাফিক তথ্য সরবরাহ করা।
  • কোন প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট সময়ের আর্থিক কার্যাবলির ফলাফল নির্ণয় করা।
  • আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করা।
  • আয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা।
  • আয়- ব্যয়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা।
  • প্রতিষ্ঠানের তহবিল চুরি ও জালিয়াতির রোধ করা।
  • যথাযথ আইন পালনের জন্য হিসাব রাখা।
  • সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির ভ্যাট ও কর নির্ণয় করা।


আধুনিক হিসাববিজ্ঞানের জনক হলেন লুকা প্যাসিওলি (১৪৪৫-১৫১৭)। তিনি জন্ম ইতালির সানসিপলক্রোতে ১৮৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন।  ১৪৯৪ সালে তিনি ‘সুম্মা এরিথমেটিকা জিওমেট্রিকা প্রপোরশনিয়েট প্রপোরশনালিটা’ বইটি প্রকাশ করেন। এই বইটিতে হিসাব বিজ্ঞান সম্পর্কে তিনিই সর্বপ্রথম আলোচনা করেন। এই বইতে তিনি হিসাববিজ্ঞানের মূল ভিত্তি হিসেবে  “দুই তরফা দাখিলা পদ্ধতি” র উল্লেখ করেন যা হিসাব বিজ্ঞানের স্বর্ণসূত্র নামে পরিচিত।

Similar Posts